রিজার্ভ নিয়ে চিন্তা নেই— জানালেন অর্থমন্ত্রী
২৭ জুন ২০২৪ ২০:১৫
ঢাকা: অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, রিজার্ভ নিয়ে চিন্তা নেই। আপনারা (সাংবাদিকেরা) ঘুরে ফিরে একই প্রশ্ন করেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের শিক্ষা, বিনিয়োগ, যোগাযোগ, পানি, স্যানিটেশন, ট্যুরিজম, লজিস্টিক এবং দক্ষতা বৃদ্ধিসংক্রান্ত খাতে কোরিয়ার সহায়তা চেয়েছি। কোরিয়া আমাদের দীর্ঘদিনের বন্ধু।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে কোরিয়ার সঙ্গে ঋণচুক্তি সই অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। ঋণচুক্তিতে সই করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী এবং কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান উন হু সুং।
চুক্তিসই অনুষ্ঠানে জানানো হয়, চট্টগ্রামের কালুর ঘাট রেল ও রোড সেতু নির্মাণে ৮১ কোটি ৪৮ লাখ ডলার ঋণ দিচ্ছে কোরিয়া। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৯ হাজার ৫৩৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে কোরিয়ান সহযোগিতা সংস্থা ইডিসিএফ ফান্ড থেকে ৭২ কোটি ৪৭ লাখ ডলার এবং ইডিপিএফ ফান্ড থেকে দেবে ৯ কোটি ১ লাখ ডলার। চুক্তির আওতায় পাওয়া অর্থ চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর কালুলঘাট পয়েন্টে একটি রেল কাম রোড সেতু তৈরি করা হবে।
সেতুটি নির্মাণ হলে নিরবচ্ছিন্ন রেল ও সড়ক যোগাযোগ নিশ্চিত সম্ভব হবে। এ ছাড়া চট্টগ্রাম-কক্সবাজার করিডোরের অপারেশনাল সীমাবন্ধতাও দূর হবে। পাশাপাশি আন্তঃআঞ্চলিক বাণিজ্য সুবধা বৃদ্ধির মাধ্যমে ভারসাম্যপূর্ণ অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধন ও ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কেও অংশ বিশেষ তৈরি করা যাবে।
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ‘কোরিয়ার সহায়তা সেই পথকে সহজ করবে। কোরিয়া এখন পর্যন্ত ছয় বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে এদেশে। তারা বাণিজ্য উন্নয়নেও কাজ করছে।’ তিনি বলেন, ‘কালুরঘাট সেতুর কাজ শেষ হলে চট্টগ্রাম শহরের যানজট কমবে। এটি প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি ছিল। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়নের পথে হাঁটছে।’
সাংবাবদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এদেশ থেকে বেশি বেশি জনশক্তি নিতে কোরিয়াকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। কোরিয়ান ভাষা শিখে যেকোনো নাগরিক সেখানে গেলে অনেক ভালো আয় করতে পারবে।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রিজার্ভ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। আপনারা ঘুরে-ফিরে একই প্রশ্ন করেন।’
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি রেলপথমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম বলেন, ‘আগামী জুলাইয়ে কালুঘাট সেতুটি প্রকল্পটি একনেকে উপস্থাপন করা সম্ভব হবে। এরপর যত দ্রুত সম্ভব বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হবে। এই সেতুর উপর দিয়ে ডাবল ট্র্যাক রেল এবং দুই লেনের সড়ক তৈরি করা হবে। কোরিয়া আমাদের রেল খাত উন্নয়নে আরও এগিয়ে আসবে বলে আশা করছি।’
অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান বলেন, ‘এই সেতু একটি আবেগের জায়গা। এটি করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এখন অর্থায়ন নিশ্চিত হলো। জীবনমান বদলে দেবে এই সেতু। সেইসঙ্গে মাতাবাড়ী গভীর সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে একটি করিডোর স্থাপন হবে।’
কোরিয়ান রাষ্ট্রদূত পার্ক ইয়ং সাইক বলেন, ‘বাংলাদেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে কোরিয়া। এই সেতু হলে চট্টগ্রাম বন্দর ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে সংযোগ স্থাপন হবে। কোরিয়া বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। এক্ষেত্রে রফতানি বহুমুখীকরণ এবং পোশাক খাতের মধ্যেও বেশি দামের পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে সহায়তা দিচ্ছে।’
কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যা নউন হু সুং বলেন, ‘কোরিয়া বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সহায়তা দিচ্ছে। রাজধানীর মেট্রোরেল-৪ তৈরিতেও অর্থায়ন করবে কোরিয়া। কালুরঘাট পয়েন্টে সেতুটি হলে এশিয়ান রেলওয়ে কোরিডোর স্থাপনে সহায়ক হবে। সেইসঙ্গে প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে সংযোগ আরও বাড়বে।’
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের মাধ্যমে কোরিয়া সরকার ১৯৯৩ সাল থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণ দিয়ে আসছে। বর্তমান যে ঋণ চুক্তিটি হলো, এর আওতায় ইডিসিএফ ফান্ডের ঋণের সুদের হার শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ এবং সাড়ে ১৫ বছরের রেয়াতকালসহ সাড়ে ৪০ বছরে ঋণটি পরিশোধ করতে হবে। ইডিপিএফ ফান্ডের আওতায় প্রাপ্ত ঋণের সুদ এক শতাংশ। ৭ বছরের রেয়াতকালসহ ৩০ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- রেলপথ সচিব ড. মো. হুসমায়ুন কবীর, সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী প্রমুখ।
সারাবাংলা/জেজে/পিটিএম