কোটাবিরোধী আন্দোলন: চতুর্থ দিনে ৪ ঘণ্টা পেরিয়েও অবরুদ্ধ শাহবাগ
৪ জুলাই ২০২৪ ১৬:৩২
রাজধানীর শাহবাগ চত্বরে সরকারি চাকরিতে কোটাবিরোধী আন্দোলনের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। চলতি মাসের প্রথম দিন থেকেই কোটা সংস্কারের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ করে আসছিলেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। প্রথম তিন দিন দেড় ঘণ্টা করে অবরোধ কর্মসূচি পালন করলেও চতুর্থ দিনে এসে চার ঘণ্টাতেও অবরোধ ছাড়েননি তারা।
প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে সরকারি পরিপত্রের একাংশ স্থগিত করে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। সেই রায় বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহালের দাবিতে ১ জুলাই থেকে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে আন্দোলন করে আসছেন। লাগাতার কর্মসূচির অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন।
এর আগে ১ জুলাই থেকে দুপুর আড়াইটার দিকে আন্দোলন শুরু করতে দেখা যায় শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট ও আশপাশের এলাকা প্রদক্ষিণ শেষে সাড়ে ৩টার দিকে শাহবাগ অবরোধ করতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।
আরও পড়ুন-
- শাহবাগ ছাড়ল শিক্ষার্থীরা, বুধবার ফের অবরোধ
- চতুর্থ দিনের মতো শাহবাগ অবরোধ করেছে শিক্ষার্থীরা
- কোটা বাতিলের দাবিতে আজও শাহবাগে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
- শাহবাগ ছেড়েছে আন্দোলনকারীরা, বৃহস্পতিবার ফের অবরোধ
- শুনানি নেননি আপিল বিভাগ, কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল
- অবরুদ্ধ শাহবাগ— হাইকোর্টের কোটা পুনর্বহালে আদেশ বাতিলের দাবি
আগের তিন দিনই একই চিত্র থাকলেও বৃহস্পতিবার ছিল ভিন্ন চিত্র। এ দিন হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি হওয়ার কথা ছিল আপিল বিভাগে। এই শুনানি সামনে রেখে সকাল ১১টা থেকেই শাহবাগ মোড়ে জড়ো হতে থাকেন আন্দোলনকারীরা। দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন।
তবে আপিল বিভাগ আজ রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নেননি। এতে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকার খবরে আন্দোলনকারীরা স্লোগানে স্লোগানে শাহবাগ চত্বর প্রকম্পিত করে তোলেন। বিকেল ৪টার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অবরোধ চলছিল। অবরোধ কতক্ষণ চলবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো তথ্যও দিতে পারেননি আন্দোলনসংশ্লিষ্টরা।
বিকেল ৩টার দিকে আন্দোলনের সমন্বয়কদের একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘সারা দেশের ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী ভাই-বোনদের বলতে চাই, আপনারা কেউ পিছু হটবেন না। আমরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাব।’
একপর্যায়ে আন্দোলনের অন্য এক সমন্বয়ক ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শাহবাগ ছাড়ব না’ বলে সমর্থন আশা করে শিক্ষার্থীদের হাত তুলতে বলেন। এ সময় শিক্ষার্থীরা হাত তুলে তাকে সমর্থন জানান।
অবরোধ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীদের বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্যারোডি ও বিদ্রোহাত্মক গান গাইতে দেখা যায়। পাশাপাশি অন্যদিনের মতো আজও ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’; ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’; ‘আঠারোর পরিপত্র পুনর্বহাল করতে হবে’; ‘কোটাপ্রথা নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’; ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটাপ্রথার কবর দে’; ‘আমার সোনার বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’; ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’ প্রভৃতি স্লোগান দেন তারা।
শাহবাগ অবরুদ্ধ থাকায় আশপাশের সড়কগুলোতে যানচলাচল স্থবির হয়ে আছে। সায়েন্স ল্যাব, প্রেসক্লাব, বাংলামোটর ও টিএসসিগামী সড়কগুলোতে যানজট দেখা গেছে। তবে কিছুক্ষণ পরপর পাশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (পিজি হাসপাতাল) ও বারডেম হাসপাতালে প্রবেশ-প্রস্থান করা অ্যাম্বুলেন্সগুলোকে নিরাপদে পারাপার করে দিতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।
এদিকে কোটাবিরোধী আন্দোলন ঘিরে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে শাহবাগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা গেছে। শাহবাগ মেট্রো স্টেশনের নিচেও ছিল পুলিশের সতর্ক অবস্থান।
সারাবাংলা/আরআইআর/এনইউ