Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে বহু ত্রুটি: সংসদীয় উপকমিটি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৪ জুলাই ২০২৪ ১৭:৪৭

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে ‘বহু ত্রুটি’ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির গঠিত উপকমিটি। এক্সপ্রেসওয়ে চালুর আগেই এসব ত্রুটি নিরসনের নির্দেশনা দিয়েছেন উপকমিটির সদস্যরা।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) দুপুরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে পরিদর্শন শেষে সংক্ষিপ্ত ব্রিফিংয়ে উপকমিটি প্রধান সংসদ সদস্য এম এ লতিফ এসব কথা জানান।

বিজ্ঞাপন

চার হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীর পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৫৪ ফুট প্রশস্ত চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। গত বছরের ১৪ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর ‍উদ্বোধন করেন, তবে যান চলাচলের জন্য সেটি খুলে দেওয়া হয়নি। ২৪টি লুপ ও ১৪টি র‌্যাম্প নির্মাণের জন্য প্রকল্পের মেয়াদ চলতি বছরের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। বর্ধিত সময়েও কাজ শেষ করতে না পারায় এক্সপ্রেসওয়ে এখনও চালু হয়নি।

এর মধ্যে সম্প্রতি সংসদীয় কমিটির বৈঠকে নবনির্মিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজের ‍গুণগত মান নিয়ে তথ্য অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কমিটি গত ১০ জুন অনুষ্ঠিত সভা থেকে তিন সদস্যের একটি উপকমিটি করে দেয়, যার সভাপতি করা হয়েছে চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনের সংসদ সদস্য এম এ লতিফকে। বাকি দুই সদস্য হলেন, সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান মনজু ও পারভিন জামান।

পরিদর্শনে এসে কমিটির সদস্যরা বেলা ১২টার দিকে প্রথমে এক্সপ্রেসওয়ের পতেঙ্গা প্রান্তে যান। দেড়ঘণ্টা পর লালখান বাজার মোড়ে এসে পরিদর্শন কার্যক্রম শেষ করেন। এসময় সিডিএ’র প্রধান প্রকৌশলীসহ কয়েকজন কর্মকর্তা উপকমিটির সদস্যদের সঙ্গে থাকলেও যাননি সংস্থাটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইউনুছ।

বিজ্ঞাপন

পরিদর্শনের সময় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বিভিন্নস্থানে বেশকিছু অসঙ্গতি উপকমিটির সদস্যদের কাছে দৃশ্যমান হয়। এক্সপ্রেসওয়ের সীমানাপ্রাচীরের সংযুক্ত অংশ কোনোভাবে জোড়াতালি দিয়ে লাগানো, মরিচা পড়া নাট-বল্টু, দেয়ালে ফাটলের চিহ্ন এবং বেশ কিছু জায়গায় রড বেরিয়ে থাকতে দেখেন তারা।

সঙ্গে থাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক সিডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী এবং পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের ত্রুটিগুলো দেখিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সংসদ সদস্য এম এ লতিফ। তিনি বলেন, ‘এ কাজে অনেক কিছু বাতিল করতে হবে। এত বড় প্রজেক্ট, মানুষ যাতে আঙ্গুল তুলতে না পারে, তাদের চোখে যেন কোনো অসঙ্গতি যাতে চোখে না পড়ে। আর আপনারা পেছনে থাকেন কেন? খুঁজে পাই না। আমার গাড়ির পেছনে থাকেন।’

উপকমিটির আরেক সদস্য বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান মনজুকে এ সময় আফসোস করে ‘ছি ছি’ বলতে শোনা যায়।

পরিদর্শন শেষে উপকমিটি প্রধান এম এ লতিফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘কিছু গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছিল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের দুটি পিলারে ফাটল দেখা দিয়েছে। সে পরিপ্রেক্ষিতে এ কনস্ট্রাকশনের ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি ও অনিয়ম হয়েছে কি না সেটা দেখার জন্য গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি একটি উপকমিটি করে দেয়। সে উপকমিটিতে আমাকে প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’

‘আমরা সে ত্রুটিগুলো পর্যবেক্ষণ করেছি। এ প্রকল্পে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার কোটি টাকার মতো ব্যয় করেছে সরকার। কিন্তু বিপুল টাকা ব্যয়ের পরও শহরের মানুষ এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহার করতে পারছে না। তাহলে ঋণের এত টাকা-সুদ কারা দেবে। যাদের ভুলত্রুটি হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমাদের রিপোর্টে আমরা উল্লেখ করব।’

পরিদর্শনে কী কী ত্রুটি দেখেছেন সাংবাদিকের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমরা পতেঙ্গা অংশ থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে দেখেছি। এক্সপ্রেসওয়ের ওপরে দুপাশের সীমানা দেয়ালে যে ক্লাম লাগানো হয়েছে সেগুলো মানসম্মত নয়। ফিনিশিংয়ে কিছু সমস্যা আছে। দু-এক জায়গায় রডও বেরিয়ে আছে। এসব অসঙ্গতি প্রকল্প পরিচালক ও কনসালটেন্টকে দেখিয়েছি। বুয়েট, চুয়েটের প্রকৌশলী এবং বিশেষজ্ঞদের এনে আমরা ত্রুটিগুলো দেখাব। তারপর একটি পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট আমরা আপনাদের দেব। গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় কোনো ত্রুটি আছে কিনা সেটা তারা দেখবে। গাফিলতি আছে কিনা খুঁজে বের করবে। প্রত্যেকটি বিষয়ে আমরা দেখব।’

তিনি আরও বলেন, ‘অনিয়ম হলে এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমাদের হাতে তিন মাস সময় আছে। এত বড় একটি কাঠামোর গাফিলতিতে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’

সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান মনজু বলেন, ‘প্রকল্পে ত্রুটি আছে। অনেক জায়গায় সীমানা প্রাচীর ঠিকভাবে হয়নি। বেশ কিছু জায়গায় জয়েন্টেও ত্রুটি দেখেছি। এগুলো আমরা রিপোর্টে বলব।’

সংসদ সদস্য পারভিন জামান বলেন , ‘আমি খুব দুঃখের সঙ্গে জানাতে চাই, আমাদের পরিদর্শনে আমরা অসম্পূর্ণতা খুঁজে পেয়েছি। এত বড় প্রজেক্ট বহু ত্রুটি আমাদের চোখে পড়েছে। এটা কেউ খুটিয়ে খুটিয়ে না দেখলেও এসব অসঙ্গতি যে কারও চোখে পড়বে। এক মাসের মধ্যে এসব ত্রুটি ঠিক হয়ে যাবে বলে আশা করছি।’

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ কাজের প্রকল্প পরিচালক ও সিডিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘এগুলোর এখনও কোয়ালিটি চেক হচ্ছে। ঠিকাদারদের কাছ থেকে আমরা এখনও বুঝে নিইনি। এখানে কিছু প্লাস্টারের দাগ আছে, নাট বল্টুতে জং ধরেছে। এসব আমরা এক মাসের মধ্যে ঠিক করে দেব। এক্সপ্রেসওয়ে গাড়ি চলাচলের জন্য উপযুক্ত বলে আমাদের বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছে। আমরা ১২ টন ওজনের গাড়ি চালিয়ে ওখানে পরীক্ষা করেছি। কোনো সমস্যা হয়নি।’

ছবি: শ্যামল নন্দী, স্টাফ ফটো করেসপন্ডেন্ট

সারাবাংলা/আইসি/একে

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে চট্টগ্রাম সংসদীয় উপকমিটি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর