Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বুটিক থেকে ‘কোটি টাকা আয়’, অথচ ব্যবসা নেই এএসপিপত্মীর

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৪ জুলাই ২০২৪ ১৮:১৬

চট্টগ্রাম ব্যুরো: অবসরে যাওয়া এক সহকারী পুলিশ সুপারের পত্নী। মাত্র তিন বছর চট্টগ্রামের একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি সোয়া কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মালিক। ‘কীভাবে এত সম্পদ গড়লেন?’- দুর্নীতি দমন কমিশন জানতে চাইলে বুটিক ব্যবসা থেকে আয়ের কথা বলেন। যদিও বাস্তবে এমন কোনো ব্যবসার নথিপত্র দেখাতে পারেননি তিনি।

দুদক বলছে, পুলিশ কর্মকর্তা স্বামীর অবৈধ আয়ের টাকায় এত সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। ওই পুলিশ কর্মকর্তারও প্রায় সোয়া কোটি টাকার সম্পদের তথ্য পেয়েছে সংস্থাটি।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) এ দম্পতির বিরুদ্ধে আলাদাভাবে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে দুদক চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১ এ। দুদক চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-২ এর সহকারী পরিচালক মুসাব্বির আহমেদ মামলা দুটি দায়ের করেন।

দুদক চট্টগ্রাম জেলা সমন্বিত কার্যালয়-১ এর উপপরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার কার্যালয়ে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা দায়ের হয়েছে। আমরা শুধু মামলা রেকর্ড করেছি। সমন্বিত কার্যালয় থেকে মামলা তদন্ত হবে।’

দু’টি মামলার মধ্যে একটিতে অবসরে যাওয়া সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মো. আবুল হাশেমকে (৬১) আসামি করা হয়েছে। ১৯৮৮ সালে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) পদে যোগ দেওয়া এ কর্মকর্তা ২০২২ সালে চট্টগ্রামে শিল্প পুলিশের সিনিয়র এএসপি পদ থেকে অবসরে যান। তার বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায়।

আরেক মামলায় তার স্ত্রী তাহেরিনা বেগমকে (৫১) আসামি করা হয়েছে। তিনি ২০০২ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত মেরনসান কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা করেন।

বিজ্ঞাপন

মামলার এজাহারের তথ্যানুযায়ী, দুদকের হটলাইনে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর আবুল হাশেম ও তার স্ত্রীকে সম্পদ বিবরণী দাখিলের জন্য নোটিশ দেয় দুদক। ওই বছরের ২৭ নভেম্বর তারা পৃথকভাবে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন।

সম্পদ বিবরণীতে আবুল হাশেম মোট ১ কোটি ১৫ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৮ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের ঘোষণা দেন। কিন্তু দুদক অনুসন্ধান করে তার নামে ১ কোটি ২০ লাখ ২৬ হাজার ৮৩০ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পায়। অর্থাৎ তিনি মোট ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬২ টাকা সম্পদ অর্জনের তথ্য গোপন করেছেন। দুদক তার গ্রহণযোগ্য আয় পেয়েছে ৮৭ লাখ ৭৭ হাজার ৩৫৬ টাকা। এ হিসেবে তার দেওয়া সম্পদের বিবরণ অনুযায়ী তিনি ১৮ লাখ ৬০ হাজার ২৯৪ টাকার জ্ঞাত আয়বর্হিভূত সম্পদ অর্জন করেন।

দুদক আবুল হাশেমের বিরুদ্ধে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬২ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং জ্ঞাত আয়বর্হিভূত ১৮ লাখ ৬০ হাজার ২৯৪ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় মামলা দায়ের করেছে।

অন্যদিকে, স্ত্রী তাহেরিনা বেগম স্থাবর-অস্থাবরসহ মোট ১ কোটি ১৯ লাখ ৮৮ হাজার ৮৪৬ টাকা সম্পদ অর্জনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। দুদক অনুসন্ধান করে তার মোট ১ কোটি ২৬ লাখ ৭৩ হাজার ২১২ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য পায়। এর মাধ্যমে তাহেরিনা বেগম তার সম্পদ বিবরণীতে স্থাবর-অস্থাবর মোট ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৩৬৬ টাকা গোপন করেন। এ ছাড়া, দুদকের অনুসন্ধানে তার গ্রহণযোগ্য আয় মিলেছে ৬০ লাখ ৫৮ হাজার ৬৮৮ টাকা। তাহলে তিনি ৪৩ লাখ ৩২ হাজার টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করেছেন।

দুদক তাহেরিনা বেগমের বিরুদ্ধে ৬ লাখ ৮৪ হাজার ৩৬৬ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বর্হিভূত ৪৩ লাখ ৩২ হাজার ৪৫৬ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬ (২) ও ২৭ (১) ধারায় মামলা করেছে।

দুদক কর্মকর্তারা বলছেন, আবুল হাশেম ও তার স্ত্রী বর্তমানে খুলশী থানার পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট সড়কে রূপসী হাউজিং আবাসিক এলাকার একটি বাসায় থাকেন। সেই চারতলা ভবনটি তাদের যৌথ নামে আছে। তাহেরিনা বেগম ভবন তৈরিতে ব্যয়ের টাকা কীভাবে পেয়েছেন, সেটা অনুসন্ধান করে দুদক।

তাহেরিনা বুটিক ব্যবসা ও টিউশন থেকে আয়ের কথা বলেছেন। কিন্তু বুটিক ব্যবসার কোনো বৈধ নথিপত্র দেখাতে পারেননি। এর থেকে সহজেই বোঝা যায়, পুলিশ কর্মকর্তা আবুল হাশেম নিজের অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থ স্ত্রীর নামে রেখে সেগুলো পরস্পরের যোগসাজশে বৈধ করার কৌশল নিয়েছিলেন।

স্বামীর অবৈধ অর্থ ভোগদখলে রাখতে সহযোগিতা করায় তাহেরিনা বেগমের বিরুদ্ধে মামলায় দুদক আইনের পাশাপাশি দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায়ও অভিযোগ আনা হয়েছে।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

এএসপিপত্নী কোটিপতি দুদক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর