Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কোটাবিরোধী আন্দোলনের পেছনে শিবির-ছাত্রদল-বাম: গোয়েন্দা প্রতিবেদন

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৪ জুলাই ২০২৪ ২২:১৭

রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে চতুর্থ দিনের মতো কোটাবিরোধী আন্দোলন। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির, বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদল ও বিভিন্ন বাম দলের ছাত্র সংগঠনগুলো চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলনে সুযোগ নিয়ে নেতৃত্বে রয়েছে বলে পুলিশের এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। প্রতিবেদনটিতে কারা, কীভাবে আন্দোলন বেগবান করবে, আন্দোলনে কী ঘটতে পারে এবং আন্দোলন প্রতিরোধে করণীয় কী, তা উল্লেখ করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সারাবাংলা ডটনেটের হাতে আসা পুলিশের গোপনীয় শাখার একটি প্রতিবেদন (পর্যবেক্ষণ, করণীয় ও সুপারিশ) থেকে এ সব তথ্য জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতরের অ্যাডিশনাল ডিআইজি এ এফ এম আঞ্জুমান কালাম (গোপনীয়) স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনটি গত ২৪ জুন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। একই প্রতিবেদন পুলিশের এসবি, র‌্যাব, হাইওয়ে ডিআইজি, সব কমিশনার, রেঞ্জ ডিআইজি ও সব পুলিশ সুপারদেরও পাঠানো হয়। বেশ কয়েকটি জেলার পুলিশ সুপার এই গোয়েন্দা প্রতিবেদন পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তবে তারা সারাবাংলার কাছে কোনো মন্তব্য জানাতে চাননি।

বিজ্ঞাপন

কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী রাজধানীর শাহবাগ এলাকায় কর্মসূচি পালন করছেন কয়েকদিন ধরে। এই এলাকাটি ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা জোনের অন্তর্ভুক্ত। গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বিষয়ে রমনা জোনের উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের বক্তব্য জানা যায়নি। গোয়েন্দা প্রতিবেদনের বিষয়ে মন্তব্য জানাতে চাননি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও।

প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ২০১৮ সালে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সব সরকারি দফতর, স্বায়ত্তশাসিত/আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটাপদ্ধতি সংশোধন করে এক পরিপত্র জারি করা হয়। কিন্তু গত ৫ জুন পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার আদেশ দেন হাইকোর্ট।

বিজ্ঞাপন

এই আদেশের প্রতিবাদে ও চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিলের দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে আন্দোলন শুরু হয়। কোটা বাতিলের দাবির প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমর্থন থাকায় বিষয়টির যৌক্তিক সমাধান করা না গেলে আন্দোলন সারা দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।

রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে চতুর্থ দিনের মতো কোটাবিরোধী আন্দোলন। ছবি: সারাবাংলা

রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে চতুর্থ দিনের মতো কোটাবিরোধী আন্দোলন। ছবি: সারাবাংলা

আন্দোলনের প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারা দেশে প্রায় সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ‘সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’-এর ব্যানারে শিক্ষার্থীরা ২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে আন্দোলন করে। তাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ওই বছরের ৪ অক্টোবর সকল সরকারি দফতর, স্বায়ত্তশাসিত/আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকুরিতে ৯ম গ্রেড (পূর্বতন ১ম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করে পরিপত্র জারি করে। এই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০২১ সালে হাইকোর্টে একটি রিট করা হয়। রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে হাইকোর্ট গত চলতি বছরের ৫ জুন ১ম থেকে ১৩ তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।

এই রায়ের প্রতিবাদে ও কোটাপদ্ধতি বাতিল বহাল রাখার দাবিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ, রাস্তা অবরোধ ইত্যাদি কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করেছে এবং চেম্বার আদালত সেটির ওপর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ৪ জুলাই ধার্য করা হয়। তবে ৪ জুলাই (বৃহস্পতিবার) আপিল শুনানি না করলে হাইকোর্টের রায় বহাল থাকে।

গত ৫ জুন কোটা বহাল রাখা হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হতে থাকে। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সাত কলেজের শিক্ষার্থীবৃন্দ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

গোপনীয় শাখার প্রতিবেদনে আন্দোলনের পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করা হয়েছে—

২০১৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সারাদেশের শিক্ষার্থীরা সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের নিয়োগে কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। সে সময় কোটা সংস্কার দাবির আন্দোলনের প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সমর্থন লক্ষ করা যায়। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই আন্দোলনে স্বল্প সংখ্যক শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা গেলেও যথাযথ পদক্ষেপ গৃহীত না হলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পেতে পারে। ফলে এই আন্দোলন সারা দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়সহ বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বুয়েট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজসহ ঢাকার বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যোগ দিলে তারা শাহবাগ, নীলক্ষেত, কাঁটাবন, সায়েন্সল্যাব মোড়, জাতীয় প্রেস ক্লাব, মৎস্যভবন ইত্যাদি এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে পারে। উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা আন্দোলনকালে রাস্তা অবরোধ, যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টা চালাতে পারে। উল্লেখ্য, গত ৬ মে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মহাসড়ক অবরোধ করে যান চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।

রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে চতুর্থ দিনের মতো কোটাবিরোধী আন্দোলন। ছবি: সারাবাংলা

রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে চতুর্থ দিনের মতো কোটাবিরোধী আন্দোলন। ছবি: সারাবাংলা

বিএনপি ও সমমনা দলগুলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তী আন্দোলন গড়ে তুলতে নানা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তারা বিভিন্ন ইস্যুতে ডাকা কর্মসূচিগুলোয় সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততা ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে তারা নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা ও সরকারবিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে রাজনৈতিক আন্দোলনে রূপান্তরিত করার অপপ্রয়াস চালাতে পারে। তারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার চালিয়ে বা গুজব ছড়িয়ে সারাদেশে আন্দোলন গড়ে তোলার অপচেষ্টা চালাতে পারে।

২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’ গঠন করে নেতৃত্ব দান করে। পরবর্তীতে তার নেতৃত্বে ‘বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ’ গঠিত হয়। চলমান আন্দোলনেও ছাত্র অধিকার পরিষদের সাবেক নেতা আখতার হোসেনের নেতৃত্বে গঠিত স্বতন্ত্র ছাত্র সংগঠন ‘গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি’-এর সদস্য রিফাত রশিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আসিফ মাহমুদ সজিব, ছাত্র অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি বিন ইয়ামিন মোল্লা, সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সাবেক নেতা হাসান আল মামুন প্রমুখকে নেতৃত্ব দিতে দেখা যাচ্ছে। তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের ন্যায় বর্তমান আন্দোলনকেও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে।

কোটা বাতিলের আন্দোলনটি শিক্ষার্থীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হওয়ায় ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ও বিভিন্ন বাম ছাত্র সংগঠনের পাশাপাশি ছাত্রলীগের পদ-পদবি বঞ্চিত কিছু নেতা এই আন্দোলনের পেছনে রয়েছে বলে জানা গেছে। ফলে তারা এবং ছাত্রলীগের অপেক্ষাকৃত কম পরিচিত কিছু নেতাকর্মী আন্দোলনে যুক্ত হয়ে আন্দোলন জোরদার করার চেষ্টা চালাতে পারে।

‘চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ প্রত্যাশী শিক্ষার্থী সমন্বয় পরিষদ’ চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ বছর করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছে। সংগঠনটি গত ৮ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘চাকরিতে বয়সসীমা ৩৫ করার নিজেদের দাবির পাশাপাশি কোটা বাতিলের দাবি জানিয়ে সমাবেশ করে। তারা কোটা বাতিলের দাবি জানিয়ে নিজেদের আন্দোলনের প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের সহানুভূতি আদায় এবং চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর করার দাবিটিকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে জোরদার করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে প্রতীয়মান হয়।

ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, বাম ছাত্র সংগঠনসহ সরকারবিরোধী বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে পরিকল্পিতভাবে কোনো নাশকতা বা শিক্ষার্থী হত্যার ঘটনা ঘটিয়ে তার দায় সরকারের ওপর চাপানোর অপচেষ্টা চালাতে পারে।

বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মী এবং কথিত সুশীল সমাজ ও বুদ্ধিজীবী বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সরকারবিরোধী বক্তব্য প্রদান করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে উসকে দিতে পারে।

২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সরকারি দলের কোনো কোনো নেতার মন্তব্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছিল। শিক্ষার্থীদের যে কোনো ধরনের আন্দোলন একটি স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের মন্তব্য প্রদানের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বনের প্রয়োজন রয়েছে।

রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে চতুর্থ দিনের মতো কোটাবিরোধী আন্দোলন। ছবি: সারাবাংলা

রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে চতুর্থ দিনের মতো কোটাবিরোধী আন্দোলন। ছবি: সারাবাংলা

মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণার হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার দাবিতে ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড’ আন্দোলন করতে পারে বলে জানা যায়। তারা আন্দোলন কর্মসূচি পালনকালে তাদের সঙ্গে সাধারণ শিক্ষার্থীদের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

শিক্ষার্থীরা আন্দোলনের নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা আন্দোলনে বাধা প্রদান করতে পারে। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটলে অতীতের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ন্যায় তার দায় ছাত্রলীগের ওপর চাপিয়ে সারাদেশে কোটা বাতিলের আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।

গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখিত আন্দোলন প্রতিরোধে সুপারিশসমূহ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সন্নিহিত এলাকা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি; সরকারবিরোধী চক্র ও স্বার্থান্বেষী মহল যেন শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার সুযোগ না পায় সে ব্যাপারে সতর্কতা বৃদ্ধি; আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীসহ সরকারবিরোধী ছাত্র সংগঠন বিশেষ করে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদ ও বাম ছাত্র সংগঠনের নেতৃবৃন্দের গতিবিধির প্রতি নজরদারি; ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড’ ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা যাতে আন্দোলনে মুখোমুখি অবস্থানে না যায় সে ব্যাপারে সতর্কতা বৃদ্ধি; শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের ব্যাপারে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থান নিশ্চিতকরণ এবং কোনোরূপ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় না জড়ানোর জন্য নির্দেশনা প্রদান; সড়ক-মহাসড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীদের যে কোনো ধরনের কর্মসূচি পালন রোধ এবং যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে ফোর্স মোতায়েন; মোতায়েনকৃত ফোর্সের যথাযথ ব্রিফিং এবং যে কোনো ধরনের উস্কানিতেও সর্বোচ্চ পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন নিশ্চিতকরণ; সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের মন্তব্য প্রদানের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্কতা অবলম্বন; শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ রোধে নজরদারি বৃদ্ধি; সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার ও গুজব রোধে সাইবার পেট্রোলিং জোরদার; সকল গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বিত নজরদারি বৃদ্ধি প্রভৃতি।

বৃহস্পতিবার (৪ ‍জুলাই) সবশেষ জানা যায়, ঢাকাসহ সারাদেশে কোটাবিরোধী শিক্ষার্থীরা আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়। দেশের কোথাও কোথাও রেললাইন ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও আন্দোলন অব্যাহত রাখে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আগামী শনিবার সারাদেশে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। এ ছাড়া রোববার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।

সারাবাংলা/ইউজে/একে

কোটাবিরোধী আন্দোলন গোয়েন্দা প্রতিবেদন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাহবাগ সরকারি চাকরি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর