এবার ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা চবি শিক্ষার্থীদের
৫ জুলাই ২০২৪ ২৩:০৩
চট্টগ্রাম ব্যুরো: প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালে হাইকোর্টের রায় বাতিলের দাবিতে এবার ক্লাস এবং পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার (৫ জুলাই) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করে আন্দোলন চলমান রাখার ঘোষণা দিয়েছে।
জানা গেছে, চবির রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ৫৪ ও ৫৮, সংস্কৃতি বিভাগের ৪৬, অর্থনীতি বিভাগের ৫৭, লোকপ্রশাসনের ৪১, ৪২ ও ৪৩, বাংলা বিভাগের ৫৮, ইতিহাস বিভাগের ৫৬, ৫৭ ও ৫৮, দর্শন বিভাগের ৫৭ ও ৫৮ এবং ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ৩৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তাদের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেছে।
বাংলা বিভাগের ৫৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোটাবিরোধী আন্দোলন হচ্ছে বৈষম্যের বিরুদ্ধে সারা বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। এ কোটা সিস্টেম চালু থাকলে চাকরিতে মেধার মূল্যায়ন কখনও হবে না। তাই আমরা আমাদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছি। যতদিন না আমাদের দাবি না মানা হয় ততদিন আমরা ক্লাস ও পরীক্ষায় ফিরবো না।’
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ৩৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহ আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সরকারি চাকরিতে কোটার বৈষম্য বিলোপ চাই। সে দাবিতেই আমরা ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনে একাত্মতা পোষণ করেছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের সিদ্ধান্তে অটুট থাকব।’
লোকপ্রশাসন বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অমিত রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা কোটার বৈষম্য চাই না। কোটা দিয়ে কখনো মেধার মূল্যায়ন হয় না। আমাদের দাবি না মানা হলে আমরা আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
এদিন বিকেলে নগরীর ২ নম্বর গেইট এলাকায় কোটা বাতিলের দাবিতে অবস্থান নেন চবির শিক্ষার্থীরা। ফলে প্রায়ই এক ঘণ্টা সড়কে যান চলাচল বন্ধ ছিল।
এর আগে, গতকাল (বৃহস্পতিবার) ও এর আগের দিন (শুক্রবার) দুই দফায় কোটা বাতিলের দাবিতে চট্টগ্রাম-হাটহাজারী আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছিলেন শিক্ষার্থীরা।
২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এ কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে সব ধরনের কোটা ১০ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার দাবিতে ওই বছর আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে ওই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের মুখে ওই বছরের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে সব ধরনের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটাব্যবস্থাই বাতিল করে সরকার।
ওই সময় ৩০ শতাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তান-নাতি-নাতনি কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা ও ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা চালু ছিল সরকারি চাকরিতে। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে নবম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে সব ধরনের কোটা বাতিল করা হয়।
ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা ২০২১ সালের জুন মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটের শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। রুলে সরকারি চাকরিতে ৯ম গ্রেড থেকে ১৩ম গ্রেড পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে জারি করা পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
রিটের শুনানি নিয়ে ৫ জুন ঘোষণা করা রায়ে হাইকোর্ট পরিপত্রের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিলের অংশটি অবৈধ ঘোষণা করেন। এরপরই শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা আবার ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’র ব্যানারে নতুন করে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছেন।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো— ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে; ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে, তবে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে কোটা রাখা যেতে পারে; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না; কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে; দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
সারাবাংলা/এমআর/এমও
ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় চবি শিক্ষার্থী পরীক্ষা বর্জন হাইকোর্ট