Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বান্দরবানের লামাবাজার রক্ষার উদ্যোগ, খরচ ৪৯ কোটি টাকা

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৬ জুলাই ২০২৪ ১০:২৩

ঢাকা: বান্দরবান জেলায় লামাবাজার রক্ষার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। এ জন্য ‘বান্দরবান জেলার লামা উপজেলায় আনসার ব্যাটেলিয়ন সদর দফতর ও লামাবাজার রক্ষাকল্পে মাতামুহুরী নদীতে প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়ন শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়নের মাধ্য মাতামুহুরী নদীতে আকস্মিক নদীর তীর ভাঙন রোধ হবে। এ ছাড়া পাহাড়ি ঢল থেকে লামা আনসার ব্যাটালিয়নের সদর দফতরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও লামাবাজার রক্ষা করা হবে।

বিজ্ঞাপন

প্রস্তাবটি নিয়ে গত ২৯ মে অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) আবদুল বাকী।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আব্দুল বাকী বলেন, ‘বিভিন্ন বিষয়ে সুপারিশ দেওয়া হয়েছে। এগুলো প্রতিপালন করে ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) সংশোধন করে পুনরায় পরিকল্পনা কমিশনে পাঠাতে হবে। তারপরই অনুমোদনের পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু করা হবে।’

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভুমি বান্দরবান জেলাটি পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার মধ্যে অন্যতম। জেলাটি ৭টি উপজেলা ও ২৯ টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। অন্যদিকে মাতামুহুরী নদীটি বান্দরবান জেলার আলীকদম উপজেলার চোখইং ইউনিয়নের উৎপন্ন হয়ে বান্দরবান জেলার বিস্তীর্ণ পাহাড়ি অঞ্চলের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলায় এসে বঙ্গোপসাগরের মহেশখালী চ্যানেলে গিয়ে পড়েছে। পাহাড়ি এই খরস্রোতা নদীগুলো বান্দরবান পর্বতশ্রেণির বিপুল পরিমাণ জলরাশি বয়ে নিয়ে আসে। নদীগুলো ফ্লাসি ও সাইনুসাইডাল হওয়ায় বর্ষায় অত্যন্ত ভয়ংকর, খরস্রোতা ও আগ্রাসী রূপ ধারণ করে।

হঠাৎ ফ্ল্যাস ফ্লাডের দরুণ দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় এর গতিপথে আঁকা-বাঁকা স্থানে নদী ভাঙনপ্রবল, ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো ঘনবসতিপূর্ণ। সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা, অসংখ্য গ্রোথ সেন্টার, শিক্ষাকেন্দ্র, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, কবরস্থান, ইউনিয়ন পরিষদ, বাজার, কাঁচা-পাকা সড়ক, বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন, ধর্মীয় উপাসনালয় এবং বির্স্তীর্ণ উর্বর ফসলি জমি নদী ভাঙনের হুমকির সম্মুখীন। এ ছাড়াও অতি বৃষ্টির কারণে সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলে প্রতি বছরেই বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে থাকে। তাই এই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রক্ষা কওে দীর্ঘমেয়াদী টেকসই প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়ন প্রয়োজন। এ অবস্থায় প্রকল্পের স্থানে প্রতিরক্ষাকাজ সহ ওয়াওয়ে নির্মাণ একাধারে নদীর তীরের দীর্ঘমেয়াদি সুরক্ষা দেবে এবং নদী তীর সংলগ্ন এলাকায় পর্যটন শিল্পের বিকাশে ভূমিকা রাখবে।

বিজ্ঞাপন

২০২১ সালে (ইনিটিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং) আইডব্লিউএম সম্পাদিত সমীক্ষায় লামা উপজেলার আনসার ব্যাটেলিয়ন সদর দফতর সংলগ্ন মাতামহুরী নদীর ডানতীরে প্রতিরক্ষা কাজের সুপারিশ না থাকায় তা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী, বাপাউবো, বান্দরবান বর্ণিত লামা উপজেলার আনসার ব্যাটেলিয়ন সদর দফতর সংলগ্ন মাতামহুরী নদীর ডানতীর এলাকা পরিদর্শন এবং প্রাথমিক সার্ভে কাজ শেষ করা হয়। পরবর্তীতে অতিরিক্ত মহাপরিচালক নকশা ও পরিকল্পনা দফতরের স্মারক অনুযায়ী ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিল নকশা সার্কেল-৪ কে আহ্বায়ক করে এবং সদস্য অন্তর্ভুক্ত করে গঠিত ৮ সদস্য বিশিষ্ট কারিগরি কমিটির সিদ্ধান্ত ও সুপারিশের ভিত্তিতে ২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত বোর্ডের যাচাই সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক ডিপিপিটি পরিমার্জন করে ২৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা ব্যয় ধরে একটি ডিপিপি প্রস্তুত করা হয়।

এ ছাড়াও ২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর পানি সম্পদ সচিবের সভাপতিত্বে যাচাই সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যাচাই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাতামুহুরী নদীতীরে অবস্থিত লামাবাজার নামক স্থানটিতে জনসাধারণের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থাকায় স্থায়ী প্রতিরক্ষা কাজ বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ প্রকল্পে অন্তভুক্ত করার নির্দেশনা দেওয়া হয। যাচাই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ডিপিপিটি সংশোধন করে ৪৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় সংবলিত ডিপিপিটি প্রণয়ন করা হয়।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, পিইসি সভায় বলা হয়, উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) লামা উপজেলায় ১ দশমিক ৫৫ কিলোমিটার নদী তীর প্রতিরক্ষা মূলক কাজ বাবদ ৪৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা (প্রতি মিটার ২ লাখ ৯৫ হাজার ) টাকার সংস্থান রাখা হয়েছে। নদী তীর প্রতিরক্ষা কাজের জন্য প্রস্তাবিত ডিজাইনের বিগত কত বছরের বন্যার পানির উচ্চতা, তীব্রতা, গতিবেগ ইত্যাদি বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এছাড় কত বছর ফ্লাড রিটান পিরিয়ড ধরে তীর প্রতিরক্ষা কাজের নকশা করা হয়েছে তার ভিত্তিসহ তীর প্রতিরক্ষা কাজের ডিজাইন নিয়ে জানতে চাওয়া হয়।

এ ছাড়া প্রকল্পে মতামহুরী নদীর ডান তীরে ৬০০ মিটার দীর্ঘ তীর প্রতিরক্ষা কাজের প্রতি মিটার ২ লাখ ৫৩ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়। বাম তীর ৯৫০ মিটার তীর প্রতিরক্ষা কাজে প্রতি মিটারে ৩ লাখ ২৩ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়। সমসাময়িক অন্যান্য প্রকল্পে তীর প্রতিরক্ষা কাজের মিটার প্রতি প্রাক্কলন ব্যয়ের তুলনামূলক চিত্র নিয়েও সভায় জানতে চাওয়া হয়।

সারাবাংলা/জেজে/একে

উন্নয়ন পরিকল্পনা কমিশন বান্দরবান লামা বাজার

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর