৬ মাস অফিসে যান না বিআরটিএর সহকারী পরিচালক গোলাম হায়দার
৬ জুলাই ২০২৪ ১৩:০৯
ঢাকা: বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রকৌশল শাখার সহকারী পরিচালক গোলাম হায়দার চৌধুরী প্রায় ৬ মাস ধরে অফিস করেন না। গুঞ্জন রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চ শিক্ষার জন্য গিয়ে সেখানে সেটেল্ড হয়েছেন। এরপরও বিআরটিএর নতুন চেয়ারম্যানকে ম্যানেজসহ পদোন্নতির জন্য বিআরটিএ কর্মকর্তা গোলাম হায়দার সরকার জোর তদবির চালাচ্ছেন। পদোন্নতি শেষে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমাবেন বলে চলছে সমালোচনা।
অভিযোগ রয়েছে, আদেশ অমান্য করে প্রায় ছয় মাস (৫ মাস ১৯ দিন) ধরে বিদেশে অবস্থান করছেন গোলাম হায়দার চৌধুরী।
গত ১৯ জুন তিনি বিআরটিএ‘তে যোগদানের জন্য পত্র জমা দিলেও সংস্থাটির সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদারের আদেশ অমান্য করার কারণে তার যোগদানপত্রটি মঞ্জুর করেনি কর্তৃপক্ষ। গত ৩০ জুন এক আদেশে বিআরটিএ‘র চেয়ারম্যান পদে গৌতম চন্দ্র পাল যোগদান করলে ফের তৎপর হয়ে ওঠেন তিনি।
এদিকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তার বাড়ির পাশে গোলাম হায়দার সরকারের বাড়ি হওয়ায় এবার মন্ত্রণালয় থেকে জোর তদবির চালানোর প্রচেষ্টা করছেন তিনি। এতে মোটাদাগে তদবিরের পাশাপাশি গোলাম হায়দার সরকারকে যোগদান, উপপরিচালক পদে পদোন্নতি এবং সিনিয়রিটি দিতে মোটা অংকের ঘুষ লেনদেন করতে চান বলেও বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সূত্র বলছে, ২০২১ সালের ২ জুন বিআরটিএ‘র ২২৭ নং স্বারকের আদেশ মূলে যুক্তরাষ্ট্রের ‘লামার ইউরিভার্সিটি’ তে ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্টে উচ্চশিক্ষার্থে অধ্যয়নরত ছিলেন সংস্থাটির সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) গোলাম হায়দার। মাস্টার্স কোর্সের জন্য দাখিলকৃত অফার লেটারে সময়সীমা ছিল ২০২৩ সালের ২০ মে পর্যন্ত। তবে এই কর্মকর্তা আরও ৬ মাসের ছুটির আবেদন করলে প্রশিক্ষণ ও উচ্চশিক্ষা নীতিমালা ২০২৩ এর ২৫ (ক) (র) অনুযায়ী প্রেষণে ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ।
তবে এই কর্মকর্তা ২০২৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর পিএইচডি অধ্যায়নের জন্য আরও ২ বছরের ছুটি বৃদ্ধির আবেদন করেন। বিদেশে থাকা অবস্থায়, অন্য কোনো কোর্সে ভর্তির আবেদন ও ছুটি মঞ্জুরির সুযোগ না থাকায় একই সালের ১৯ ডিসেম্বর ২৫৯৬ নং স্বারকে তাকে ছুটি শেষে কর্মস্থলে যোগদানের জন্য নির্দেশনা দেয় কর্তৃপক্ষ।
পরবর্তীতে তিনি ২৪ ডিসেম্বর প্রশিক্ষণ ও উচ্চশিক্ষা নীতিমালা ২০২৩ এর পরিপন্থি আরও ১ বছর সময় বৃদ্ধির জন্য আবেদন করেন তিনি। এরপর বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ তাকে ২৬৪৯ নং স্বারকের এক আদেশে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন যে, জনপ্রশাসন ও উচ্চশিক্ষা নীতিমালা, ২০২৩ এর ২৫ (ক) (র) অনুযায়ী গোলাম হায়দার সরকারের ২০২১ সালের ২৩ মে তারিখে সম্পাদিত মুচলেকা (বন্ড) অনুযায়ী প্রেষণের আদেশ ১ বছর বৃদ্ধির আবেদন মঞ্জুর করার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়া মঞ্জুরকৃত ছুটি শেষে দেশে ফিরে কর্মস্থলে যোগদানের জন্য পুনরায় তাকে নির্দেশ প্রদান করে পত্র প্রেরণ করেন সংস্থাটির উপ-পরিচালক (প্রশাসন) সরদার মাহবুব রহমান।
বিআরটিএ মিরপুর অফিসের একজন উপ পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, গুঞ্জন উঠেছে তিনি মূলত পদোন্নতি নিতেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে দেশে এসেছেন। অথচ তিনি প্রায় ৬ মাস ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে রয়ে যাবেন বলে বারবার ছুটির আবেদন করেই যাচ্ছেন। কিন্তু একবার ছুটি শেষে পুনরায় যোগদান না করে আবার ছুটি দেওয়ার সরকারি কোনো নীতিমালা না থাকায় পুনরায় ছুটি মেলেনি তার। এজন্য তিনি যোগদানই করেননি বরং তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকার বিষয়টিকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তবে চেয়ারম্যান নতুন আসায় এ সুযোগটা নিতে চাচ্ছেন গোলাম হায়দার সরকার।
জানতে চাইলে বিআরটিএর উপপরিচালক (প্রশাসন) রিপন কুমার সাহা বলেন, সহকারী পরিচালক (ইঞ্জিঃ) গোলাম হায়দার সরকার কিছুদিন পূর্বে চেয়ারম্যান বরাবরে যোগদানের আবেদন দিলে চেয়ারম্যান মহোদয় তা মঞ্জুর করেনি। তার আবেদনটি মন্ত্রণালয়ে মতামতের জন্য পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে তা বাস্তবায়ন হবে।
গোলাম হায়দার সরকারের বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএর সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর তার ছুটি শেষে যখন কর্মস্থলে যোগদান করেনি। তখনই আমরা আইন অনুযায়ী বিষযটি মন্ত্রণালয়কে অবগত করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা চাওয়া হয়। মন্ত্রণালয় কোনো ধরনের নির্দেশনা না দেওয়ায় তার যোগদানপত্রটি মঞ্জুর করা হয়নি। যেহেতু সে আইন ও কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অমান্য করেছে সেহেতু তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরে যোগদান প্রদান করতে পারবে কর্তৃপক্ষ।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ক্যারিয়ার প্ল্যানিং অ্যান্ড ট্রেনিং (সিপিটি) অনুবিভাগ বিদেশ প্রশিক্ষণ গবেষণা ইউনিটের ২০২৩ সালের ১১ জুলাই প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনের জনপ্রশাসন প্রশিক্ষণ ও উচ্চশিক্ষা নীতিমালা-২০২৩ এর ২৭ ধারায় গ উপধারায় বলা হয়েছে বিদেশে প্রশিক্ষণ শেষে কর্মকর্তা-কর্মচারিরা দেশে প্রত্যাবর্তনের পর ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে একটি কোর্স সমাপ্তির প্রতিবেদন এবং পরিবীক্ষণ দলের সদস্যগণ একটি সমন্বিত পরিবীক্ষণ প্রতিবেদন সরকারি আদেশ ইস্যুকারী মন্ত্রণালয়ে দাখিল করবেন। ঘ উপধারায় বলা আছে অনিবার্য কারণে যোগদানে বিলম্ব হলে এর জন্য ব্যাখ্যা প্রদান করতে হবে। ব্যাখ্যা গ্রহণযোগ্য না হলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।
২৮ ধারায় বলা হচ্ছে অনুচ্ছেদ ২৮ (ক) তে উল্লেখিত নির্ধারিত সময় চাকরি না করে পদত্যাগ করলে অথবা চাকরি থেকে বিনা অনুমতিতে অনুপস্থিত থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীর প্রশিক্ষণ বা উচ্চশিক্ষাকালে যে পরিমাণ বেতন ভাতা প্রাপ্ত হয়েছেন তার সমপরিমান অর্থ সরকারকে পরিশোধ করতে বাধ্য থাকিবে।
এ সব বিষয়ে জানতে বিআরটিএ সহকারী পরিচালক গোলাম হায়দার সরকারকে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এমনকি তার মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েও কোনো সাড়া মেলেনি।
সারাবাংলা/ইউজে/একে