চট্টগ্রাম ব্যুরো: সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপি নেতাকর্মীরা হাল ছেড়ে দেয়নি উচ্চারণ করে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, নির্বাচনের আগে বিএনপি যত না শক্তিশালী ছিল, এবার তার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। এবার এমন ধাক্কা হবে, সরকার সামলাতে পারবে না।
শনিবার (৬ জুলাই) বিকেলে নগরীর নুর আহমদ সড়কে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। চেয়ারপারসন কারাবন্দি বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি এ সমাবেশের আয়োজন করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আমরা রাস্তায় নেমেছি। যতদিন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না, ততদিন গণতন্ত্র মুক্তি পাবে না। যতদিন খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না, ততদিন দেশের মানুষ অধিকার ফিরে পাবে না। যতদিন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না, ততদিন দেশের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা থাকবে না। যতদিন বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাবে না, ততদিন লুটপাটের বাংলাদেশ অব্যাহত থাকবে। বেগম জিয়ার মুক্তির সাথে বাংলাদেশের মুক্তি অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত।’
তিনি বলেন, ‘অনেক দেখেছি, অনেক শুনেছি, আর শুনব না। দেশনেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে। যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে রাখার জন্য, জনগণের ভোট কেড়ে নেওয়ার জন্য, মানবাধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার জন্য, বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার জন্য, মানুষের জীবনের নিরাপত্তা কেড়ে নেওয়ার জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা সাজিয়েছে এবং সেই মামলায় জেলে রেখেছে, তাদের সবাইকে অপরাধের শাস্তি ভোগ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘মামলায় যে ট্রাস্টের কথা বলা হয়েছে, সেই ট্রাস্ট থেকে একটি পয়সা বেগম খালেদা জিয়া বা তার পরিবারের কোনো সদস্য গ্রহণ করেননি। সব টাকা ব্যাংকে জমা আছে। সেই মামলায় তাকে একবার পাঁচ বছর, এর পর দশ বছরের সাজা দিয়েছে। ভেবে দেখুন, কতবড় অপরাধ তারা করেছে! বাংলাদেশের কোনো আইনে বেগম খালেদা জিয়ার কোনো শাস্তি হওয়ার কথা নয়। কর্তৃত্ববাদীরা, ফ্যাসিস্টরা আইনের ভুল ব্যাখা দিয়ে এভাবে গণতন্ত্রকে হত্যা করে দেশের ক্ষমতা দখল করে রাখার প্রক্রিয়া চালায়।’
ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের অনুরোধ খালেদা জিয়া শোনেননি জানিয়ে খসরু বলেন, ‘দেশকে মুক্ত করার জন্য, গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনার জন্য, মানবাধিকার ফিরিয়ে আনার জন্য, গণমাধ্যমে স্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার জন্য, বাকস্বাধীনতা ফিরিয়ে আনার জন্য বেগম খালেদা জিয়া এরশাদের বিরুদ্ধে শুরু থেকে শেষপর্যন্ত আন্দোলন করেছেন। অন্য নেত্রীকে দেখেছি, এরশাদের সাথে হাত মিলিয়েছিলেন। হাত মিলিয়ে নির্বাচন করেছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া কোনো আপস করেননি। শুরু থেকে শেষপর্যন্ত নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আন্দোলন করে এরশাদের পতন ঘটিয়েছিলেন। স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছিলেন।’
বিএনপির শীর্ষ এই নেতা বলেন, ‘ওয়ান-ইলেভেনের সময় সামরিক শাসন চালিত সরকার বেগম খালেদা জিয়াকে অনুরোধ করেছিল, তাদের অন্যায়ভাবে রাষ্ট্রদখলের বিষয়টি মেনে নেওয়ার জন্য। শেখ হাসিনা মেনে নিয়েছে, বেগম খালেদা জিয়া মানেননি। তিনি জেল খেটেছেন, এখনও জেল খাটছেন। এখন আরেক স্বৈরাচার, আরেক ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে গিয়ে জেল খাটছেন।’
বিশ্বের গণতন্ত্রের ইতিহাসে বেগম খালেদা জিয়ার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে, আর যারা গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে চলে যাবে বলে মন্তব্য করেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
দেশের অর্থনীতির চিত্র তুলে ধরে সাবেক এ বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রফতানির চৌদ্দ বিলিয়ন ডলার হাওয়া হয়ে গেছে, পত্রিকায় বের হয়েছে। এক লাখ সত্তর হাজার কোটি টাকার রফতানি হাওয়া হয়ে গেছে। তাহলে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধিও হাওয়া হয়ে গেছে। যে উন্নয়নের রাজনীতির কথা তারা বলছে সেটা কি আর আছে? একটা কৃত্রিম আওয়ামী মার্কা অর্থনীতির মডেল তারা সৃষ্টি করেছে। দেশের মানুষের টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করে, ব্যাংক-শেয়ারবাজার খালি করে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দিয়েছে। ব্যাংকে টাকা নেই। গ্যাস কিনতে পারছে না, বিদ্যুৎ কিনতে পারছে না, কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।’
বিএনপির আন্দোলন বন্ধ হয়নি জানিয়ে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘তাদের (আওয়ামী লীগ) কিছু সংবাদপত্র আছে, কিছু বুদ্ধিজীবী আছে, তারা কি বলছে জানেন? ২৮ তারিখ (অক্টোবর) ঢাকায় আমাদের বিশাল জনসভা ছিল। গুলি মেরে, গ্রেনেড মেরে, টিয়ারগ্যাস মেরে বিশ লাখ, ত্রিশ লাখ মানুষের জনসভা তারা সেদিন পণ্ড করে দিয়েছিল। ওই আওয়ামী বুদ্ধিজীবীরা বলে- আন্দোলন কী তাহলে নতুন করে শুরু হবে? না, আন্দোলন চলমান আছে। গুলি করে, গ্রেনেড মেরে, টিয়ারগ্যাস মেরে জনসভা পণ্ড করলেও আন্দোলন পণ্ড হয় না।’
তিনি বলেন, ‘ভোটচুরি করে, ডামি নির্বাচন করে কেউ যদি মনে করে আন্দোলন শেষ হয়ে গেছে অথবা বিএনপিকে নতুন করে শুরু করতে হবে, আমি পরিষ্কারভাবে বলছি, নতুন করে শুরু করার কিছু নেই। আন্দোলন চলমান আছে। ভয়ে প্রধানমন্ত্রী সকাল-বিকেল কী ধরনের মন্তব্য করছে দেখতে পাচ্ছেন না? ভয়ে কাঁপছেন। ওরা জানে, বাংলাদেশের পঁচানব্বই শতাংশ মানুষ তাদের নির্বাচন বয়কট করেছে, উপজেলা নির্বাচন বয়কট করেছে। তারা জানে, ওই নির্বাচন করে কোনো লাভ হয়নি। তারা জানে, বিএনপির জনসভা পণ্ড করে কোনো লাভ হয়নি। আবার সভা হবে, আবার মিছিল হবে।’
বিএনপির নেতাকর্মীরা কেউ হাল ছাড়েনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘অন্যায় যখন আইনে পরিণত হয়, প্রতিরোধ তখন অপরিহার্য। বাংলাদেশে কোনো বিচার আছে? যেখানে বিচার নেই, সেখানে প্রতিবাদ করে লাভ আছে? তাহলে কী করতে হবে? প্রতিরোধ, প্রতিরোধ, প্রতিরোধ করতে হবে। আমরা সবাই প্রস্তুত। নেতাকর্মীরা কেউ হাল ছাড়েনি। ঘরবাড়ি ভেঙেছে, ব্যবসা হারিয়েছে, চাকরি হারিয়েছে, জীবন দিয়েছে, মামলার পর মামলা মোকাবেলা করছে, পুলিশের গুলিতে মৃত্যুবরণ করেছে, জেলে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুবরণ করেছে – কেউ হাল ছাড়েনি। আরও বেশি শক্তিশালী হয়ে আজ আমরা দাঁড়িয়েছি।’
বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলুর সভাপতিত্বে ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীমের পরিচালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার ও এস এম ফজলুল হক, কেন্দ্রীয় শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, নগর কমিটির সাবেক আহবায়ক শাহাদাত হোসেন ও সাবেক সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর, কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক হারুনুর রশীদ ও মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন এবং কেন্দ্রীয় সদস্য সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া ও দক্ষিণের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক এনামুল হক এনাম প্রমুখ।