Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পুলিশের গুলিতে পুলিশ হত্যা, তদন্ত প্রতিবেদনের আগেই ব্যবস্থা

উজ্জল জিসান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৬ জুলাই ২০২৪ ২২:০১

ঢাকা: রাজধানীর গুলশানে ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে দায়িত্বরত কনস্টেবল কাওছার আলী (৪১) দায়িত্বরত আরেক কনস্টেবল মনিরুল হককে (২৭) রাগের মাথায় এলোপাতাড়ি গুলি করে হত্যা করে। এ ঘটনায় এরই মধ্যে কাওছার আলীকে গ্রেফতার করে ৩০২/৩২৬/৩০৭ ধারায় গুলশান থানায় মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

এ ঘটনায় ডিএমপি থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই তদন্ত কমিটিতে গুলশান জোনের উপকমিশনার (ডিসি ও অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) রিফাত রহমান শামীমকে প্রধান করা হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন, ডিএমপির ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. এলিন চৌধুরী ও আএডি বিভাগের সহকারী কমিশনার আশফাক আহমেদ।

বিজ্ঞাপন

কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কিন্তু ঘটনার প্রায় এক মাস হতে চললেও কমিটি এখনো প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। এমনকি কবে নাগাদ জমা হবে তাও স্পষ্ট করে বলতে পারছে না পুলিশ কর্মকর্তাদের কেউ। তবে প্রতিবেদন জমা না হলেও ডিএমপি কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান এরই মধ্যে ব্যবস্থা নিয়েছেন। এ ধরনের ঘটনা এড়াতে নিয়েছেন নানা পদক্ষেপ।

তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে জানতে চাইলে গুলশান বিভাগের ডিসি রিফাত রহমান শামীমের মোবাইলে কল করা হলে গুলশানের এডিসি রফিকুল ইসলাম রফিক কল রিসিভ করে সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘স্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ মিটিংয়ে আছেন। পরে কথা বলতে হবে।’ এরপর মিটিং থেকে বেরিয়ে ডিসি গুলশান বলেন, ‘কার্যক্রম চলমান রয়েছে। কাজ শেষ হলে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হবে।’

এদিকে, গুলশান পুলিশ জানিয়েছে, গুলির ঘটনার নেপথ্যে কারণ উদঘাটন, ঘটনার দায়-দায়িত্ব নিরুপণ, ঘটনাসংশ্লিষ্ট তথ্য সংগ্রহ ও অগ্রগতি পর্যালোচনা নিয়ে কাজ শুরু করে গঠিত তদন্ত কমিটি। মাঝখানে কোরবানির ঈদের ছুটি পরে যাওয়ায় এবং ঈদের আগে-পরে ছাত্র আন্দোলনের দিকে নজর দেওয়ায় তদন্তে কিছুটা ভাটা পড়েছে। এ কারণে কমিটি এখনো প্রতিবেদন দাখিল করতে পারেনি।

বিজ্ঞাপন

গুলশান বিভাগের আরেক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, ‘ফিলিস্তিন দূতাবাসের সামনে পুলিশের গুলিতে পুলিশ হত্যার ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এর পর ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান পর দিনই ঘটনাস্থলে যান এবং তাৎক্ষণিক কিছু ব্যবস্থা নেন, যা ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা রোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।’

পুলিশ সূত্র জানায়, এর আগে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা হিসেবে পুলিশ সদস্যদের ডিপ্লোমেটিক জোনে দায়িত্ব দেওয়া হতো। কারণ, এই জোনে ডিউটি করতে হয় বেশি সময় ধরে। আর ডিউটি হচ্ছে দাঁড়িয়ে থাকা, যা অত্যান্ত কষ্টকর। সহজে বদলি করা হতো না। বাড়তি কোনো আয়ের ব্যবস্থাও নেই এই জোনে। টিএ-ডিএও অনেক কম। এসবের বিপরীতে কমিশনার ব্যবস্থা নিয়েছেন। গুরুদণ্ড পাওয়া পুলিশ সদস্যদের এই জোন থেকে সরিয়ে আনা হয়েছে। ডিউটির সময় কমিয়ে আনা হয়েছে। টিএ-ডিএ বাড়ানো হয়েছে। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধাও বাড়ানো হয়েছে। কোনো পুলিশ সদস্যকে বদলির পর এক নাগারে অনেক দিন এই জোনে রাখা হবে না। দায়িত্বের সময় বন্ধুত্বপূর্ণ ও সহযোগিতামুলক আচরণ করা হচ্ছে কি না- তা তদারকি করা হবে।

এক্ষেত্রে অধিক নম্র, ভদ্র ও মানবিক গুণসম্পন্ন কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের এই জোনে বদলি করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যাতে আগের চেয়ে আরও বেশি তদারকি করতে পারেন সেজন্য জোনে কর্মকর্তার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। কর্মকর্তারা ওয়ান টু ওয়ান বৈঠক করছেন। কারও কেনো সমস্যা আছে কি না তা জানার চেষ্টা করছেন। মানসিক সমস্যা থাকলে তাকে সরিয়ে অন্যত্র নেওয়া হচ্ছে।

পুলিশ জানিয়েছে, হলি আর্টিজনে হামলার পর গুলশান এলাকায় দ্বিতীয় ঘটনা হচ্ছে- দূতাবাসের সামনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা অবস্থায় এক পুলিশ সদস্যকে আরেক পুলিশের সদস্যের গুলি। তবে এক্ষেত্রে বিদেশি দূতাবাসগুলোতে কর্মরত নাগরিকরা যাতে ভয় না পান এবং বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করেন সেজন্য কূটনৈতিকভাবে আলোচনা হয়েছে।

অপরদিকে, গুলির ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন না দিলেও এরই মধ্যে পুলিশ জানতে পেরেছে, সামান্য কথা কাটাকাটি থেকেই মূলত একজন আরেকজনকে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। এ ঘটনায় নিহত মনিরুলের ভাই তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় কর্মরত কনস্টেবল মাহাবুবুল হক বাদী হয়ে গুলশান থানায় মামলা করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিবেদন এখনো পাইনি। তদন্ত চলছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে জানানো হবে।’

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশ হত্যা পুলিশের গুলি ব্যবস্থা

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর