Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কোটাবিরোধীদের ‘বাংলা ব্লকেডে’ স্থবির ঢাকা

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
৭ জুলাই ২০২৪ ১৮:১৯

শাহবাগ থেকে শুরু করে সায়েন্স ল্যাব, নিউমার্কেট, চানখাঁরপুল এলাকায় কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের অবরোধে রাজধানী ঢাকা কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। শাহবাগ এলাকায় শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলন। ছবি: সারাবাংলা

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিলের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীদের চলমান আন্দোলনে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে কার্যত স্থবির হয়ে গেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধিকাংশ এলাকা। শাহবাগ অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় যেসব সড়ক বাইপাস হিসেবে ব্যবহার হতো, সেগুলোও বন্ধ করে দিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। ফলে যানজট ছড়িয়ে পড়েছে ঢাকা উত্তরেও।

সোমবার (৭ জুলাই) দুপুর থেকে যানচলাচল বন্ধ হয়ে রাজধানীর শাহবাগ, নিউমার্কেট, চাঁনখারপুলসহ আশপাশের ব্যস্ততম সড়কগুলো স্থবির হয়ে আছে। এ ছাড়া তীব্র যানজট ছড়িয়ে পড়েছে মিরপুর, বনানী, গুলশানের দিকেও।

বিজ্ঞাপন

এ দিন পূর্বঘোষণা অনুযায়ী, ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে দুপুর আড়াইটার পর থেকে নিউমার্কেট ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে অবস্থান নেন ইডেন মহিলা কলেজ ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা যানচলাচল বন্ধ করে দেন। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল ও বিভাগ থেকে আলাদা ব্যানার নিয়ে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে যোগ দেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ভিন্ন ভিন্ন তিনটি অংশ চাঁনখারপুল, পরীবাগ ও শাহবাগ মোড় অবরোধ করে কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী নানা স্লোগান ও প্যারোডি সংগীতের মধ্য দিয়ে অবরোধস্থল মুখরিত রেখেছেন।

বিজ্ঞাপন

এদিকে ইডেন মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীরা নিউমার্কেট মোড় ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা সায়েন্স ল্যাব মোড় অবরোধ করেন। এতে করে সায়েন্স ল্যাব থেকে ধানমন্ডি ও মিরপুরগামী সড়কগুলোতে যানচলাচল স্থবির হয়ে পড়ে।

বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির পক্ষে দেয়াল লিখন। ছবি: সারাবাংলা

অন্যদিকে শাহবাগ অবরুদ্ধ থাকায় প্রেসক্লাব ও টিএসসিগামী সড়কেও স্থবির আছে যানচলাচল। পরীবাগ অবরুদ্ধ থাকায় মিন্টু রোড ও ফার্মগেটগামী সড়কেও বন্ধ আছে যানচলাচল। আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল, ফজলুল হক মুসলিম হল, একুশে হলসহ ওই এলাকার আবাসিক হলগুলোর শিক্ষার্থীরা অবরোধ করেন চাঁনখারপুল মোড়। এতে চাঁনখারপুলের সঙ্গে সংযুক্ত সড়কগুলোতেও যানচলাচল বন্ধ আছে।

এ ছাড়া পুরান ঢাকায় রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন আশপাশের কলেজের শিক্ষার্থীরাও।

কোটাবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজধানীর আগারগাঁও এলাকাও অবরোধ করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে ক্যাম্পাসজুড়ে স্লোগান-মিছিল দিয়ে আগারগাঁও আট রাস্তার মোড়ে জড়ো হন তারা। এ সময় মিরপুর-ফার্মগেট ও মহাখালী-শিশুমেলা সড়ক দুই ঘণ্টার বেশি সময় অবরুদ্ধ ছিল। বিকেল ৫টার পর অবরোধ তুলে নিলে এই এলাকায় যানচলাচল স্বাভাবিক হতে শুরু করে।

কোটাবিরোধী নানা ধরনের প্ল্যাকার্ড নিয়ে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিয়েছেন রাজপথে। ছবি: সারাবাংলা

এর আগে গত ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এই কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে সব ধরনের কোটা ১০ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার দাবিতে ওই বছরই আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে ওই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে।

আন্দোলনের মুখে ওই বছরের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে সব ধরনের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটাব্যবস্থাই বাতিল করে সরকার। ওই দিন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে নবম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে সব ধরনের কোটা বাতিল করা হয়।

ঢাকা দক্ষিণের প্রধান প্রধান সড়কগুলো অবরুদ্ধে হয়ে যাওয়ার প্রভাবে তীব্র যানজট ছড়িয়েছে ঢাকা উত্তরেও। সন্ধ্যায় মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ের চিত্র। ছবি: সারাবাংলা

ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের পক্ষ থেকে ২০২১ সালের জুন মাসে হাইকোর্টে রিট করা হয়। রিটের শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। ৫ জুন ওই রিটেরই রায়ে পরিপত্রের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিলের অংশটি অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এই রায়ের ফলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য কোটা পুনর্বহাল হয়।

এরপরই শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’র ব্যানারে নতুন করে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। এর মধ্যে ১ জুলাই থেকে তারা টানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। এর অংশ হিসেবেই আজ রোববার ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন আন্দোলনকারীরা।

সারাবাংলা/আরআইআর/এমও/টিআর

কোটাবিরোধী আন্দোলন শাহবাগ অবরুদ্ধ স্থবির

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর