রথযাত্রা-অবরোধে চট্টগ্রামে জনদুর্ভোগ
৭ জুলাই ২০২৪ ২০:৪১
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালে হাইকোর্টের রায় বাতিলের দাবিতে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ও সনাতন ধর্মালম্বীদের অন্যতম প্রধান উৎসব রথযাত্রার কারণে চট্টগ্রাম নগরীতে সৃষ্ট তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়েন নগরবাসী।
রোববার (৭ জুলাই) দুপুর থেকেই রথযাত্রার অনুষ্ঠান শুরু হয়। রথযাত্রার কারণে নগরীর নিউমার্কেট, চকবাজার, প্রবর্তক, কাজির দেউড়ি, জামালখান, চেরাগী পাহাড়, আন্দরকিল্লা মোড়, ওয়াসা ও লালদিঘীর পাড় এলাকায় তীব্র যানজট ছিল।
এদিন বিকেল চারটার দিকে ষোলশহর স্টেশন থেকে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে মিছিল শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এর আগে বিকেল সোয়া তিনটায় ষোলশহর স্টেশন এলাকায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা জড়ো হন। মিছিলের সময় পুলিশ তাদের বাধা দিলেও শিক্ষার্থীরা সেটা অমান্য করেই মিছিল নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যায়। ৪টা ২০ মিনিটে মিছিলটি নগরীর দুই নম্বর গেইট এলাকায় আসলে সেখানেই বসে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। কিছুক্ষণ পরপর সেখানে আরও শিক্ষার্থী জড়ো হতে থাকেন।
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচির কারণে নগরীর দুই নম্বর গেইট, জিইসি, মুরাদপুর, ষোলশহর এলাকার গুরুত্বপূর্ণ মোড় অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। তীব্র গরম ও যানজটের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে অনেক যাত্রীকে গাড়ি থেকে নেমে হেঁটেও গন্তব্যের দিকে চলে যেতে দেখা গেছে।
এসময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সেখানে নিয়োজিত থাকলেও তাদেরকে নীরব থাকতে দেখা যায়। বিকেল ৫টা ৫৪ মিনিটে শিক্ষার্থীরা তাদের অবস্থান পরিবর্তন করে মিছিল নিয়ে লালখান বাজার এলাকায় গিয়ে সড়কে বসে অবস্থান নেন। ৭টা ২০ মিনিটে শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে অবরোধ তুলে মিছিল নিয়ে আবারও দুই নম্বর গেইট এলাকায় যান। সেখানেই কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন তারা।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। এতে চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি কলেজ ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘মেধা না কোটা, মেধা মেধা, ১৮’র হাতিয়ার গর্জে উঠো আরেকবার, দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক প্রভৃতি বলে স্লোগান দিচ্ছিলেন।
আন্দোলনের সমন্বয়কারী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোটা আমাদের মতো সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য অভিশাপ। আমরা সবাই বাংলাদেশের সন্তান। কোটা ব্যবস্থার মাধ্যেমে আমাদের মাঝে বৈষম্য সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে। চাকরিতে একজন শিক্ষার্থী তার মেধা দিয়ে আসবে। মেধাবীরাই যদি চাকরিতে সুযোগ না পায় তাহলে দেশ কীভাবে সামনে এগিয়ে যাবে। কোটা মেধাবীদের বঞ্চিত করার একটি কৌশল। কোটা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।’
জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা সারাবাংলাকে বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বিকেল চারটার দিকে দুই নম্বর গেইট এলাকার রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এরপর লালখান বাজার এলাকায় মিছিল নিয়ে গিয়ে সেখানেও রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। শান্তিপূর্ণ ভাবেই তারা তাদের কর্মসূচি পালন করেছে। রথযাত্রা ও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচির কারণে একটু যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণ মানুষের সার্বিক নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত ছিল।’
এর আগে, শুক্রবার (৫ জুলাই) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের দাবিতে তাদের ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জন করেন।
শিক্ষার্থীদের ৪ দফা দাবিগুলো হলো— ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে; ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে, তবে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করে কোটা রাখা যেতে পারে; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না; কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে; দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
সারাবাংলা/আইসি/এমও
অবরোধ চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম বিশ্বদ্যালয় জনদুর্ভোগ টপ নিউজ রথযাত্রা