খুলনায় বিশুদ্ধ পানি সংকটে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দারা
৮ জুলাই ২০২৪ ০৯:৪৭
খুলনা: বিশুদ্ধ পানির সংকটে ভুগছে খুলনার রূপসা উপজেলার ৩নং নৈহাটি ইউনিয়নের সামন্তসেনা আশ্রয়ণ প্রকল্পের সবুজ ঘরের আশ্রিত বাসিন্দারা। দূর থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করে আনতে হয় এখানকার বসবাসকারীদের। এতে প্রতিনিয়ত চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন আশ্রয়ণের বাসিন্দারা।
সরেজমিন আশ্রয়ণ প্রকল্প ঘুরে ও বসবাসকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে সারাদেশের মতো আঠারোবেঁকি নদীর তীরে গৃহ ও ভূমিহীন ৩৩ পরিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের ঘর পেয়েছেন। বর্তমানে সেখানে বসবাস করছে ২৫টি পরিবার। বাকি ঘরের মালিক ভেতর মালামাল রাখলেও, তারা ঘরগুলোতে থাকে না। সেগুলোর বাইরে থেকে তালা ঝুলছে। মাসে একদিন এসে ঘর পরিষ্কার করে বাসিন্দারা চলে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এরইমধ্যে বেশ কয়েকটি ঘরের দেয়ালে ফাটলও দেখা দিয়েছে।
আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের জন্য ৩টি নলকূপ স্থাপন করা হলেও বর্তমানে ২টি নলকূপ অকেজো হয়ে পড়ে আছে। বাকি ১টি নলকূপে নামমাত্র পানি উঠলেও পানিতে প্রচুর আয়রন থাকায় তা খাওয়ার অনুপযোগী। ফলে খাবার ও ব্যবহারের পানির সংকটে ভুগছেন বসবাসকারীরা।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী মেরিনা বেগম বলেন, ‘তিন বছর ধরে এখানে বসবাস করছি। এখানে পানির খুব সমস্যা রয়েছে। তিনটি নলকূপ থেকে ২টি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। একটি নলকূপের পানি আমরা কোনোরকম ব্যবহার করতে পারি। এই পানি লবণ এবং প্রচুর আয়রন রয়েছে। খেতে গেলে বমি আসে। আমরা এখানকার নলকূপের পানি পান করতে পারি না।’
এখানে কতগুলো ঘর খালি আছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘৭-৮টা ঘর খালি আছে। ওই ঘর গুলোতে কোন লোকজন থাকে না। আমি ৫নং ঘরে বসবাস করি। আমার পাশের ৬ ও ৭ নং ঘর খালি আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওইসব ঘরের বাসিন্দাদের মাসে একদিন সকালে এসে ঘর-বারান্দা পরিষ্কার করে বিকালে চলে যায়। আমাদের খাবার পানি বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ভেতরের নলকূপের পানি আমরা থালা-বাসন ধোয়ার কাজে ব্যবহার করি। প্রায় ১ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বিশুদ্ধ খাবার পানি সংগ্রহ করে থাকি।’
আশ্রয়ণ প্রকল্পের আরেক বসিন্দা আজম খান বলেন, ‘এখানে নলকূপের পানির অবস্থা খুব খারাপ। আধা ঘণ্টার কলসে পানি রেখে দিলে তাতে প্রচুর আয়রন জমা হয়। গন্ধ বের হওয়ায় এ পানিতে খাওয়ার অযোগ্য। আমরা এই সমস্যা নিয়ে অনেক জায়গায় গিয়েছি। তবে আশ্বাস পেয়েছি, সমস্যার সমাধান পাইনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যিনি দায়িত্বে আছেন, তার কাছে আমাদের একটাই আবেদন ঘর প্রতি যেন আমাদের একটি করে ড্রাম দেওয়া হয়। তাহলে আমরা বৃষ্টির পানি ধরে খেতে পারলেও অনেক রোগব্যাধি থেকে মুক্তি পাবো।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখানে চলাচলের জন্য কোন পাকা সড়ক নেই পুরোটাই মাটির কাঁচা রাস্তা। যে কারণে বর্ষার সময় আমাদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। এখানে যদি কোন মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাহলে তাকে পরিবহন করে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়ার মতো কোন রাস্তা নেই। আমাদের একটি পাকা সড়কের প্রয়োজন।’
নৈহাটি ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য শেখ মাসুম বলেন, ‘আমার নির্বাচিত ওয়ার্ডে অবস্থিত আশ্রয়ণ প্রকল্পে সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। বিষয়টি এমপি মহাদয়কে জানানো হয়েছে। সেখানে টিউবওয়েলে কোনো কাজ হবে না। উনি বলেছে অচিরেই পানির ট্যাংকির ব্যবস্থা করা হবে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মানুষসহ এলাকাবাসীর চলাচলের জন্য রাস্তাটি দ্রুত সময়ের মধ্যে সংস্কার করা হবে।’
রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কোহিনুর জাহান বলেন, ‘পানির সমস্যার বিষয়টি জনস্বাস্থ্য অফিস দেখে থাকে। এই মুহূর্তে আমি কিছু বলতে পারবো না। কারণ এসব তথ্য জনস্বাস্থ্যর কাছে থাকে। ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের বসবাসকারীরা তাদের সমস্যাগুলো আমাকে লিখিতভাবে জানালে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।’
সারাবাংলা/এমও