কোটা নিয়ে আন্দোলন না করাই উচিত: অ্যাটর্নি জেনারেল
৮ জুলাই ২০২৪ ১৫:০৭
ঢাকা: সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন না করাই উচিত বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
সোমবার (৮ জুলাই) অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘আদালত আদেশে দিয়েছেন, সেই আদেশের বিরুদ্ধে সরকার আপিল বিভাগে গিয়েছে। এই মুহূর্তে এই ধরনের আদালতের প্রতি ওনাদের (শিক্ষার্থীদের) আন্দোলনটা আমি মনে করি, উনাদের না করাই উচিত হবে। আমি বলব আদালতে যে বিষয়টা বিচারাধীন, সেই বিষয়টা রাজপথে না আনা, কারণ এটা আদালতে তো আছেই, বিচারটা হচ্ছে, হবে; সেই ক্ষেত্রে উনাদের আমি একটু ধৈর্য ধরতে অনুরোধ করব। আমি মনে করি আন্দোলনটা না করাই ভালো।’
তিনি আরও বলেন, ‘আগামী বৃহস্পতিবার এ বিষয়টি আবার শুনানির জন্য আসবে। আমরা বুধবারও যদি পূর্ণাঙ্গ রায় পাই তাহলেও সিপি (নিয়মিত আপিল) করব।’
এর আগে, গত ৪ জুলাই সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায় স্থগিত করেন আপিল বিভাগ। ওইদিন হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের ওপর শুনানি হয়নি।
রিট আবেদনকারী পক্ষের আবেদনে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির আপিল বেঞ্চ আবেদনটির শুনানি ‘নট টুডে’ আজ নয় বলে আদেশ দেন। তবে রাষ্ট্রপক্ষকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত লিভ টু আপিল করতে বলেছেন সর্বোচ্চ আদালত।
গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
এরপর ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। এবং গত ৯ জুন চেম্বার জজ আদালত এ বিষয়ে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করেন। আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন।
এই রায়ের পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা হয়। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ হয়। এরপর রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
এর আগে কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করা হয়। তারও আগে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা রয়েছে ১০ শতাংশসহ আরও কিছু সংখ্যক কোটা বিদ্যমান ছিল।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা থেকে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর নবম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে সব ধরনের কোটা বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করা হয়। সেখানে বলা হয়েছিল, ৯ম গ্রেড (পূর্বতন ১ম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেড (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা তালিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। ওই পদসমূহে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলো।
ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষার, মো. শিবলী ফোরকান, এস, এম ফোয়ায়েল আহমেদ, মো. রবিউল ইসলাম, মো. আল ফাহিম, অনুকূল চন্দ্র সরকার ও মো. মাহবুব আলম ২০২১ সালের জুন মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।
রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসির) চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিবকে বিবাদী করা হয়।
ওই রিটের শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। রুলে সরকারি চাকরিতে ৯ম গ্রেড থেকে ১৩ম গ্রেড পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে জারি করা পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি নতুন নয়। স্বাধীনতার পর নির্বাহী আদেশে সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি চালু করা হয়। ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত ২০ শতাংশ পদ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ করা হতো। বাকি পদ কোটায় নিয়োগ হতো। ১৯৭৬ সালে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ৪০ শতাংশে বাড়ানো হয়। পরে মেধায় নিয়োগের হার আরও কিছু বাড়ানো হয়।
২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা (পরে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনি) কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা এবং ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা। এ ছাড়া ১ শতাংশ পদ প্রতিবন্ধী প্রার্থীদের দিয়ে পূরণের নিয়ম চালু হয়। ওই বছর কোটা সংস্কার করে ১০ শতাংশ করার দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে আন্দোলনে নেমেছিলেন। আন্দোলনের মুখে একপর্যায়ে সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে পুরো কোটাব্যবস্থাই বাতিল করে। ওই বছরের ৪ অক্টোবর কোটা বাতিলবিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
পরে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান রিট করেন। ৫ জুন এই রিটের রায়ে পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়।
সারাবাংলা/কেআইএফ/এমও