জাতিসংঘের সহায়তায় সম্ভব রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন
৮ জুলাই ২০২৪ ২০:৪৮
ঢাকা: বাংলাদেশের ভূখণ্ডে বহু বছর ধরে রোহিঙ্গারা বসবাস করে আসছে। বছরের পর বছর বাস করার ফলে সেখানে রোহিঙ্গাদের প্রতিটি পরিবারে একাধিক সন্তানের জন্ম হচ্ছে। এতে বাড়তি চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানকার প্রশাসন।
রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর নানারকম সমস্যা দেখা দিয়েছে। একদিকে আবাদি জমি হারিয়েছে, অন্য দিকে ধ্বংস করা হয়েছে বনভূমি। সবচেয়ে বড় সমস্যা দেখা দিয়েছে, বাংলাদেশের কক্সবাজার অঞ্চলে রোহিঙ্গাদের পরিবারে জন্ম নেওয়া শিশুরা কোন জাতির পরিচয়ে বড় হবে। তারা কি বাংলাদেশি নাকি মিয়ানমারের নাগরিক? এ নিয়ে বিশাল সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বাংলাদেশকে।
রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্মহার বন্ধ করা যাচ্ছে না। কিন্তু এত এত রোহিঙ্গা শিশু একদিকে জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক আবার বাংলাদেশ কোন স্বার্থে, কী কারণে তাদের নাগরিকত্ব দেবে তা নিয়ে বিপাকে বাংলাদেশ।
এর চেয়ে সবচেয়ে ভালো হয়, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন করা। মিয়ানমারের নাগরিকদের ফেরত পাঠানোই হবে সবচেয়ে ভালো উদ্যোগ। কিন্তু বাংলাদেশ একা তা করতে পারছে না। বিশ্লেষকদের মতে, একমাত্র জাতিসংঘই পারে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করাতে। এক্ষেত্রে মিয়ানমারকে কঠিন চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে এটি রাজি করানো যেতে পারে।
তবে জাতিসংঘ একা হয়তো সে কাজটি করতে চাইবে না। সেক্ষেত্রে জাতিসংঘের মাধ্যমে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্র প্রধানদের দিয়ে আন্তর্জাতিক নিষেধাঙ্গা এবং কুটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক রোজানা রশিদ বলেন, ‘জাতিসংঘের ভূমিকা এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বাংলাদেশের সামনে এটি বড় একটি সুযোগ ।’
‘জাতিসংঘ হচ্ছে এমন একটি জায়গা, একমাত্র যে সংগঠন যারা মিয়ানমারকে রাজি করাতে পারে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন এবং নাগরিকত্বের ব্যাপারে। যদিও মিয়ানমার কাউকেই পরোয়া করছে না। কিন্তু জাতিসংঘের সদস্য হিসেবে তার একধরনের দায়বদ্ধতা আছে।’
‘বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন লেভেলে, এবং এটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যে জাতিসংঘের মাধ্যমে জিনিসটা সমাধানের চেষ্টা করা’ বলেন ঢাবির শিক্ষক রোজানা রশিদ।
২০১৮ সালে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা বাংলাদেশ সফরকালে রোহিঙ্গা এলাকা পরিদর্শন করেছিলেন। ঢাকা থেকে ফিরে গিয়ে তারা আলোচনা করেছিল। বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘ। তারপরও মিয়ানমারের ওপর প্রবোল চাপ দেওয়া সম্ভব হয়নি। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আরও শক্ত ভূমিকা পালন করে লেগে থাকা উচিত ছিল। এক্ষেত্রে আমাদের কিছুটা ব্যত্যয় ঘটেছে বলে মনে করেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন।
মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যু বছরের পর বছর সমাধান করতে না পারলে সামাজিক নিরাপত্তার অভাব দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে কক্সবাজার এলাকার গন্ডি পেরিয়ে পুরো দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। তখন নানান ধরণের সঙ্কট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব না হলে রোহিঙ্গা বিপুল জনগোষ্ঠীর চাপ বাংলাদেশকে দীর্ঘদিনের ভোগান্তিতে ফেলতে পারে। কাজেই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে এখন বাংলাদেশকেই বিশ্বনেতাদের কাছে জোর প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
সারাবাংলা/ইউজে/একে