Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘নিখোঁজের তথ্য নিছক গুজব, অলমোস্ট সবাই ফেরত এসেছে’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৮ জুলাই ২০২৪ ১৯:৫৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্রমাগতভাবে প্রচার হওয়া নিখোঁজের তথ্য ‘নিছক গুজব’ বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম।

তিনি বলেছেন, প্রেমঘটিত কিংবা পরিবারের সদস্যদের ওপর রাগ-অভিমান করে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনাকে নিখোঁজ বলে প্রচার করা হচ্ছে।

সোমবার (৮ জুলাই) সকালে নগরীর দামপাড়া পুলিশ লাইনের মাল্টিপারপাস শেডে ‘মিট দ্য প্রেস’ অনুষ্ঠানে সিএমপির নতুন কমিশনার সাইফুল ইসলাম প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের সামনে আসেন। সেখানে তিনি সাম্প্রতিক সময়ে ছড়িয়ে পড়া নিখোঁজের বিষয় নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে পড়েন।

জবাবে সিএমপি কমিশনার বলেন, ‘পুলিশ সদর দফতর থেকেও গুজবের বিষয়ে বলা হয়েছে। আমি যোগদানের পরই এটা নিয়ে কাজ করেছি। নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, এটা আসলে সম্পূর্ণ গুজব। যাদের নিখোঁজের কথা বলা হচ্ছে, আমরা প্রত্যেকটির বিষয়ে খবর নিয়েছি, তাদের অলমোস্ট সবাই ফেরত এসেছে।’

একই বিষয়ে পরে সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘কারও বয়স কম, কেউ আবার উঠতি বয়সের। নানা কারণে হয়তো ঘর থেকে বের হয়ে কয়েকঘণ্টা বা একদিন আসেনি। প্রেমঘটিত কিংবা পরিবারের কোনো সদস্যের ওপর রাগ-অভিমান করে ঘর থেকে বের হয়ে গেছে। এগুলোকে নিখোঁজ বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে। এগুলো নিছকই গুজব। অধিকাংশ ঘটনায় থানায় কিংবা পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগও করা হয়নি। এদের মধ্যে অলমোস্ট সবাই ফেরত এসেছে।’

নগর পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো নিখোঁজ সংক্রান্ত ১৭টি ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রেমঘটিত অভিমান থেকে ঘর ছাড়ার ঘটনা আটটি। পারিবারিক কারণে পাঁচজন ঘর ছেড়েছেন। ছোটখাট আরও বিচ্ছিন্ন কারণে ঘর ছাড়েন চারজন। তারা সবাই পরে আবার নিজ থেকেই ফেরত এসেছেন। মূলত চারটি ফেসবুক পেইজ- ডেসপারেটলি সিকিং চট্টগ্রাম, হেল্প ইন চট্টগ্রাম, অক্সিজেন মোড়, হেল্পলাইন চট্টগ্রাম’ নামের এসব পেইজ থেকে নিখোঁজ কিংবা হারিয়ে যাওয়ার খবর ছড়ানো হচ্ছে।

সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) আব্দুল মান্নান মিয়া সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, এসব পেইজের এডমিনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে থানায় জিডি (সাধারণ ডায়েরি) না হলে কোনো নিখোঁজের খবর ফেসবুকে প্রচার করা হবে না বলে এডমিনরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এদিকে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে সিএমপি কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেছেন, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) কোনো ‘অপকর্মের’ দায় তিনি নেবেন না। ‘দুষ্টু গোয়ালের চেয়ে শূন্য গোয়াল ভালো’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

‘কোনো থানার ওসি আমার আত্মীয় না। কাজে অসঙ্গতির জবাব তাদেরকেই দিতে হবে। কোনো প্রটোকল-গার্ড ছাড়াই বিভিন্ন থানাগুলোতে আমি পরিদর্শনে যাবো। আমি দুষ্টু গরু রাখবো না, প্রয়োজনে আমি শূন্য গোয়াল রাখবো।’

প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ‘ব্যক্তির দায় কোনো সংস্থা নেবে না। আমি অন্যায় করলে সেই দায়দায়িত্ব আমার, এটা পুলিশ বাহিনীর নয়।’

সিএমপি কার্যালয়ে সাধারণের প্রবেশাধিকার কার্যত ‘নিষিদ্ধ’ করে রাখা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, ‘আমার অফিসটা থাকবে ওপেন, এখানে কোনো দরজা থাকবে না। সব ডিসিদের (উপকমিশনার) অফিসেও দরজা থাকবে ওপেন। এ পাঁচটা জায়গা আমি ওপেন করে দিচ্ছি এখনই। যখনই মানুষ আসবে, তখনই দেখা হবে, যদি আমি অফিসে থাকি। যে ধরনের সহযোগিতা মানুষ চায়, আমি কমিশনার হিসেবে নিশ্চয়তা দিচ্ছি, সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে। গেইটে ঢোকার ক্ষেত্রে কী কী সমস্যা, সেটা আমি দেখবো, দরকার হলে গেটই রাখবো না।’

‘আমার যে কার্যালয়, সে জায়গাটা যেন ওপেন টু অল হয়, এটা আমি করবো। শুধু সাংবাদিক নয়, সব মানুষ যেন আমার কাছে আসতে পারে, সবার কথা যেন আমি শুনতে পারি, সেটা আমি অবশ্যই করবো। কারও বক্তব্য যদি আমার এখতিয়ারের মধ্যে না-ও হয়, তা-ও আমি তার কথা শুনতে চাই।’

প্রসঙ্গক্রমে বলেন, ‘আমি মানুষ, আমার ভুল হবে। কিন্তু ইনটেনশনাল কোনো ভুল আমার থাকবে না।’

কিশোর অপরাধ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, ‘কিশোর গ্যাং নিয়ে আমি কাজ শুরু করেছি। আমি বিভিন্ন কলেজে যাব। কলেজ-ইউনিভার্সিটিতে গিয়ে প্রোগ্রাম করবো। দু’য়েকটা প্রোগ্রাম করার পরে কলেজের সামনে যেসব ইভটিজার থাকে, তারা আর থাকবে না। অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ, আপনার সন্তান কোথায় যায়, একটু দেখেন। সে কি সারাক্ষণ বাসায় থাকবে ? সে কোথায় যায়, কার সঙ্গে মিশে, তাকে সঙ্গ কারা দেয়, সেগুলো যদি পরিবারের পক্ষ থেকে একটু নজরে রাখা হয়, তাহলে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য কমে যাবে। সে কোনো অপকর্মের সঙ্গে জড়িত কি না, একটু দেখেন। আমি তাকে থানায় নিয়ে গেলে তো তার ক্যারিয়ার নষ্ট হয়ে যাবে।’

সভায় এক সাংবাদিক কমিউনিটি পুলিশ কমিটিতে থাকাদের অনেকেই বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত এবং কিশোর গ্যাংসহ নানা অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ করেন। এর জবাবে সিএমপি কমিশনার সাইফুল বলেন, ‘আমি কমিউনিটি ও বিট পুলিশের সাথে যারা সম্পৃক্ত, তাদের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। কমিটির সদস্য কারা আছেন, সেটা যাচাইবাছাই করার নির্দেশ দিয়েছি। বিতর্কিত কেউ এখানে থাকবে না। আমি ভালো মানুষদের কমিটিতে নিয়ে আসতে চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন থেকে কোনো থানায় ওপেন ডে-হাউস অনুষ্ঠিত হবে না। প্রতিটি থানায় চারটি করে ওয়ার্ড আছে। এলাকার লোকজন থানায় এসে কেন কথা বলবে? পুলিশ তাদের কাছে যাবে। তারা তাদের কথা পুলিশের কাছে বলবে।’

ছিনতাইয়ের ঘটনায় থানায় মামলা না নেয়ার অভিযোগও উঠে আসে সাংবাদিকদের বক্তব্যে। জবাবে তিনি বলেন, ‘ছিনতাই ঘটলে অবশ্যই মামলা নিতে হবে। আমি চাই মামলা বাড়ুক, মামলা পাঁচশ হলেও আমার কোনো সমস্যা নেই। মামলা হলে রেকর্ড থাকে। তাহলে কাজের বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়।’

মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত রাখা হবে বলে জানান সিএমপি কমিশনার মো. সাইফুল ইসলাম।

গত ৪ জুলাই সিএমপির ৩২ তম কমিশনার হিসেবে যোগ দেন মো. সাইফুল ইসলাম। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ১৯৯৫ সালে স্নাতকোত্তর করে ২০০১ সালে ২০ তম বিসিএস’র মাধ্যমে তিনি সহকারি পুলিশ সুপার পদে যোগ দেন। এর আগেও তিনি সিএমপিতে উপকমিশনার হিসেবে এবং চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন, চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি সালাউদ্দিন মো. রেজা ও সাধারণ সম্পাদক দেবদুলাল ভৌমিক, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি তপন চক্রবর্তীসহ বিভিন্ন সাংবাদিকরা।

সারাবাংলা/আরডি/এনইউ

টপ নিউজ সিএমপি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

ধানমন্ডি থেকে গ্রেফতার শাজাহান খান
৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ০২:৪৫

সম্পর্কিত খবর