‘আমি মতিউর নই যে, ছাগলের জন্য ছেলেকে অস্বীকার করব’
৮ জুলাই ২০২৪ ২০:০৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সম্প্রতি চট্টগ্রাম নগরীতে জুয়াবিরোধী পুলিশি অভিযানে নিজের ঘনিষ্ঠ দুই আওয়ামী লীগ নেতাকে গ্রেফতারের বিষয়ে জানাতে সংবাদ সম্মেলনে এসেছেন আলোচিত স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ড কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মোহাম্মদ বেলাল।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘আমি মতিউর নই যে, ছাগলের জন্য ছেলেকে অস্বীকার করব। তারা আমার ছেলেবেলার বন্ধু।’
সোমবার (৮ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। এর আগে, গত ২ জুলাই (মঙ্গলবার) রাতে নগরীর ওয়াসা মোড়ের মুনতাসির টাওয়ারের সপ্তম তলায় জুয়ার আস্তানায় অভিযান চালায় খুলশী থানা পুলিশ। অভিযানে জুয়া খেলার সরঞ্জাম ছাড়াও জব্দ করা হয় নগদ টাকা। এ সময় ৩২ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
গ্রেফতার ৩২ জনের মধ্যে লালখানবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান এবং সদস্য বিশ্বজিৎ চৌধুরী বিশুও ছিলেন। তার উভয়ই কাউন্সিলর আবুল হাসনাত বেলালের অনুসারী। মিজানুর রহমান দলের পরিচয় ব্যবহার করে জুয়ার আসরটি পরিচালনা করতেন বলে অভিযোগ আছে। এর আগেও বেশ কয়েকবার অভিযান চালিয়ে ক্লাবটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হয়নি। ঘটনার পরপরই লালখানবাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের ডাকা এক জরুরি সভায় অসামাজিক কার্যকলাপে (জুয়ার ব্যবসা) জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের বহিষ্কার করা হয়।
এদিকে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের (সিএমপি) সদর দফতরের পাশেই জুয়ার আসর চললেও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন তুলেছেন কাউন্সিলর আবুল হাসনাত মোহাম্মদ বেলাল। সংবাদ সম্মেলনে আবুল হাসনাত বেলাল বলেন, ‘তারা আমার বন্ধু। কে কার টাকায় মদ খাবে, না জুয়া খেলবে সেটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাই বলে এখানে আমার নাম আসার কোনো যৌক্তিকতা আমি দেখি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ক্লাবটি আবার চালু হলে আমরা আন্দোলন করব। ক্লাবটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করার জন্য আমরা প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি বারবার। ২০০ গজের ভেতর সিএমপির প্রধান অফিস। আমার প্রশ্ন তো প্রশাসনের কাছে। আমি একজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। এখন ক্লাব বন্ধ করতে গেলে মানুষ বলবে চাঁদা দেয়নি বলে ক্লাব বন্ধ করে দিচ্ছি। করতে গেলেও বিপদ। না করলেও বিপদ।’
‘ক্লাবটি ঘিরে সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে। এখানে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমার নাম জড়ানো হচ্ছে। এ ক্লাবের উপর একটি হোটেল আছে। সেখানে অসামাজিক কার্যকলাপ চলতো। জেলা প্রশাসন গিয়ে সেটা সিলগালা করে দিয়েছে। এ হোটেল নিয়ে তো আমার কোনো নাম আসেনি। আমার কোনো বন্ধুও সে হোটেলে যায়নি’- বলেন কাউন্সিলর বেলাল।
তার দাবি, ‘অনেক জায়গায় সিডিএর রুলস না মেনে বিল্ডিং হচ্ছে। সিডিএকে ডেকে এনে আমি কাজ বন্ধ করিয়েছি। এরপর তারা ম্যানেজ করে আবার কাজ শুরু করছে। তখন মানুষ মনে করেছে আমি চাঁদা নিয়ে তাদের কাজ করার সুযোগ দিচ্ছি।’
সামনে নির্বাচনকে ঘিরে সুনাম ক্ষুন্ন করতেই গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন আবুল হাসনাত মোহাম্মদ বেলাল। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিহিংসার শিকার। লালখান বাজারকে স্থিতিশীল রাখলে আমার সুনাম বাড়বে। তাই আমার সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য এসব গুজব ছড়ানো হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এগুলো করার উদ্দেশ্য হচ্ছে, সামনের নির্বাচনের আগে যাতে আমার ইমেজ নষ্ট করা যায়। আমার ওয়ার্ডের মানুষ শান্তিপূর্ণ লালখান বাজার চায়। তাই লালখান বাজারকে শান্তিপূর্ণ রাখতে যতটুকু ত্যাগ করা দরকার আমি করব।’
সাংবাদিকদের নিউজ করতে হুমকি দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি জানি জুয়ার নিউজ আপনারা পাওয়ার আগেই আপনাদের পাঠানো হয়েছে। আপনাদের পুশ করা হয়েছে। অপরিচিত নম্বর থেকে সাংবাদিকদেরকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। বিভিন্নজনকে প্রেশার দেওয়া হয়েছে আমার নাম বলার জন্য। আমার কাছে সবকিছুর প্রমাণ আছে। স্কিনশট আছে। ওই নম্বরগুলো সংগ্রহ করে আমি কল দিয়েছি। কিন্তু সেগুলো আমি বন্ধ পেয়েছি।’
গ্রেফতার আসামিদের ছাড়াতে স্থানীয় মহিলা কাউন্সিলর আনজুমান আরা থানায় গিয়েছিলেন কেন? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মহিলা কাউন্সিলর কেন থানায় গেছে সেটা তার ব্যাপার। আপনারা উনাকে নিয়ে নিউজ করেননি। আমাকে নিয়ে করেছেন। আমরা আলাদা আলাদাভাবে মেয়র সাহেবকে কৈফিয়ত দিই। উনি কেন গেছেন সেটা তাকে জিজ্ঞাসা করেন।’
বেলাল বলেন, ‘আমি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগকে সাধুবাদ জানাই যে, তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু সেখানে মাদক ও হত্যা মামলার আসামিরাও আছে। তাদের ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার না? আমি যদি শুদ্ধ না হই, তাহলে অন্য কাউকে অশুদ্ধ বলার ক্ষমতা আমার নেই।’
ক্লাব বন্ধ করতে আগে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কি না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এ রকমের পদক্ষেপ আগে নিইনি। তবে প্রতিটিবারই আমি বলেছি, এটা বন্ধ করে দেওয়া উচিত। প্রশাসনের নাকের ডগায় এটা কিভাবে চলে? তবে আমি দায়মুক্তি নিয়েই বলতে চাই, এ ধরণের কোনো অপকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত না। আমাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে জড়ানো হচ্ছে।’
সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম