Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘দাবি নির্বাহী বিভাগের কাছে, পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে’

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট
১০ জুলাই ২০২৪ ১৩:২৯

কোটাবিরোধী আন্দোলনে সকাল থেকে ঢাকার বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করেছেন আন্দোলনকারীরা। ছবি: সারাবাংলা

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা নিয়ে হাইকোর্টের রায়ে স্থিতাবস্থা জারির প্রতিক্রিয়ায় কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা জানিয়েছেন, কোটাব্যবস্থা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। তারা বলছেন, তারা এ বিষয়ে নির্বাহী বিভাগের কাছ থেকে সিদ্ধান্ত চান।

নবম থেকে ১৩তম গ্রেড (আগের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিল করে সরকারের পরিপত্রের বিরুদ্ধে করা রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রায়ে বলেছিলেন, এসব চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকবে। এ রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেছিল আপিল বিভাগে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও আবেদন করা হয়েছিল।

বিজ্ঞাপন

বুধবার (১০ জুলাই) দুই আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের ওই রায়ের ওপর চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা জারি করেছেন। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ জানান, চার সপ্তাহ পর পূর্ণাঙ্গ রায় ঘোষণা করা হবে।

আরও পড়ুন-

এর আগে বুধবার সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন সড়ক অবরোধ করেন কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা। সাড়ে ১১টার দিকেই অবরোধ করা হয় আন্দোলনের কেন্দ্র শাহবাগ চত্বর। আপিল বিভাগের স্থিতাবস্থার আদেশের পরও তারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

আপিল বিভাগের রায়ের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আফিজ মাহমুদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘রায়ের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আমরা দাবি করেছি রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের কাছে। নির্বাহী বিভাগ যদি আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসে কিংবা তারা কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের আশ্বাস দেয়, সেটি আমরা আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণের জন্য বিবেচনায় নেব।’

বিজ্ঞাপন

এর আগে আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা জানিয়েছিলেন, কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল করে আদালত রায় দিলে সেটিকে তারা স্বাগত জানাবেন। তবে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির সরকারি চাকরিতেও কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের আগ পর্যন্ত তারা আন্দোলন থেকে সরবেন না।

কোটাবিরোধী আন্দোলনে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে ঢাকার বিভিন্ন এলাকা। ছবি: সারাবাংলা

‘কোটা পুনর্বহাল চলবে না’ নামের ফেসবুকগ্রুপে দেওয়া এক ভিডিওবার্তায় আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, ‘নির্বাহী বিভাগ থেকে কমিশন গঠনের মাধ্যমে কোটা পদ্ধতির স্থায়ী ও যৌক্তিক সমাধান করতে হবে।’

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা গত ১ জুলাই নতুন করে এই কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছেন। ওই দিন থেকেই কয়েক ঘণ্টার জন্য শাহবাগ অবরোধ করে আসছিলেন তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলন করছিলেন। ঢাকার বাইরেও সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে আসছিল এই আন্দোলন।

এর মধ্যে গত শনিবার ঘোষণা দিয়ে রোববার প্রথমবারের মতো ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচির ডাক দেন আন্দোলনকারীরা। এই কর্মসূচিতে দুপুর থেকে ঢাকার শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাবরেটরি, নিউমার্কেট, চানখাঁরপুল, সদরঘাটসহ দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ সব এলাকা অবরুদ্ধ করেন তারা। ওদিকে আগারগাঁওয়ের শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মূল সড়ক অবরোধ করেন। আন্দোলনে কার্যত ঢাকা স্থবির হয়ে পড়ে।

কোটাবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে চট্টগ্রামে রেলপথ অবরোধের মাধ্যমে বুধবারের বাংল ব্লকেড কর্মসূচি শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। ছবি: সারাাবাংলা

এরপর সোমবার টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ফের বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এ দিনও দুপুরের পর থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাবে গোটা ঢাকাতেই দেখা দেয় তীব্র যানজট। পরে মঙ্গলবার তারা অনলাইন-অফলাইনে গণসংযোগের পর বুধবার সকাল থেকে সারা দেশে বাংলা ব্লকেড কর্মসূচি শুরু করেছেন।

এর আগে ২০১৮ সালে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের মুখে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির (নবম থেকে ১৩তম গ্রেড) সরকারি চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিল করেছিল সরকার। ওই বছরের ৪ অক্টোবর এ সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

২০২১ সালে ওই পরিপত্র নিয়ে হাইকোর্টে রিট করেন কয়েকজন। শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট ওই পরিপত্রের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা অংশটি বাতিল করে দেন। ফলে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল হয়। গত ৫ জুন হাইকোর্টের এ রায়ের পর থেকেই ফের আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা।

এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিলের শুনানি নেওয়ার কথা ছিল আপিল বিভাগের। তবে সেদিন আপিল বিভাগ সে শুনানি নেননি। এক সপ্তাহ পর আজ শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের আদেশে চার সপ্তাহের স্থিতাবস্থা দিলেন আপিল বিভাগ।

আরও পড়ুন-

 

 

সারাবাংলা/আরআইআর/টিআর

আপিল বিভাগ কোটা বাতিলের পরিপত্র কোটা সংস্কার কোটাবিরোধী আন্দোলন কোটাব্যবস্থা হাইকোর্টের রায়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর