কোটার ‘স্থিতাবস্থা’ নিয়ে যা বলছেন আইনজীবীরা
১০ জুলাই ২০২৪ ১৮:২৭
ঢাকা: সরকারি চাকরিতে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডে) নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা (স্ট্যাটাসকো) জারি করেছেন আপিল বিভাগ। আগামী ৭ আগস্ট পর্যন্ত কোটার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে বলা হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ ও শিক্ষার্থীদের করা পৃথক আবেদনের শুনানি নিয়ে বুধবার (১০ জুলাই) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে দুই শিক্ষার্থীর পক্ষে আপিল বিভাগে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শাহ মঞ্জুরুল হক।
এদিন আইনজীবী সমিতিতে এক ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ‘হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগের স্ট্যাটাসকোর অর্থ হলো হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা থাকবে না। অর্থাৎ এই মুহূর্ত থেকে কোটা বাতিল বলে গণ্য হবে। আগামী ৭ আগস্ট এই বিষয়ে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানি হবে।’
অন্যদিকে রিটের পক্ষের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী বলেন, ‘স্ট্যাটাসকোর মানে হলো, যে অবস্থায় আছে, সে অবস্থায় থাকবে। অর্থাৎ হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আপিল বিভাগ কিন্তু হাইকোর্টের রায় স্থগিত করেননি। স্ট্যাটাসকো দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে ভুল ব্যাখ্যাও দেখা যাচ্ছে। নিয়োগের ক্ষেত্রে আপাতত কোটা অনুসরণ করতে হবে না।’
আরও পড়ুন-
- শাহবাগ অবরুদ্ধ
- স্থবির ঢাকা, অনড় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা
- চট্টগ্রামে রেলপথ অবরোধে শুরু ‘বাংলা ব্লকেড’
- মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহালের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা
- পাঁচ ঘণ্টা পর মহাসড়ক ছাড়লেন ইবির শিক্ষার্থীরা
- ‘নির্বাহী বিভাগের প্রতিশ্রুতি পেলে তবেই রাজপথ ছাড়ব’
- মিছিল-স্লোগানে বাংলা ব্লকেড শুরু, অবরুদ্ধ হচ্ছে ঢাকা
- কোটা আন্দোলন: ফের ‘ব্লকেড’ গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে
- মাঠ ছাড়েননি শিক্ষার্থীরা, পরদিনের কর্মসূচি ঘোষণা ৭টায়
- কোটা আন্দোলন: ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল যোগাযোগ বন্ধ
- ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন
- ‘দাবি নির্বাহী বিভাগের কাছে, পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে’
- বাংলা ব্লকেড: সকাল থেকে বন্ধ ফার্মগেট-আগারগাঁও-মিরপুরের রাস্তা
আপিল বিভাগ কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়ে পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে বলেছেন। দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টর এবং অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা তাদের ছাত্রছাত্রীদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে নিয়ে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন আপিল বিভাগ।
সর্বোচ্চ আদালত আরও বলেন, স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীরা চাইলে আইনজীবীর মাধ্যমে তাদের বক্তব্য এই আদালতের সামনে তুলে ধরতে পারেন। আদালত মূল আবেদন নিষ্পত্তির সময় তাদের বক্তব্য বিবেচনায় নেবেন।
এর আগে, আজ সকাল ১০টার দিকে আবেদনটি শুনানির জন্য উপস্থাপিত হয়। তখন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন জানান, এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন শুনানির জন্য সাড়ে ১১টায় সময় দেওয়া হয়েছে। দুটি আবেদন একসঙ্গে শুনানি হোক। এ জন্য তিনি সময় চান। তবে আদালত সময় নামঞ্জুর করে আজ বেলা সাড়ে ১১টায় রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের আবেদন শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, শিক্ষার্থীদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক শাহ মঞ্জুরুল হক শুনানি করেন। আর রিট আবেদনকারী পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী।
এর আগে, গত ৫ জুন সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে জারি করা পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই রায় ঘোষণা করেন।
হাইকোর্টের এই রায়ের পর থেকেই ফের আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয় কোটা নিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ হয়। এরপর ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত ৯ জুন চেম্বার আপিল বিভাগের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ বিষয়ে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য আজকের (৪ জুলাই) দিন নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। তবে আপিল বিভাগ আজ এ আবেদনের শুনানি নেননি। অর্থাৎ এ আবেদনের শুনানি পরে নেবেন এবং পরে আদেশ দেবেন।
২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে মোট ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এই কোটা পদ্ধতি সংস্কার করে সবধরনের কোটা ১০ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনার দাবিতে ওই বছরই আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের ব্যানারে ওই আন্দোলন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের মুখে ওই বছরের ৪ অক্টোবর পরিপত্র জারি করে সব ধরনের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটাব্যবস্থাই বাতিল করে সরকার।
ওই সময় ৩০ শতাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তান-নাতি-নাতনি কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা ও ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী কোটা চালু ছিল সরকারি চাকরিতে। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিধি-১ শাখা থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে নবম গ্রেড থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি নিয়োগে সব ধরনের কোটা বাতিল করা হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ৯ম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) ও ১০ম থেকে ১৩তম গ্রেড (আগের দ্বিতীয় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা তালিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। ওই পদগুলোতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হলো।
ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষার, মো. শিবলী ফোরকান, এস এম ফোয়ায়েল আহমেদ, মো. রবিউল ইসলাম, মো. আল ফাহিম, অনুকূল চন্দ্র সরকার ও মো. মাহবুব আলম ২০২১ সালের জুন মাসে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। রিটে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসির) চেয়ারম্যান, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিবকে বিবাদী করা হয়।
ওই রিটের শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুল জারি করেন। রুলে সরকারি চাকরিতে ৯ম গ্রেড থেকে ১৩ম গ্রেড পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও তাদের সন্তানদের ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত বাতিল করে জারি করা পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। ৫ জুন ওই রিটেরই রায়ে পরিপত্রের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোটা বাতিলের অংশটি অবৈধ ঘোষণা করা হয়।
এরপরই শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা আবার ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’র ব্যানারে নতুন করে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েই শিক্ষার্থীরা জুলাইয়ের প্রথম দিন থেকে সড়কে রয়েছেন।
আরও পড়ুন-
- চট্টগ্রামে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি শুরু
- তীব্র যানজট ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানীতে
- কোটাবিরোধীদের ‘বাংলা ব্লকেডে’ স্থবির ঢাকা
- চবি ক্যাম্পাসে ৩ ঘণ্টা হাঁটলেন কোটাবিরোধীরা
- মানুষ কীভাবে পোষ্য হয়?— প্রশ্ন ইবি শিক্ষার্থীদের
- কোটা আন্দোলনে উত্তাল রাবি, রেললাইন অবরোধ
- মঙ্গলবার গণসংযোগ, বুধবার ফের সারা দেশে অবরোধ
- আন্দোলনকারীদের কী বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর সেই প্রতিনিধি
- কোটাবিরোধী আন্দোলন: সরকারের সঙ্গে ‘আলোচনা’য় ৪ জন
- শুনানি নেননি আপিল বিভাগ, কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায় বহাল
- কোটা আন্দোলন—১৩ মিনিটের মৌন সমাবেশ বুয়েট শিক্ষার্থীদের
- শাহবাগ ছেড়েছেন আন্দোলনকারীরা, সোমবার ফের ‘বাংলা ব্লকেড’
- অবরুদ্ধ শাহবাগ— হাইকোর্টের কোটা পুনর্বহালে আদেশ বাতিলের দাবি
- বাংলা ব্লকেড: মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ ইবি শিক্ষার্থীদের
- রাবিতে কবিতা-গানে প্রতিবাদ কোটাবিরোধীদের, রেললাইন অবরোধের ঘোষণা
সারাবাংলা/কেআইএফ/পিটিএম