ভিপি নুরের আদালত অবমাননার রায় ১ আগস্ট
১১ জুলাই ২০২৪ ১৬:৫৭
ঢাকা: আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের বিষয়ে হাইকোর্টের রায় পিছিয়ে আগামী ১ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আজ রায়ের ধার্য দিনে ভিপি নুরের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন অসুস্থতার জন্য আসতে না পারায় তার পক্ষে সময় চাইলে আদালত তা মঞ্জুর করে ১ আগস্ট রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন।
আদালতে আজ ভিপি নুরের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
এর আগে, বিচারকদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর বক্তব্য দেওয়ার অভিযোগে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আবেদনের ওপর শুনানি শেষে। রায়ের জন্য ১১ জুলাই দিন ধার্য করেন হাইকোর্ট। গত ৩ জুলাই বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
সেদিন আদালতে ভিপি নুরের পক্ষে শুনানি করে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।
আদালতে উপস্থিত হয়ে তিনি আইনজীবীর মাধ্যমে নিঃশর্ত ক্ষমা চান। এরপর উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত রায়ের জন্য ১১ জুলাই দিন ধার্য করেন।
সেদিন শুনানির শুরুতেই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী বলেন, ‘আমরা নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছি। এ জন্য আজকে কোনো কনটেস্টে যেতে চাচ্ছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘নুরুল হক নুরের বিরুদ্ধে এবারই প্রথম আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হয়েছে। ভবিষ্যতে আদালত নিয়ে বক্তব্য দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি আরও সচেতন থাকবেন বলে আদালতের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করেছেন। আদালতে শুনানি শুরু হওয়ার আগেই নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। আমরা ক্ষমা প্রার্থনার দুটি আবেদন দিয়েছি।’
শুনানির এক পর্যায়ে বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি নুরুল হক নুরকে ডায়াসের কাছে ডেকে আনেন।
কোর্ট তাকে জিজ্ঞেস করেন আপনি কি ২৮ অক্টোবরের আগে বক্তব্য দিয়েছেন। না এরপর বক্তব্য দিয়েছেন। নুর বলেন- না এর পরে বক্তব্য দিয়েছি। তখন আদালত বলেন একজন সচেতন রাজনীতিবিদ হিসেবে এ রকম বক্তব্য দেওয়ার পর দিন গণমাধ্যমে সংশোধনী কেন দিলেন না।
নুরুল হক বলেন, ‘আমি ওই দিন জ্ঞাতসারে বক্তব্য দিইনি। আমার বক্তব্যের জন্য আমি অনুতপ্ত। গণতান্ত্রিক দেশে আইন-আদালত থাকতে হবে। আর আদালতের প্রতি আমার সব সময় শ্রদ্ধা আছে এবং তা ভবিষ্যতেও থাকবে।’
তখন আদালত নুরকে উদ্দেশ্য করে বলেন, একজন রাজনীতিবিদের কথায় কাজে সচেতনতা থাকা জরুরি। আদালত মর্যাদা রক্ষা সকল নাগরিকের দায়িত্ব। রাজনীতিবিদের কথায় উসকানি থাকলে তার বিরূপ প্রভাব সাধারণ মানুষ বা কর্মীর মধ্যে পৌঁছে যায়। এ বিষয়ে সবার সতর্ক থাকা দরকার।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কাজী মাইনুল হক আদালতকে বলেন, ‘উনি (নুর) আজ অনুতপ্ত হয়ে ক্ষমা চাচ্ছেন। তবে ওনার বক্তব্যের মাধ্যমে বিচার বিভাগের যে ক্ষতি হওয়ার তা হয়ে গেছে। উনি ক্ষমা চাইলেও ওনার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া সমাজে পড়েছে। তাই তার সাজা হওয়া প্রয়োজন। অন্তত মিনিমাম প্রতীকী হলেও একটা দণ্ড দেওয়া হোক। এটা রেকর্ড হিসেবে থাকুক। এতে সমাজে একটা বার্তা যাবে। রাষ্ট্রপক্ষ এটিই চাচ্ছে।’
গত বছরের ৭ ডিসেম্বর রাজধানীতে এক সমাবেশে আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছিলেন গণঅধিকার পরিষদের (একাংশ) সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।
নুরুল হকের দেওয়া বক্তব্য নিয়ে ৭ ডিসেম্বর একটি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এরপর নুরের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার একটি অভিযোগ প্রধান বিচারপতি বরাবর উপস্থাপন করা হলে প্রধান বিচারপতি বিষয়টি বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান।
এরপর স্বপ্রণোদিত হয়ে হাইকোর্ট গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর রুল জারি করে নুরকে তলব করেন। সে ধারাবাহিকতায় আজ চূড়ান্ত শুনানি শেষে রায়ের জন্য আগামী ১১ জুলাই দিন ধার্য করেছেন আদালত।
সারাবাংলা/কেআইএফ/একে