সোনামসজিদ বন্দরে ‘অনিয়ম-দুর্নীতি’, আমদানি কমে অর্ধেক
১৩ জুলাই ২০২৪ ০৮:১০
চাঁপাইনবাবগঞ্জ: সোনামসজিদ স্থলবন্দরের পানামা পোর্টে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। ফলে এই বন্দর দিয়ে ভারত থেকে পণ্য আমদানি ব্যাপক হারে কমেছে। এতে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার, হতাশ ব্যবসায়ীরা। কেউ কেউ অবশ্য এরই মধ্যে অন্যবন্দরে পাড়ি জমিয়েছে। কিন্তু পানামা কর্তৃপক্ষ বলেছে, পণ্য আমদানি কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ ডলার সংকট।
সরজমিনে পানামা পোর্টের আমদানি-রফতানিকারক ও পাথর ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পানামা পোর্টের মধ্যে পাথর লোড–আনলোড হয় না। লোড-আনলোড হয় পোর্টের বাইরে। কিন্তু তারপরও পানামা কর্তৃপক্ষকে লোড-আনলোড শ্রমিক চার্জ দিতে হয় আমদানিকারকদের।
জানা গেছে, পানামা আমদানি–রফতানিকারকদের কাছ থেকে গাড়ি লোডের জন্য শ্রমিক চার্জ বাবদ টনপ্রতি ৬৯ দশমিক ৬৯ এবং আনলোডের জন্য সমপরিমাণ টাকা আদায় করেন। যা ১৫ শতাংশ ভ্যাটসহ দাঁড়ায় ১৬০ দশমিক ২৮ টাকা। পরে অবশ্য লোড-আনলোডের জন্য শ্রমিক চার্জ বাবদ টনপ্রতি ২৬ টাকা করে মোট ৫২ টাকা ফেরত দেন। কিন্তু বাকি ১০৮ দশমিক ২৮ টাকার কোনো খোঁজ পাওয়া যায় না।
গত ১০ মার্চের শ্রমিক চার্জের একটি বিলের কপিতে দেখা গেছে, ৫৪০ মেট্রিক টন পাথরের শ্রমিক চার্জ নিয়েছেন ভ্যাটসহ ৮৬ হাজার ৫৫১ দশমিক ২০ টাকা। আমদানি-রফতানিকারকদের ফেরত দিয়েছেন ২৮ হাজার ৮০ টাকা। ভ্যাটসহ বাকি ৫৮ হাজার ৪৭১ দশমিক ২০ টাকা পানামা পোর্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। আমদানি-রফতানিকারকদের দাবি, ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাদে বাকি সব টাকাই তারা ফেরত পাবে। কারণ, তারা তো পানামা পোর্টের ভেতরে পাথর লোড-আনলোড করে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থলবন্দরের কয়েকজন জানান, নিয়ম অনুযায়ী পানামা পোর্টের ৫ নম্বর গেট দিয়ে রাত ১০টার পর পণ্যবাহী ট্রাক বের হতে পারবে না। কিন্তু পানামার একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ১০০ টাকা চাঁদার বিনিময়ে রাত ১০টার পরে প্রায় প্রতিদিনই ২০-২৫টি করে পণ্যবাহী ট্রাক বের হয়। শুধু তাই নয়, ৩ নম্বর গেইট দিয়ে খালি ট্রাক সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত প্রবেশের নিয়ম থাকলেও পানামা কর্তৃপক্ষ বিকেল সাড়ে ৫টার মধ্যে বন্ধ করে দেয়। তখন তারা ১ নম্বর গেট দিয়ে গাড়িপ্রতি ১০০ টাকা চাঁদার বিনিময়ে প্রতিদিন ২০-২৫টি করে খালি ট্রাক প্রবেশের সুযোগ করে দেয়।
সূত্র জানায়, নাইট চার্জ নেওয়ার পরেও ভারতীয় খালি গাড়ি বের হলে ২০০ রুপি চাঁদা নেয় পানামা কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তার জন্য কোনো রশিদ দেওয়া হয় না। এ ছাড়া, পানামার মধ্যে শ্রমিকদের বকশিসের নামে গাড়িপ্রতি ১২০০-১৫০০ টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। সেইসঙ্গে অভিযোগ রয়েছে, পানামার জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) বেলাল হোসেনের নেতৃত্বে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাঁচ/ছয় জনের একটি সিন্ডিকেট দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত।
অভিযোগ উঠেছে, পানামা পোর্ট কর্তৃপক্ষের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণেই এই স্থলবন্দর দিকে পণ্য আমদানি ব্যাপক হারে কমেছে। দুই বছর আগে যেখানে বন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৩৫০-৪০০ ট্রাক পণ্য আমদানি হতো, সেখানে এখন হয় মাত্র ১৫০ থেকে ২০০ ট্রাক।
গোপন সূত্রে জানা গেছে, পানামা পোর্টে ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকের প্রবেশ ফি বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৬০ দশমিক ২০ টাকা নেওয়ার নিয়ম থাকলেও নেওয়া হচ্ছে ১৮০ রুপি। এ বিষয়ে আমদানি-রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি কাজী সাহাবুদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুর্নীতি সবখানে হচ্ছে। সোনামসজিদ পানামা পোর্ট তার বাইরে নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘গত ১ জুন আমি বাংলাদেশ স্থলবন্দরের চেয়ারম্যান বরাবর একটি আবেদন করেছি। তাতে উল্লেখ আছে যে, ভারতীয় পণ্যবাহী ট্রাকে অ্যান্ট্রি ফি বাবদ ১৮০ রুপি আদায় করে। এ ছাড়া, পানামার অবকাঠামো ও ইক্যুইপমেন্ট অপর্যাপ্ত থাকার পরও পূর্ণাঙ্গ চার্জ আদায় করে থাকে।’
এ সব বিষয়ে জানতে চাইলে পানামা পোর্টের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সিফাত আরা হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখানে ভারতীয় রুপি নেওয়া হয় না, বাংলাদেশি টাকাই নেওয়া হয়ে; এবং সেই টাকার পরিমাণ ১৬০ দশমিক ২০। এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতি হয় না।’
পানামা পোর্টের জিএম বেলাল উদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘অন্যান্য বন্দরে সঙ্গে মিল রেখেই নিয়ম অনুযায়ী সোনামসজিদ স্থল বন্দরে পানামা পোর্ট সমস্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এখানে কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতি হচ্ছে না।’
সারাবাংলা/পিটিএম