ভারী বৃষ্টিতে অনেক সড়ক পানির নিচে, চরম ভোগান্তিতে নগরবাসী
১২ জুলাই ২০২৪ ১৫:১৯
ঢাকা: আবহাওয়া অফিসের তথ্যানুযায়ী ঢাকার আকাশ থেকে সকাল ৬টা থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত তিন ঘণ্টায় ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি পড়েছে। প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে রাজধানীর অনেক সড়ক পানির নিচে তলিয়ে যায়। কিছু সড়ক হাঁটুসমান পানিতে আবার কিছু সড়ক কোমর সমান পানিতে ডুবে যায়। ওই সব সড়কে বেশকিছু যানবাহন চলাচলের সময় বিকল হয়ে পড়ে। প্রাইভেট কার, সিএনজি, রিকশা এমনকি অনেক বাস-ট্রাকও বিকল হয়ে পড়ে। যে কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। যদিও সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার হওয়ায় রাজধানীতে মানুষজনের চলাচল ছিল অন্যান্য দিনের চেয়ে কম।
রাজধানীর বেশির ভাগ সড়কে পানিতে তলিয়ে যানবাহন বিকল হয়েছে এমন সতর্কতার খবর প্রথম ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়। ডিএমপির মিডিয়া শাখার অতিরিক্ত উপ কমিশনার কে এন নিয়তি রায় জানান, রাজধানীর অনেক সড়কে পানি জমে যাওয়ায় যানবাহন বিকল হয়ে পড়েছে। যে কারণে জলাবদ্ধতার মাঝেও যানজট দেখা দিয়েছে। গন্তব্যে পৌঁছাতে নগরবাসীকে সময় নিয়ে বের হওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।
আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, রাজধানী ঢাকায় শুক্রবার (১২ জুলাই) সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদফতর। আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, ‘আজ সারা দিন কম-বেশি বৃষ্টি হবে। তবে আগামীকাল থেকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমে আসবে।’
সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা যায়, টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর পল্লবী, মিরপুর-১২, মিরপুর-৬, কালসী সড়ক, মিরপুর-১৪, মিরপুর-১০, মিরপুর-১ থেকে টেকনিক্যাল মোড়, শ্যামলী, পান্থপথ, গ্রীন রোড, নীলক্ষেত, আজিমপুর, লালবাগ, রায় সাহেব বাজার সড়ক, বংশাল এলাকা, পুরাতন জেলখানার ঢাল, ফকিরাপুল, নয়াপল্টন, বায়তুল মোকাররম, শান্তিনগর, মালিবাগ মোড়, আরামবাগ, প্রগতি সরণি, নিউমার্কেট, ধানমন্ডি রাপা প্লাজা, মিরপুর রোকেয়া সরণি, দয়াগঞ্জ মোড়, সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল, নিমতলী, টয়েনবি সার্কেল রোড, ধানমন্ডি ২৭, এলিফ্যান্ট রোড, মৎস্যভবন, কাওরান বাজার, বিজয় সরণি, ঢাকা গেট ভিআইপি রোড, মিরপুর মাজার রোড, মহাখালী, নাবিস্কো সড়ক ও সেগুনবাগিচা এলাকার সড়কে কোথাও হাঁটু পানি আবার কোথাও কোমর সমান পানি জমে যায়। এতে বিঘ্নিত হয় যানবাহন চলাচল।
দুপুর ২টার দিকে দেখা যায়, রাজধানীর হেয়ার রোডের মাথায় প্রধান বিচারপতির বাসভবনের সামনের সড়কে প্রায় হাঁটুসমান পানি। একইসঙ্গে বাসভবনের আঙিনাতেও হাঁটুসমান পানির দেখা মেলে।
অন্যান্য দিন রাজধানীর মসজিদগুলোতে জায়গা না পেয়ে রাস্তায় অনেকে জুমার নামাজ আদায় করতেন কিন্তু আজ বাইরে কোথাও সেই উপায় ছিল না। কোনো মসজিদের সামনের সড়কে পানি জমেছে আবার কোনো মসজিদের সামনের সড়ক বৃষ্টিতে ছিল কর্দমাক্ত।
সকাল ৮টার দিকে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন চাকরিপ্রার্থীরা। একদিকে যানবাহন ছিল না সড়কে অন্যদিকে বৃষ্টি। অনেক কষ্টে দুএকটি যানবাহন মেলাতে পারলেও সড়কে বেশি পানি থাকায় বিকল হয়ে পরেছে। আটকে থাকতে হয়েছে সময়ের পর সময়। কেউ বৃষ্টিতে ভিজে পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রে পৌঁছান।
শুক্রবার সকালে রাজধানীবাসী বাজার করে থাকেন। তারাও বের হয়ে বিপাকে পড়েছেন। অন্যদিকে কাঁচা বাজার, মাছ ও মাংস ব্যবসায়ীরাও বিপাকে পড়েন কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার দেখা না পেয়ে।
সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। বিশেষ করে যারা ভ্যানে সবজি বিক্রি করে। একদিকে বৃষ্টি অন্যদিকে ক্রেতাশূন্য। তবে আজ অফিস না থাকায় কিছু স্বস্তিতে ছিল মানুষজন। এরপরেও কিছু কিছু এলাকার সড়কে রিকশা ও সিএনজি উল্টে ভিজতে হয়েছে। মালপত্রও ভিজে গেছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ড্রেনেজ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে। পানি যেতে পারছে না। উল্টো কোথাও কোথাও পানি ড্রেনের ঢাকনার মুখ দিয়ে ওপরে বের হয়ে আসছে। সিটি করপোরেশনের কেউ কাজ করছে না। বর্ষাকালে বৃষ্টি হবে এটাই স্বাভাবিক। আগে থেকে সতর্ক থাকা উচিত কর্তৃপক্ষের।
শান্তিনগরে পানিতে আটকে বেসরকারী চাকরিজীবী এনায়েত করিম বলেন, ‘ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা নানাভাবে ময়লা-আবর্জনা ফেলে ড্রেনের মুখ বন্ধ করে দিয়েছেন। আজ বন্যা শান্তিনগরে। অথচ যারা টাকা তোলে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে তাদেরও তো দায় আছে।
মতিঝিলে আটকে থাকা ব্যাংকার রবিউল ইসলাম বলেন, ‘কাকে কী বলব, বুঝতে পারছি না। বৃষ্টি সঙ্গে সঙ্গে যদি পানি চলে যেত তাহলে কোমর সমান পানি জমত না। পানি নামবে কীভাবে, ড্রেনের সব মুখ আটকানো। পানি নামার কোনো পথ নেই। পানি জমার ৫/৬ ঘণ্টা পরেও পানি নিষ্কাশনের জন্য সিটি করপোরেশনের কাউকে দেখা যায়নি।’
জলাবদ্ধতার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাছের বলেন, ‘সড়কগুলোর উন্নয়ন কাজ হয়েছে। ফলে কোথাও কোথাও আবর্জনা আটকে থাকতে পারে। সেগুলো পরিষ্কার করার কাজ চলছে। অন্যদিকে তিন ঘণ্টায় ৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হওয়ায় জলাবদ্ধতা হয়েছে। পানি নামছে, জলাবদ্ধতা কিছুক্ষণের মধ্যেই আর থাকবে না।’
সারাবাংলা/ইউজে/একে