জালিয়াতি করে শিমুলিয়া বাঁওড় দখলের অভিযোগ, ‘বঞ্চিত’ মৎস্যজীবীরা
১৪ জুলাই ২০২৪ ০৮:১০
যশোর: যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মফিজুর রহমানসহ প্রভাবশালী ৫ জন জালিয়াতির মাধ্যমে মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির পদ দখলে নিয়ে শিমুলিয়া বাঁওড় ভোগ দখল করছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। সম্প্রতি সমবায় সমিতির সমিতির ১৭ জন সদস্য জালিয়াতির মাধ্যমে গঠিত নির্বাহী কমিটি বাতিল ও ভুয়া সদস্যদের ছাঁটাই করার দাবি জানিয়ে জেলা সমবায় কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগকারীদের মধ্যে মৎস্যজীবী হাসেম আলী বলেন, ‘বর্তমান ইউপি সদস্য মফিজুর রহমান ও সাবেক ইউপি সদস্য আবুল কালামের নেতৃত্বে প্রভাবশালী কয়েকজন জালিয়াতির মাধ্যমে সমিতির নির্বাহী কমিটির পদ দখল করে মাছ চাষ করছেন। সেখানে প্রকৃত মৎস্যজীবীদের বাঁওড়ে নামতে দেওয়া হচ্ছে না। ওই কমিটি বাঁওড়ের আয়-ব্যয়ের কোনো হিসাবও দেয় না।’
সদস্যরা বলেন, ‘আমরা সাধারণ সদস্যরা জানতে পারছি না নির্বাহী কমিটি কিভাবে গঠিত হচ্ছে। বর্তমান ৯ সদস্যের নির্বাহী কমিটির সভাপতি আবুল কালাম ও সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, সহ-সভাপতি আনারুল ইসলাম, নির্বাহী সদস্য খালিদ মোসারফ ও আবদুল হামিদ সমিতির সাধারণ সদস্যই না। তারা সদস্য তালিকায় অন্যের নাম ঘঁষামাজা করে নিজেদের নাম বসিয়ে সদস্য হয়েছেন।’
অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মফিজুর রহমান বলেন, ‘তাদের সব অভিযোগ মিথ্যা। জালিয়াতি করে সদস্য হওয়া যায় না। আমরা জালিয়াতি করেছি কিনা তা সমবায় কর্মকর্তাদের কাছে খোঁজ নেন।’
মৎস্যজীবী ইসলাইল হোসেন, সামছুর রহমান, কাশেম আলীসহ সমিতির ১০ শতাংশ সাধারণ সদস্য স্বাক্ষরিত অভিযোগ পত্রে বলা হয়েছে, ১৯৮২ সালে শিমুলিয়া মৎসজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড গঠিত হয়। সর্বশেষ ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে অডিট রিপোর্ট ও ভোটার তালিকা হালনাগাদ অনুযায়ী সমিতির সাধারণ সদস্য সংখ্যা ১৪২ জন। এই ১৪২জনের সদস্য তালিকায় নাম না থাকলেও জালিয়াতির মাধ্যমে ৯ সদস্যের নির্বাহী কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ৫টি পদ ‘বাগিয়ে’ নিয়েছেন প্রভাবশালী চক্র।
সমিতির সর্বশেষ ভোটার তালিকা/সদস্য তালিকা অনুযায়ী ১১৫ নম্বর সদস্য শিমুলিয়া গ্রামের তক্কেল বিশ্বাসের ছেলে মো. আবুল কালাম। অথচ তার সদস্য পদের স্থলে জালিয়াতি করে নিজের নাম বসিয়েছেন বর্তমান সভাপতি দাবিদার গোপীনাথপুর গ্রামের দাউদ মোড়লের ছেলে সাবেক ইউপি সদস্য আবুল কালাম। তিনি সমিতির সাধারণ সদস্য না হলেও কিভাবে কমিটির সভাপতি হলেন সেটি সাধারণ সদস্যরা জানেন না।
এছাড়া ভোটার তালিকার ১৩৫ নম্বর সদস্য শিমুলিয়া গ্রামের রজব আলীর ছেলে মফিজুর রহমান। অথচ তার সদস্যপদের স্থলে জালিয়াতি করে নিজের নাম বসিয়েছেন বর্তমান সম্পাদক দাবিদার আজমপুর গ্রামের আয়নাল বিশ্বাসের ছেলে ও বর্তমান ইউপি সদস্য মো. মফিজুর রহমান। সাধারণ সম্পাদক দাবি করা মো. মফিজুর রহমান সাধারণ সদস্যই নয়। ভোটার তালিকার ৯০ নম্বর সদস্যের স্থলে টেম্বারিং (সদস্যের নাম মুছে হাতে লেখা) করে সহ-সভাপতি দাবিদার আনারুল ইসলামের নাম বসানো হয়েছে। যা ভোটার তালিকা/সদস্য তালিকায় স্পষ্ট হয়েছে।
ভোটার তালিকার ৩৩ নম্বর সদস্যের স্থলে টেম্বারিং (সদস্যের নাম মুছে হাতে লেখা) করে মো. খালিদ মোশারফের নাম বসানো হয়েছে । যা ভোটার তালিকা/সদস্য তালিকায় স্পষ্ট। তিনি সাধারণ সদস্য না হলেও ওই চক্রটি জালিয়াতির মাধ্যমে তাকে নির্বাহী কমিটির পদে বসিয়েছেন। সমিতির সর্বশেষ ভোটার তালিকায় মোট সদস্য সংখ্যা ১৪২। এই তালিকায় মো. আব্দুল হামিদের নাম নেই। তবুও তাকে নির্বাহী কমিটির সদস্য দেখানো হয়েছে।
নির্বাহী কমিটির ৫ জন সমিতির সাধারণ সদস্যই নয়। অথচ তারা ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা/সদস্য তালিকায় প্রকৃত সদস্যদের নামের জায়গায় ওই পাঁচজন নিজেদের নাম, পিতার নাম, ঠিকানা ও ছবি জালিয়াতি করে নির্বাহী কমিটি নির্বাচন দেখিয়েছেন; যা সম্পূর্ণ অবৈধ। প্রকৃত সদস্যদের কাছে তথ্য গোপন করে কতিপয় সদস্যের যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অগণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সমিতির ক্ষমতা কুক্ষিগত করা হয়েছে বলেও অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই অবৈধ নির্বাহী কমিটির ওই সদস্যদের কার্যকলাপে সাধারণ সদস্যরা তাদের অধিকার বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে অবৈধ নির্বাহী কমিটি বাতিল ও ভুয়া সদস্য ছাঁটাই করার জন্য আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সদস্যরা।
যশোর জেলা সমবায় কর্মকর্তা এসএম মঞ্জুরুল হক বলেন, ‘সমবায় সমিতির সাধারণ সদস্যদের লিখিত একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
সারাবাংলা/এমও