৬দিন পর অফিসে এরশাদ-নাজিম, ছিলেন না শাহাদাত-বক্কর
১৩ জুলাই ২০২৪ ২১:০০
চট্টগ্রাম ব্যুরো: কমিটি ঘোষণার ছয় দিন পর প্রথম দলীয় কার্যালয় ঘুরে এসেছেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান। দলীয় কার্যালয়ে নগর যুবদল তাদের সংবর্ধনা দিয়েছে। এ ছাড়া কমিটি ঘোষণার পর প্রথম সাংগঠনিক কর্মসূচিও পালন করেছেন তারা। তবে এতে অংশ নেননি বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর।
শনিবার (১৩ জুলাই) বিকেলে নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ জাতীয় মসজিদে চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিলের মধ্য দিয়ে এরশাদ-নাজিমের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের কমিটি প্রথম কর্মসূচি পালন করে। এ কর্মসূচিতে অংশ নেন বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, যার ‘আশীর্বাদে’ নতুন কমিটি হয়েছে বলে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে আলোচনা আছে।
দোয়া মাহফিলের আগে আলোচনা সভায় মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক। আওয়ামী লীগের দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ করার কারণেই খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করে রেখেছে সরকার। উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা বেগম জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা করানোর সুপারিশ করেছেন। সরকার তাকে বিদেশে যেতে দিচ্ছে না।’
‘বেগম খালেদা জিয়ার ওপর নির্মম, নিষ্ঠুর জুলুম চলছে। সরকারের প্রতিহিংসার কারণে তাঁর জীবন আজ সংকটাপন্ন। অথচ বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া বাংলাদেশের গণতন্ত্র মুক্তির স্বপ্নও দেখা সম্ভব নয়। আমাদের সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলনে জীবন বাজি রেখে রেখে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে,’ – বলেন মীর হেলাল।
নগর কমিটির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়া হাসপাতালে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন। উপমহাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে নিয়ে আওয়ামী লীগ নোংরা রাজনীতি করছে। বেগম জিয়া গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য নিজের জীবন বাজি রেখেছেন। তাকে গৃহবন্দি অবস্থা থেকে মুক্ত করতে আমাদের জীবন বাজি রাখতে হবে।’
সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান বলেন, ‘কেবলমাত্র রাজনীতি ও জনগণ থেকে দূরে রাখার জন্য সরকার একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে নির্যাতন-নিপীড়ন করছে। আওয়ামী লীগ জানে বেগম খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তার কাছে তাদের অন্যায়-অত্যাচার টিকবে না। তারা জিয়া পরিবারের জনপ্রিয়তাকে ভয় পায়।’
এ সময় বেগম খালেদা জিয়ার রোগমুক্তির পাশাপাশি দলটির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমান ও তার ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোসহ মৃত্যুবরণকারী সব নেতাকর্মী এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সুস্থতা কামনায় দোয়া করা হয়।
দোয়া মাহফিলে নগর বিএনপির বিলুপ্ত আহ্বায়ক কমিটির নেতাদের মধ্যে এম এ আজিজ, আবদুস সাত্তার, সৈয়দ আজম উদ্দীন, এস কে খোদা তোতন, কাজী বেলাল উদ্দিন, শামসুল আলম, আর ইউ চৌধুরী শাহীন, ইয়াছিন চৌধুরী লিটন, ইসকান্দর মির্জা, আহমেদুল আলম চৌধুরী রাসেল, হারুন জামান, মোহাম্মদ আলী, এম এ হান্নান, মফিজুল হক ভূঁইয়া, নিয়াজ মোহাম্মদ খান, ইকবাল চৌধুরী, নুরুল আলম রাজু, আবুল হাশেম, মন্জুর আলম মন্জু, আনোয়ার হোসেন লিপু, মন্জুর আলম চৌধুরী মন্জু এবং নগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহেদ, নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান ও সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, বিভাগীয় শ্রমিকদলের সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল্লাহ বাহার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
দোয়া মাহফিল শেষে বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে নগরীর নুর আহমদ সড়কে দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনে যান। সেখানে নগর যুবদলের পক্ষ থেকে নতুন আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ ও সদস্য সচিব নাজিমুর রহমানকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।
গত ১৩ জুন আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন ও সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের নেতৃত্বাধীন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কমিটি বিলুপ্ত করা হয়। ৭ জুলাই এরশাদ উল্লাহকে আহ্বায়ক ও নাজিমুর রহমানকে সদস্য সচিব করে কেন্দ্র থেকে দুই সদস্যের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
গত ১৪ বছর ধরে নগর বিএনপির নেতৃত্ব দিয়ে আসা শাহাদাত এবং তার আটবছরের সঙ্গী আবুল হাশেম বক্করকে বাদ দেওয়া নিয়ে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। নতুন কমিটির প্রথম কর্মসূচিতে তাদের অনুপস্থিতি বিভক্তির ইঙ্গিত বলে মনে করছেন নেতাকর্মীদের অনেকে। এ বিষয়ে শাহাদাত হোসেন ও আবুল হাশেম বক্করের বক্তব্য জানতে পারেনি সারাবাংলা।
সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম