Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কোটা কমানোর পক্ষে মুক্তিযোদ্ধারা, মন্ত্রিসভায় আলোচনা হবে

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৪ জুলাই ২০২৪ ২২:০১

ঢাকা: সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা থাকুক, তবে সংখ্যা কমিয়ে আনা হোক। এমন মতামত দিয়েছে দেশের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তিনি বলেছেন, ‘দিন দিন মুক্তিযোদ্ধাদের সংখ্যাও কমে আসছে, সে কারণে কোটার সংখ্যাও কমিয়ে আনা উচিৎ।’ এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক জানান, বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকে কথা বলবেন তিনি। তার আগে এ বিষয় কোনো কথা বলতে চান না।

এদিকে কোটার যৌক্তিক সংস্কারের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। রোববার (১৪ জুলাই) দুপুর ৩টার দিকে শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আদিল চৌধুরীর কাছে এ স্মারকলিপি জমা দেন।

বিজ্ঞাপন

শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলন নিয়ে মোজাম্মেল হক (বীরপ্রতিক) সারাবাংলাকে বলেন, ‘অনগ্রসর মানুষ যতদিন থাকবে ততদিন কোটা রাখতে হবে। সে সংখ্যা একটি হোক অথবা ৫০টি হোক, কিংবা ৩০টি হোক। কোটা রাখতে হবে।’

কোটা পদ্ধতিতে সংস্কার আনা দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য যে ৩০ শতাংশ কোটা রাখা হয়েছিলো, তা কমিয়ে এনে কোটা রাখা উচিৎ।’

সরকারি আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত ও আধা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার চেয়ে কোটার পরিমান বেশি থাকায় এটি নিয়ে সব সময়ই অসন্তোষ ছিলো। এ প্রেক্ষাপটে বারবারই কোটা নিয়ে আন্দোলন হয়েছে। তবে তা সীমিত আকারে থাকলেও বড় পরিসরে রূপ নেয় ২০১৮ সালে। ১৯৭২ সালের কোটা ব্যবস্থা চালুর পর থেকেই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা রাখা হয়। পরে একই কোটায় মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিদের জন্য সেই কোটা বরাদ্দ রাখা হয়। ২০১৮ সালের আন্দোলনের সময়ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বরাদ্দ রাখা ৩০ শতাংশ কোটা নিয়ে আলোচনায় উঠে। এবারও কোটা সংস্কার আন্দোলনে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য রাখা কোটার বিষয়টিও সামনে আসে এবং সমালোচনা হয়। বিষয়টি নিয়ে নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেছেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ৭১।

বিজ্ঞাপন

সংগঠনের নেতারা তাদের এক বিবৃতিতে বলেছেন, সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ’৭১ মনে করে, অনেক বছরের ব্যবধানে, বিশেষত মহান মুক্তিযুদ্ধের ৫৩ বছর পার হওয়ার পর আগের কোটা ব্যবস্থার যুক্তিসঙ্গত ও বাস্তবসম্মত সংস্কার হতে পারে যাতে নতুন প্রজন্মের সত্যিকার মেধাবীরা বঞ্ছিত না হয়।

সেই সঙ্গে ফোরাম আরও মনে করে যে, আন্দোলনের বাতাবরণে দেশের স্বাধীনতা বিরোধী মহলের অনুপ্রবেশ ঘটলে এবং বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয় বীরদের আত্মত্মত্যাগকে কটাক্ষ ও অবমূল্যায়ন করা হলে তা হবে চরম দুর্ভাগ্যজনক ও উদ্বেগজনক।

সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বেতন স্কেলের নবম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত কোটা পদ্ধতি বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর একটি পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তার আগ পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেনিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, নারী কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কোটা ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী কোটা ১ শতাংশ। সব মিলিয়ে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিলো। বাকি ৪৪ শতাংশ সাধারণ।

যদিও স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে চালু হওয়া প্রথম কোটা ব্যবস্থায় এর সংখ্যা ছিলো আরও বেশী। কিন্তু সম্প্রতি এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮ সালে জারি করা সেই পরিপত্র বাতিল করে হাইকোর্ট। হাইকোটের রায়ে ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিল করে বলা হয়, সরকার চাইলে কোটা বাড়াতে বা কমাতে পারে। কোটা পূরন না হলে সাধারন মেধা তালিকা থেকে নিয়োগ দেওয়া যাবে।

ওই রায়ের পর পরই আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। তারা সরকারি চাকরির সব গ্রেড অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্টীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম মাত্রায় এসে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন।

সারাবাংলা/জেআর/এমও

কোটা কোটা সংস্কার মুক্তিযোদ্ধা সরকারি চাকরি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর