Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘হাত যখন দিয়েছি ছাড়ব না, আপন-পর কিছু জানি না’

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৪ জুলাই ২০২৪ ২২:৫৩

ঢাকা: দুর্নীতিবিরোধী অভিযান নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, হাত যখন দিয়েছি ছাড়ব না। যেখানেই হোক, যেই হোক- আমি কেয়ার করি না। এখানে আপন-পর কিছু জানি না। আমি যখন জিরো টলারেন্স বলেছি, সেটা আমি করেই ছাড়ব- যতদূর পারি।

রোববার (১৪ জুলাই) বিকেলে গণভবনে চীন সফর নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। শুরুতে চীন সফর নিয়ে লিখিত বক্তব্য তুলে ধরেন। পরে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন।

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রের বিভিন্নস্তরে দুর্নীতির উৎসমুখ বন্ধ করা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতিটা তো নিচের দিক থেকে বেশি হচ্ছে। এটাই হলো বাস্তবতা। উৎসমুখ কোন জায়গায় কয়টা খুঁজবেন? আর তথ্যের ব্যাপারে যেটা বলব, এনবিআর যখন তথ্য দেয় তারা হিসাব করে ট্যাক্স কত এলো। আর বাণিজ্য থেকে বলে কতটা রফতানি করতে পারল সেটা। আজ আমি একটা কর্মসূচিতে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রীকে বললাম যে, তোমাদের একটা হিসাব যে, আমার এত রফতানি হলো। আর এনবিআর হিসাব করে দেখে যে, তারা রাজস্ব কতটুকু পেল। এটার একটা সামঞ্জস্য থাকা দরকার।’

তিনি আরও বলেন, ‘এনবিআর তার ক্যাশ কত পেল বা রাজস্ব কত পেল, সেটার হিসাবে নিয়েই বেশি থাকে। আর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ভাবে যে না তাদেরটাই ঠিক। আজকে আমি কথা বলে এসেছি রফতানি ট্রফি দেওয়ার সময়। এটা নিয়ে তারা বসবে। বসে একটা জায়গায় আসবে। এ রকম দ্বন্দ্বটা যাতে না থাকে।’

তিনি বলেন, ‘আরকেটা হচ্ছে স্বাস্থ্য খাত। দুর্নীতি এমন পর্যায়ে ছিল যে, কোনো জায়গায় কাজই করা যেত না। কিন্তু ধীরে ধীরে আমরা অনেকটা ঠিক করে ফেলেছি। আমাদের কতগুলো নিয়ম আছে। একটা জিনিস কিনতে গেলে টেন্ডার দাও। তার ওপর সরকারি টাকা। কোভিডের সময় ওইগুলো করতে গেলে রোগী বাঁচানো যেত না। তখন আমাকে কতগুলো সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমার এখন সিরিঞ্জ কিনতে হবে। যদি আমি টেন্ডারে যাই ভ্যাকসিন দেব কবে? আমি সোজা প্লেন পাঠিয়ে দিয়েছি। কোথায় পাওয়া যায়? ছোট সিরিঞ্জ লাগে, পাওয়া যায় না, দাম বেশি। আমি বলেছি, হোক বেশি, আমার এক্ষুণি দরকার। কাজেই আমাকে আনতে হবে। আমি তিন দিনের মধ্যে প্লেন পাঠালাম। যা পেলাম চার/পাঁচদিনের মধ্যে তা কিনে নিয়ে আসলাম। এখন যদি ওটার ওপর দুর্নীতি ধরতে যান ধরতে পারেন? কিন্তু তখন আমার কাছে ছিল মানুষ বাঁচানোটাই ফরজ।’ করোনাকালে ভ্যাকসিন রাখার জন্য ফ্রিজারসহ নানামুখী কেনাকাটার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

সচিবালয়ে এক সাংবাদিকদের ফাইল চুরির ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তথ্য জোগাড় করা এক জিনিস, আর ফাইল চুরি করা আরেক জিনিস। আমি ভ্যাকসিন কিনব, সেখানে নিগোসিয়েশন হচ্ছে। জরুরি পেপার তৈরি হচ্ছে। আমার অফিসাররা দিনরাত ২৪ ঘণ্টা কাজ করছে। ফাইলটা রেখে কেবলই একটু বাইরে গেল, অমনি আপনাদের স্বনামধন্য এক পত্রিকার সাংবাদিক ঢুকে সেই কাগজ চুরি করতে গেল। অফিসার এসে ধরল। সে সেটা নিয়ে গেল বাথরুমে আটকাতে। সেখান থেকে তাকে বের করল, সে ঢুকাল তার শাড়ির ভেতরে। সেখান থেকে টেনে বের করল, সেটা বিরাট অপরাধ হয়ে গেল!’

তিনি আরও বলেন, ‘সে যে ফাইল চুরি করতে গেল- এটা কোনো অপরাধ না। সেজন্য কোনো একটা বড় দেশ আবার তাকে পুরস্কারও দিয়ে দিল। ফাইল চুরির জন্য পুরস্কার পেল। এটা কি দুর্নীতি? ডাকাতি? চুরি? কোনটা? কি ডেফিনেশন দেবেন? বলেন আমাকে, কি ডেফিনেশন আছে? এই ঘটনা তো ঘটে।’

ওই সাংবাদিকের আগের আরেক ঘটনার প্রসঙ্গও তুলে ধরেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, ‘এর আগে আরেকবার নৌ পরিবহনে ঢুকে ধরা পরার পর মুচলেকা দিয়ে বের হয়ে এলো। সেখান থেকে আবার আরেক জায়গায়! তারপরে হিরো হয়ে গেল, হিরোইন হয়ে গেল।’

সড়ক আন্দোলনের সময় আরেক সাংবাদিকদের ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঘরের মধ্যে বসে বলছে, এই হচ্ছে, সেই হচ্ছে, ওই হচ্ছে। ধরা পড়ল, হিরো হয়ে গেল অমনি। পুরস্কার পেয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হয়ে গেল।’

তিনি আরও বলেন, ‘যা বলি সাচ্চা বলি। যেটা আমি দেখছি; কী কারণে হিরো হয়ে যায়। আমরা তো জিরো আছি। কেউ তো আমাদের খোঁজটোজ নেয় না। তারপরও দেশের মানুষের জন্য কাজ করব, করে যাচ্ছি। তবে যখন ধরছি, হাতে-নাতে ধরা পড়বেন যারা, আমরা ব্যবস্থা নেব।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘বাংলাদেশ কেন, সারাবিশ্বেই বড় বড় পত্রিকা-চ্যানেলের মালিক বড়লোকরাই হয়। সাধারণ মানুষ তো আর চালাতে পারে না। এটাও তো ঠিক তাদের ধরতে গেলে নানা কথা শুনতে হবে। কিন্তু তারপরও আমি যখন আছি ছাড়ব না। অন্য কারও কথা জানি না। আমি তো ছাড়ব না, সে যেই হোক।’

এর আগে, গত ৮ জুলাই তিন দিনের দ্বি-পক্ষীয় সফরে চীনের রাজধানী বেইজিং যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠনের পর এটি ছিল তার প্রথম চীন সফর। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কিয়াং ও শেখ হাসিনার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর তাদের উপস্থিতিতে ২১ সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সই করে বাংলাদেশ ও চীন। এছাড়া সাতটি ঘোষণাপত্র সই করে দুই দেশ।

প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে দুই দেশের সম্পর্ক ‘কৌশলগত অংশীদারত্ব’ থেকে ‘বিস্তৃত কৌশলগত সহযোগিতামূলক অংশীদারত্বে’ উন্নীত হয়েছে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সারাবাংলা/এনআর/পিটিএম

আপন-পর কিছু জানি না জিরো টলারেন্স টপ নিউজ দুর্নীতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

২৪ বলে ০ রানে জাকিরের লজ্জার রেকর্ড
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:১৮

সম্পর্কিত খবর