সিপিবির সভায় দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণসংগ্রামের আহ্বান
১৪ জুলাই ২০২৪ ১৬:৪৩
ঢাকা: দেশে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নানা ধরনের সংকট চলছে উল্লেখ করে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণসংগ্রামের আহ্বান জানিয়েছেন নেতারা।
তারা বলেন, দেশে দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র প্রকাশিত হচ্ছে। ছাত্রসমাজ রাজপথে। মূল্যবৃদ্ধিতে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। সাধারণ মানুষের জীবনের সংকট বাড়ছে। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভয়াবহ সংকট দেখা যাচ্ছে। শ্রমজীবী মানুষ অনেক জায়গায় বেতন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। নিরবে কর্মহানি ঘটছে অনেক জায়গায়। ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, জলাবদ্ধতা মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। সরকারি তথ্যই বলছে দেশের ২৬ শতাংশ পরিবার ধার করে মৌলিক চাহিদা পূরণ করছে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে গণসংগ্রাম গড়ে তুলতে হবে।
সিপিবির কেন্দ্রীয় কমিটির দুই দিনব্যাপী সভায় নেতারা এসব কথা বলেন। রোববার (১৪ জুলাই) ছিল এই সভার দ্বিতীয় ও শেষ দিন। পার্টির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলমের সভাপতিত্বে সভায় দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও করণীয় বিষয়ে বক্তব্য উত্থাপন করেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের রিপোর্ট উত্থাপন করেন সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ। শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন লাকি আক্তার।
সভায় সিপিবি নেতারা বলেন, ভোটের অধিকার হরণকারী ‘আমি ও ডামি’র ভোটের সরকার সংকটের কথা বললেও ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করে সর্বত্র আধিপত্য বজায় রাখতে সারা দেশে ভয়ের রাজত্ব অব্যাহত রেখেছে। নানা সংকটের মধ্যেও মানুষের জীবন-জীবিকার ওপর আঘাতে শ্রমজীবী-পেশাজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের রুখে দাঁড়ানোর প্রবণতা আগের থেকে বাড়ছে। মানুষের ক্ষোভ একেক জায়গায় একেকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।
সভায় চলমান দুঃশাসনের অবসান ও ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম এগিয়ে নিতে সারা দেশে আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল বিভিন্ন শ্রেণিপেশার দাবি ও দুর্নীতিবিরোধী গণআন্দোলন গড়ে তুলতে দেশব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী গণজাগরণ অভিযান, উপজেলা-জেলা-অঞ্চলে সভা-সমাবেশ ও বছরের শেষে মহাসমাবেশের কর্মসূচি। সভায় সাংগঠনিক ও পার্টির শৃঙ্খলাভঙ্গের বিষয়েও কিছু সিদ্ধান্ত হয়।
কোটাব্যবস্থার সংস্কার প্রসঙ্গে সিপিবি নেতারা বলেন, সবার জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে, কোটাব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করা চলবে না। আবার মুক্তিযোদ্ধা কোটার নামে তার সন্তানের বাইরে অন্য প্রজন্মের জন্য কোটা রাখার প্রয়োজন নেই। এ জন্য আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে যুক্তিসঙ্গতভাবে কোটাব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে।
সভায় মিরনজিল্লাহ হরিজন সম্প্রদায়কে উচ্ছেদ ও তাদের ওপর হামলার নিন্দা জানিয়ে তাদের স্থায়ী আবাসনের নিশ্চয়তার দাবি জানানো হয়। ন্যাশনাল কেমিক্যাল ও এবিকো ইন্ডাস্ট্রিজের শ্রমিকদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে তাদের পাঁচ মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধের দাবি জানানো হয়।
বাম জোটের আহ্বান করা আগামী ১৬ জুলাই দুদক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচিসহ দুর্নীতিবিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান সিপিবি নেতারা। বলেন, গণতন্ত্রহীনতা, লুটপাটতন্ত্র, সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদ ও আধিপত্যবাদের হাত থেকে দেশবাসীকে মুক্ত করতে ব্যবস্থা বদলের সংগ্রাম এগিয়ে নিতে হবে। আওয়ামী সরকার ও শাসকশ্রেণিকে পরাজিত করে বাম গণতান্ত্রিক শক্তিকে ক্ষমতায় যেতে হবে। এ জন্য সব শ্রেণিপেশার মানুষকে সচেতন ও সংগঠিত করে আন্দোলনে টেনে আনতে হবে। ‘বামপন্থার পথ ধরো, দুঃশাসন হটাও, ব্যবস্থা বদলাও, দুর্নীতি হটাও, দেশ বাঁচাও’ স্লোগানকে সামনে রেখে দেশব্যাপী গণজাগরণ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। নীতি-নিষ্ঠ বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তুলতে হবে।
সভায় অধ্যাপক এ এন রাশেদা, লক্ষ্মী চক্রবর্তী, মোতালেব মোল্লা, পরেশ কর, অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন রেজা, অধ্যাপক ডা. ফজলুর রহমান, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, আবদুল্লাহ ক্বাফী রতন, অধ্যাপক এম এম আকাশ, জলি তালুকদারসহ সিপিবির কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এএইচএইচ/টিআর