বান্দরবানে প্রযুক্তির মাধ্যমে সুপেয় পানি সরবরাহের উদ্যোগ
১৫ জুলাই ২০২৪ ০৮:৩৫
ঢাকা: বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তির মাধ্যমে বান্দরবান জেলায় সুপেয় পানি সরবরাহের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ জন্য ‘বান্দরবান জেলার উপজেলাগুলোতে বিভিন্ন প্রযুক্তির মাধ্যমে সুপেয় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থাকরণ’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা।
প্রস্তাবটি নিয়ে গত ২ জুন প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান।
পিইসি সভায় পরিবহন সমন্বয়ের যুগ্ম প্রধান বলেছেন, দেশের অন্যান্য জেলার তুলনায় বান্দরবান পার্বত্য জেলায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন কার্যক্রম অনেকাংশে পিছিয়ে রয়েছে। তাই বান্দরবান জেলায় পানি সরবরাহ এবং স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য এটি পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে মোট ৪৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের জুনে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে।
বান্দরবান জেলার প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চগুলোর মধ্যে বান্দরবানে পাহাড়ি এলাকা বেশি হওয়ার কারণে এখানকার অবস্থা বেশি চ্যালেঞ্জিং। বর্তমানে প্রকল্প এলাকায় ৬২.৫৩ শতাংশ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ওই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্য বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি সরবরাহ স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য এই প্রকল্পটির প্রস্তাব করা হয়েছে।’
সভায় ড. এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (ডিডিপি) প্রস্তাবিত বাস্তবায়নকাল চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত দেওয়া আছে। কিন্তু চলতি বছরের জানুয়ারি শেষ হয়ে যাওয়ায় বাস্তবতার কারণে প্রকল্পের বাস্তবায়নকাল সংশোধন করা প্রয়োজন।’
ডিপিএইচই এর প্রতিনিধি সভায় বলেন, ‘বান্দরবান জেলার বেশিরভাগ এলাকা পাহাড়ি এবং পাহাড়ি এলাকায় পাথর থাকার কারণে অনেক স্থানে গভীর নলকূপ স্থাপন করা যাচ্ছে না। সেজন্য এ এলাকার পানির স্তরের গভীরতা নির্ণয়সহ কোন কোন এলাকা গভীর নলকূপ স্থাপনের উপযোগিতা নির্ধারণের জন্য পরীক্ষামূলক নলকূপ ব্যবহার করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এ যাবৎ প্রকল্প এলাকায় প্রায় আড়াই হাজার নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। কিন্তু নিরাপদ পানি সরবরাহ নিশ্চিতে এ সকল এলাকায় আরো নলকূপ স্থাপন করা প্রয়োজন।’
বান্দরবানের দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট
এ বিষয়ে ড. এমদাদ উল্লাহ মিয়ান সারাবাংলাকে বলেন, ‘পরিবেশের ভারসাম্য ও ভূমিক্ষয় রোধসহ অন্যান্য বিষয়কে বিবেচনায় নিয়ে প্রকল্প এলাকার জন্য একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা যাচ্ছে।’
বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সভায় বলেন, ‘প্রকল্পটির মাধ্যমে বান্দরবান জেলার প্রায় ৭টি উপজেলায় স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য পাবলিক টয়লেট স্থাপন করা হবে। প্রকল্প অনুমোদনের পরবর্তী সময়ে স্থান নির্বাচন করা হবে।’
এ বিষয়ে সভার সভাপতি বলেন, পাবলিক টয়লেটের স্থান নির্বাচন করে ডিপিপি পূনর্গঠন করা উচিত। একইসঙ্গে বাস্তবায়ন পরবর্তী সময়ে রক্ষণাবেক্ষণ কে করবে সে বিষয়ে একটি ইক্সিট প্ল্যান পুনর্গঠিত ডিপিপিতে সংযুক্ত করা প্রয়োজন। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারি অর্থ যাতে সঠিকভাবে ব্যবহার করা হয় সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।’
ডিপিএইচই এর প্রতিনিধি সভায় বলেন, ‘পানি সরবরাহের জন্য মাটির নিচ দিয়ে পানির পাইপ স্থাপন করা হবে।’
এসময় আইএমইডির প্রতিনিধি বলেন, ‘মাটির নিচে পাইপ স্থাপন করা হলে এগুলো টেকসই করার পদ্ধতি এবং পানির লাইন নষ্ট হলে কিভাবে মেরামত করা হবে?’ এমন প্রশ্নের জবাবে ডিপিএইচ এর প্রতিনিধি বলেন, ‘মাটির নিচ দিয়ে পাইপগুলো এমনভাবে স্থাপন করা হবে যাতে যে কোন ত্রুটি হলে সহজেই শনাক্ত করে তা দ্রুত মেরামত করা যায়।’
এ বিষয়ে সভাপতি ড. এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘পানির পাইপগুলো মাটির নিচে স্থাপনের সময় রাস্তা থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে এমনভাবে স্থাপন করতে হবে যাতে এগুলোর স্থায়ীত্ব বজায় থাকে।’
এনইসি-একনেক ও সমন্বয় অনুবিভাগের প্রতিনিধি বলেন, ‘প্রকল্পের লগ ফ্রেম সঠিকভাবে তৈরি করা হয়নি, যা সংশোধন করা প্রয়োজন। এছাড়া প্রক্রিউরমেন্ট প্ল্যানে অনুমোদনকারী হিসেবে সব ক্ষেত্রে প্রকল্প পরিচালককে দেখানো হয়েছে যা যুক্তি সংগত নয়।
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ড. মো. গোলাম কবীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না।’
সারাবাংলা/জেজে/এমও