কোটা: রংপুরে ত্রিমুখী সংঘর্ষে শিক্ষার্থী নিহত, আহত শতাধিক
১৬ জুলাই ২০২৪ ১৭:২১
রংপুর: সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটাব্যবস্থা সংস্কার নিয়ে রংপুরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, পুলিশ ও ছাত্রলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
নিহত আবু সাইদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুর গ্রামের মকবুল হোসেনের ছেলে। আবু সাইদ ক্যাম্পাসসংলগ্ন পার্কের মোড়ের একটি ছাত্রাবাসে থাকতেন। কোটা সংস্কার ইস্যুতে তিনি শুরু থেকেই সরব ছিলেন বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুরে রংপুরে কোটা আন্দোলনকারী, শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যেকার সংঘর্ষে আবু সাইদ গুরুতর আহত হন। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে দেওয়া মৃত্যুসনদে উল্লেখ করা হয়েছে, বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল।
আবু সাইদের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ইউনুস আলী। তিনি বলেন, ওই শিক্ষার্থীকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল। এ ছাড়া আহত অবস্থায় আরও ১৫ জন হাসপাতালে এসেছেন।
রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান বলেন, কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিভিন্ন স্কুল-কলেজ ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা যোগ দিয়েছিলেন। তারা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। অনেক পুলিশ সদস্য এতে আহত হয়েছেন। এক শিক্ষার্থী মারা গেছেন বলে জেনেছি। তিনি কীভাবে মারা গেছেন, তা বলতে পারছি না।
এর আগে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দুপুর থেকেই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সামনে বিক্ষোভ চলাকালীন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষে অন্তত শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, দুপুর ২টায় রংপুর খামার মোড় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, পলেটেকনিকসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে বিশাল মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটকের সামনে জড়ো হন। তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে দিতে ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। একপর্যায়ে পুলিশ অব্যাহতভাবে গুলি ও রাবার বুলেট ছুড়তে থাকে। শিক্ষার্থীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে পালটা ইটপাটকেল ছোড়েন।
শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, শিক্ষার্থী ও পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সঙ্গে মহানগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা যুক্ত হয়ে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া করতে থাকেন। আন্দোলনকারীরাও পুলিশ ও ছাত্রলীগকে ধাওয়া করতে থাকেন। এ সময় দুপক্ষের মধ্যে দফায় দফায় ধাওয়া-পালটা ধাওয়া হয়।
কোটা সংস্কারপন্থি শিক্ষার্থী আল মামুন বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তারপরও আমরা মিছিল-সমাবেশসহ কর্মসূচি চালিয়ে যাব।
এর আগে কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কার, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার ও শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রংপুর মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা সকাল ১০টা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ-মিছিল করেন। আন্দোলনকারীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তারা।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুর রহমান শামিম বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সবসময় যৌক্তিক আন্দোলনকে সমর্থন করে। রাতে কোটা সংস্কারের আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থীরা মুক্তিযোদ্ধাদের কটাক্ষ করেছে যা ছাত্রসমাজকে ব্যথিত করেছে। আজ থেকে এই পবিত্র বাংলায় কেউ ‘রাজাকার রাজাকার’ স্লোগান দিলে তাদের যোগ্য জবাব দেওয়া হবে।
শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া বলেন, হাইকোর্ট ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল রেখেছেন। তাহলে এখন কিসের এত আন্দোলন? বিশ্ববিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভুল পথে ধাবিত করানো হচ্ছে। স্বাধীনতাবিরোধীরা তাদের আন্দোলনে ঠেলে দিয়ে সরকারকে উৎখাত করার পাঁয়তারা করছে, যা কোনোদিনই সফল হবে না। আমরা আজ থেকে রাজপথে আছি।
সারাবাংলা/টিআর
কোটা আন্দোলন কোটা সংস্কার আন্দোলন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় বেরোবি শিক্ষার্থী নিহত