সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে, নিহত ৬
১৬ জুলাই ২০২৪ ১৯:২২
ঢাকা: সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কোটা বিরোধী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের পর মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনেও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ হয়েছে। এ সব ঘটনায় সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রাজধানীর বাইরেও দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে।
এ সব সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। রাজধানী ঢাকায় দুইজন, চট্টগ্রামে তিনজন ও রংপুরে একজনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে।
এদিকে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিক্ষোভ মিছিলকে কেন্দ্র করে কোটা বৈষম্য বিরোধী ছাত্রলীগ মুখোমুখি অবস্থানে থাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড়ে অবস্থান নেয় সিটি কলেজ ও ঢাকা কলেজের কোটা বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীরা। সময় গড়ানোর পাশাপাশি আশপাশে অবস্থান নেয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিপুল সংখ্যক পুলিশও মোতায়েন করা হয়। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়। ইট পাটকেল নিক্ষেপের পাশাপাশি লাঠিসোঠা নিয়ে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া চলতে থাকে। সংঘর্ষ চলাকালে ঢাকা কলেজের সামনে এক শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে।
এ ছাড়া ঢাকা কলেজের সামনে আহত একজন ধানমন্ডির পপুলার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বাচ্চু মিয়া জানান, রাত ৮টার দিকে ওই যুবকের মরদেহ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে আনা হয়।
সায়েন্সল্যাব মোড়ে সাংবাদিক দেখলেই বিক্ষুব্ধরা তেড়ে আসতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে বাংলাভিশনের ক্যামেরা ম্যানকে তারা মারধর করে। মারধরকারীদের পরিচয় জানা যায়নি। কোটা বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ মুখোমুখি অবস্থান করায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
প্রায় একই সময়ে রাজধানীর উত্তরা দিয়াবাড়ী এলাকায় আইইউবিটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া সংঘর্ঘ হয়। তবে কেউ আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল ও চাঁনখারপুল এলাকায় বিকেল ৩টার দিকে উভয়পক্ষের সংঘর্ষ বাঁধে। এ সময় বহিরাগতদের গুলিতে চার শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে ঢামেক হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে।
স্থানীয় ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে রাজধানীর রায় সাহেব বাজার মোড় এলাকায়। সেখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী লাঠিসোঁটা নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করলে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এতে চার শিক্ষার্থী আহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
কোটা আন্দোলন নিয়ে সংঘর্ষ হয়ে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নামে এক শিক্ষার্থী মারা গেছে।
সংঘর্ষ হয়েছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে বঙ্গবন্ধু হলে ঢুকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বের করে দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ সময় হলের ভেতরে আগুন ধরিয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে।
সংঘর্ষ হয়েছে চট্টগ্রামেও। আন্দোলনকারীদের সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পালটা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে তিনজন মারা গেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড করলেই, জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলেই, রক্ত ঝরালেই, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেশের স্বার্থে ব্যবস্থা নেবেন। তাদের প্রতি তাই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেখানে ভাঙচুর হবে, যেখানেই হত্যাযজ্ঞ হবে, যেখানেই রক্তপাত হবে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেই কাজটা করবে, যে কাজটা দায়িত্বের মধ্যে পড়বে।’
সারাবাংলা/ইউজে/একে