Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমার সব শেষ হয়ে গেল— নিহত ফারুকের স্ত্রীর আহাজারি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৬ জুলাই ২০২৪ ২২:২৫

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ‘আমার স্বামীকে ওরা মেরে ফেলল। ওর কি দোষ ছিল। আমার সব শেষ হয়ে গেল। আমার সন্তানরা এতিম হয়ে গেল।’— এভাবেই আহাজারি করে কথাগুলো বলছিলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে নিহত দোকানকর্মী মো. ফারুকের স্ত্রী সীমা আক্তার।

মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে স্বামীর লাশ সামনে রেখে আহাজারি করছিলেন তিনি। ফারুকের বাড়ি নোয়াখালী জেলায়। ১২ বছরের এক ছেলে ও সাত বছর বয়সী এক মেয়ে আছে তার।

নগরীর ষোলশহরের একটি ফার্নিচারের দোকানে কাজ করতেন ফারুক। এদিন দুপুরে লালখান বাজারের বাসা থেকে ভাত খেয়ে তিনি কর্মস্থলে ফিরছিলেন। ফেরার পথে নগরীর ষোলশহর এলাকায় আন্দোলনকারী-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই ফারুকের মৃত্যু হয়।

সীমা আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার স্বামী দুপুরে ভাত খেতে এসেছিল। আন্দোলনের কারণে গাড়ি বন্ধ হয়ে যাবে, তাই তাড়াতাড়ি ভাত খেয়ে বের হয়ে গিয়েছিল। বিকেলে শুনি তার গুলি লেগেছে। এরপর হাসপাতালে এসে দেখি সে মারা গেছে। আমার কী হবে? আমার সন্তানদের কী হবে? আমার সব শেষ হয়ে গেল।’

নিহত ফারুকের বাবা মো. দুলাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার ছেলে কাঠমিস্ত্রির কাজ করত। দুপুরে বাসা থেকে ভাত খেয়ে সে কাজে গিয়েছিল। তার দোকানের মালিকের কল পেয়ে আমরা এখানে এসে তাকে মৃত পেয়েছি। তাকে গুলি করে রাস্তায় ফেলে গেছে। দুইটা ছেলে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। তার সন্তানরা এতিম হয়ে গেল। আমার স্ত্রীকে এখনও তার ছেলে মারা গেছে এ খবর দিতে পারিনি।’

চট্টগ্রামে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষে এ পর্যন্ত তিন জন নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে দু’জনই ছাত্র। তারা দু’জন হলেন- মো. ওয়াসিম আকরাম (২২) ও ফয়সাল আহমেদ শান্ত (২১)। ওয়াসিম চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের ছাত্র এবং কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক। তার বাড়ি কক্সবাজার জেলার পেকুয়া উপজেলার মেহেরনামা গ্রামে। আর ফয়সাল নগরীর ওমরগণি এম ই এস কলেজের ছাত্র বলে জানা গেছে।

এদিকে, ওয়াসিম আকরামের মৃত্যুর খবর পেয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা হাসপাতালে ছুটে আসেন। বিকেল সাড়ে ৫টার পর একের পর এক আহত শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসতে দেখা গেছে, যার মধ্যে বেশিরভাগই মাথায় আঘাত পেয়েছেন।

সংঘর্ষে উভয়পক্ষের আহত অন্তত ৮০ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে বেশিরভাগই চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসিন কলেজের ছাত্রলীগের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে।

ঘটনার পরপরই রাত আটটার দিকে সার্বিক পরিস্থিতি দেখতে চমেক হাসপাতালে যান চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) রাকিব উদ্দিন, নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) আশরাফ উদ্দিন।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই আন্দোলনকারীদের প্রতিরোধ করতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ষোলশহর, দুই নম্বর গেইট এবং মুরাদপুর এলাকায় অবস্থান নেন। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ষোলশহর থেকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এক পর্যায়ে সেটা দুই নম্বর গেইট এবং দক্ষিণে মুরাদপুরেও ছড়িয়ে পড়ে।

আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপে নগরীর দুই নম্বর গেইট থেকে মুরাদপুর পর্যন্ত এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় পুলিশের সামনেই বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটলেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নীরব থাকতে দেখা গেছে। সংঘর্ষের একপর্যায়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে বিভিন্ন অলিগলিতে অবস্থান নেন।

সংঘর্ষের একপর্যায়ে নগরীর মুরাদপুরে বেলাল মসজিদের পাশে একটি পাঁচতলা ভবনের ছাদে বেশকিছু ছাত্রলীগের নেতাকর্মীকে ধরে নিয়ে যান আন্দোলনকারীরা। সেখানের ছাত্রলীগের দুই নেতাকে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া মহসিন কলেজ ছাত্রলীগের জালাল নামে এক নেতার হাত ও পায়ের রগ কেটে ফেলারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংঘর্ষের পর চট্টগ্রামে তিন প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম

কোটা আন্দোলন টপ নিউজ নিহত ফারুক


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর