তাহলে রাজাকাররাই সত্যিকারের দেশপ্রেমিক: আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী
১৭ জুলাই ২০২৪ ২৩:৩৪
চট্টগ্রাম ব্যুরো: কোটাবিরোধী আন্দোলনে সংঘর্ষে নিহতদের স্মরণে চট্টগ্রাম নগরীর পৃথক পৃথক জায়গায় গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বুধবার (১৭ জুলাই) বিকেল চারটার দিকে নগরীর লালদীঘি মাঠে কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের উদ্যেগে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। জানাজায় শত শত শিক্ষার্থী অংশ নেন। এ সময় অভিভাবক পরিচয়ে অনেকেই জানাজায় অংশ নিতে দেখা গেছে।
জানাজা শেষে ৪টা ১০ মিনিটে শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে আন্দরকিল্লার দিকে এগিয়ে যান। এ সময় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা যায়। এরপর সেখানে কিছুক্ষণ অবস্থান করে শিক্ষার্থীরা কর্মসূচি সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী তার বক্তব্যে বলেন, ‘সরকার ছাত্র সমাজের সঙ্গে প্রহসন করেছে। সরকারের যেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দেওয়ার কথা সেখানে খোদ প্রধানমন্ত্রী আমাদের রাজাকার বলছেন। ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে ১৭ কোটি মানুষই যদি রাজাকার হয় তাহলে সে রাজাকাররাই সত্যিকারের দেশপ্রেমিক।’
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান করব, আপনি ভাবেন। আপনি কি দেশের ৯৫ ভাগ জনগণের প্রধানমন্ত্রী, নাকি এক ভাগের। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নিজে ছাত্রলীগকে নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের ওপর হামলা করার জন্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা প্রশাসনকে বারবার অনুরোধ করেছি, আমাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য। কিন্তু প্রশাসন আমাদের নিরাপত্তা দেয়নি। আপনারা কার পক্ষে সেটা আগে পরিষ্কার করুন। স্বৈরাচারের পক্ষে, নাকি জনগণের পক্ষে। যারা আমাদের ভাইদের পাখির মতো গুলি করে নির্বিচারে হত্যা করেছে তাদের ছবি বিভিন্ন পত্রিকায় এসেছে। তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।’
বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে নগর বিএনপির উদ্যোগে নগর্রীর কাজির দেউড়ির নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম আকরামের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিএনপির সর্বস্তরের নেতকর্মীরা অংশ নেয়।
জানাজা শেষে নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘মেধাবী জাতি গড়ার জন্যই শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে। তাদের দাবি একটাই- কোটা সংস্কার হোক এবং মেধাবীরা সঠিক জায়গায় স্থান পাক। এখানে কোনো দলের জন্য তারা সংগ্রাম করছে না। মেধাবী জাতির গড়তেই তারা সংগ্রাম করছে।’
তিনি বলেন, ‘এ যৌক্তিক আন্দোলনে বিএনপি একাত্মতা পোষণ করেছে। সে আন্দোলনে একাত্মতা পোষণ করতেই আমাদের ছাত্রদলের আকরামও গিয়েছিল। কিন্তু ছাত্রলীগ তাকে নির্মমভাবে খুন করেছে।’
এ সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, সাবেক সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান, দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম, উত্তর জেলার সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হালিম, নগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দিপ্তী, সাধারণ সম্পাদক মো. শাহেদ, নগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এইচ এম রাশেদ খান, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বুলু, উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সরোয়ার উদ্দিন সেলিম, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মুরাদ চৌধুরী, নগর ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাইফুল আলম ও সদস্য সচিব শরিফুল ইসলাম তুহিন উপস্থিত ছিলেন।
এদিন বিকেল ৫ টার দিকে নগরীর ওয়াসা মোড়ে জমিয়াতুল ফালাহ মসজিদে নগর আওয়ামী লীগের উদ্যেগে কোটা আন্দোলনে সংঘর্ষে নিহতদের স্মরণে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরতদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর ষোলশহর, দুই নম্বর গেট ও মুরাদপুর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে তিন জন নিহত ও প্রায় শ’খানেক আহত হন। আহতদের মধ্যে ৭১ জন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
সারাবাংলা/আইসি/পিটিএম