রংপুরে যান চলাচল কম, আন্দোলনকারীদের দখলে সড়ক
১৮ জুলাই ২০২৪ ১৬:০০
রংপুর: সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের দেওয়া ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির প্রভাব পড়েছে উত্তরের শহর রংপুরেও। সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকায় আন্দোলনকারীদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে। সড়কে যানবাহন কিছুটা স্বাভাবিকভাবেই চলছে, তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশ কম।
শিক্ষার্থীদের ‘শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও সোয়াটের ন্যাক্কারজনক হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত ও এক দফা দাবি’তে গতকাল রাতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
রংপুরের প্রবেশদ্বার নগরির মডার্ন মোড়, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন পার্কের মোড়, কামার মোড়, লালবাগ, খামার মোড়, চারতলা মোড়, শাপলা চত্বর, কাচারি বাজার, শিক্ষা অফিস এলাকায় সকাল থেকেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থী অবস্থান নিয়েছেন। এসব এলাকায় সকালে কিছু দোকানপাট খোলা দেখা গেলেও দুপুর ১২টা বাজতে বাজতেই বেশিরভাগ দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। সড়কগুলো অনেকটাই ফাঁকা। স্থানীয় মার্কেট ও শপিংমলও কমবেশি বন্ধ।
এদিকে এই কর্মসূচিতে শুধু হাসপাতাল ও জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ থাকায় অনেক ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরবাসী। প্রয়োজনে পাচ্ছেন না রিকশা কিংবা অটোরিকশা; অনেকেই পায়ে হেঁটেই গন্তব্যে রওনা দিচ্ছেন।
বেসরকারি চাকরিজীবী রওনক আরা বলেন, ‘সকাল থেকেই রাস্তাঘাটে অটোরিকশা কম চলছে। অফিসে যাওয়ার জন্য কোন যানবাহন পাচ্ছি না। খুব ভোগান্তিতে পড়েছি।’
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দিনভর সারাদেশে কোটা আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষে ৬ জন নিহত হয়। যার মধ্যে রাজধানীতে দুজন, চট্টগ্রামে তিনজন এবং রংপুরে একজন। রংপুরে নিহত শিক্ষার্থীর নাম আবু সাঈদ। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে বেরোবিতে অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন আবু সাঈদ।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় পুলিশের উপস্থিততে রংপুরের পীরগঞ্জের গ্রামের বাড়িতে জানাজা সম্পন্ন হয়। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনির্মিত প্রধান গেটের সামনে আবু সাঈদ স্মরণে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় বেগম রোকেয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটকে ‘শহীদ আবু সাঈদ তোরণ’ নামে নামকরণ ও ৬ দফা দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন আন্দোলনকারীরা।
এদিকে কোটা সংস্কারের আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ।
বুধবার (১৭ জুলাই) রাতে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (প্রশাসন) সায়েকুজ্জামান ফারুকীকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়।
এদিকে পুলিশের ওপর হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের নামে রংপুর মেট্রোপলিটন তাজহাট থানায় মামলা করেছে হয়েছে। মামলাটি করেছেন তাজহাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) বিভুতি ভূষণ।
গতকাল বিকেলে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মনিরুজ্জামান বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পরিদর্শন করি করেন।
উপাচার্যসহ বিভিন্ন স্থানে হামলার ঘটনায় ছয় মামলা করা হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘বহিরাগত কিছু লোকজন এসেছিল বলে আমাদের কাছে তথ্য আছে। তারাসহ কিছু ব্যক্তি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। মালামাল পুড়িয়ে ফেলেছে, বঙ্গবন্ধু হলে আগুন দেওয়া হয়েছে। অনেকগুলো গাড়িতে আগুন দিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে আহত করেছে। ওয়ারলেস সেট পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। সব বিষয়ে মোট ৬টি মামলা দায়ের করা হবে।’
সারাবাংলা/একে