Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কমপ্লিট শাটডাউনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৯

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
১৮ জুলাই ২০২৪ ২০:২১

ঢাকা: দেশব্যাপী কমপ্লিট শাটডাউনে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের কর্মীদের সংঘর্ষে অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দিনব্যাপী সংঘর্ষে নিহতের এই ঘটনা ঘটে। নিহতদের মধ্যে ঢাকায় ১৪ জন ও রাজধানীর বাইরে মাদারীপুরে একজন, নরসিংদীতে দুইজন ও চট্টগ্রামে দুইজন রয়েছেন।

রাজধানীর উত্তরায় কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের গুলিতে বেসরকারি ইউনিভার্সিটির ৪ ছাত্রের মৃত্যু হয়। চারজনের মরদেহ কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতালে রাখা হয়।

বিজ্ঞাপন

কুয়েত-বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের চিকিৎসক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে অনেকে আহত অবস্থান আসেন। সঙ্গে চারজনের মরদেহও আসে। আমরা মরদেহগুলো রেখেছি।’ ওই চারজন বিভিন্ন বেসরকারি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী।

ধানমণ্ডির রাপা প্লাজার কাছে আহত হন কিশোর ফারহান ফাইয়াজ। রিকশায় আহত ফারহানকে নিয়ে হাসপাতালে ছোটে উদ্ধারকারীরা। বাঁচানোর চেষ্টা চললেও সাত মসজিদ রোডের সিটি হাসপাতালে মারা যান তিনি। তার মৃত্যুতে পাগলপ্রায় মা। বলেন, ‘সে এখন মৃত। আমি এর বিচার চাই।’

ফারহানের মা নাজিয়া খান তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে ছেলে হারানোর বিচার চেয়েছেন। তিনি লেখেন, ‘আমার ছেলে ফারহান। সে এখন মৃত। আমি এর বিচার চাই।’

ফারহান ফাইয়াজ ঢাকা রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র।

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে সাভারে গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুরে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে জানা যায়, নিহত ওই শিক্ষার্থী এমআইএসটিতে অধ্যয়নরত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার ইউসূফ আলী গণমাধ্যমে জানান, নিহত শিক্ষার্থীর শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে। তাকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। তিনি আরও জানান, আহত আরও পাঁচজন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় রাজধানীর বাড্ডা-রামপুরা এলাকা। এ সময় গুলিবিদ্ধ হন এক অ্যাম্বুলেন্সচালক। গুরুতর আহত হন আরও অনেকে। পরে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

রামপুরার বেসরকারি ফরাজি হাসপাতালের ডিজিএম রুবেল হোসাইন গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। নিহতের নাম দুলাল মাতবর। তিনি পেশায় গাড়ির চালক। সংঘাতের সময় তিনি একটি মাইক্রোবাস চালিয়ে ওই এলাকা পার হচ্ছিলেন।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় কোটা আন্দোলনে শর্টগানের গুলিতে অজ্ঞাত (৩৫) বছরের এক যুবক নিহত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৮জুলাই) বিকাল পৌনে ৬টার দিকে পথচারীরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে আসা রেজাউল করিম অনিক জানান, বিকেলে যাত্রাবাড়ী শনিরআখরা রোডের ফল-পট্টির সামনে সংঘর্ষ চলছিল। এসময় পুলিশ এলোপাথারি গুলি করে। তখন ওই যুবক গুলিতে আহত হয়ে সড়কে পড়ে যায। পরে হাসপাতালে নিয়ে আসলে মারা যায়। নিহত ওই যুবক রিকশাচালক ছিল। ঘটনার সময় তিনি রিকশা চালিয়ে যাচ্ছিল।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. বাচ্চু মিয়া মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, পথচারীরা ওই যুবককে রক্তাক্ত অবস্থায় নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষনা করেন। তার মুখমণ্ডলে ও হাতে গুলির চিহ্ন আছে।

মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে রাখা হয়েছে। তার পরনে ছিল কালো গোল গলা গেঞ্জি ও চেক লুঙ্গি।

এ ছাড়া রাজধানীর রামপুরা আফতাব নগরের সামনে ইমপিরিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী মো. জিল্লুর শেখ পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। জিল্লুর কলেজের একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল অহিদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গুলিতে আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা নিতে আসা অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা টাইমসের রিপোর্টার মেহেদি হাসানসহ ৪ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আজিমপুরে সংঘর্ষে গুলিতে একজন নিহত হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ৬ জনের মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে।

মাদারীপুরে কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের সময় পুলিশের ধাওয়ায় শকুনি লেকে পড়ে নিখোঁজ শিক্ষার্থীর মরদেহ মিলেছে। উদ্ধার শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিস। আজ বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) দুপুর দেড়টার দিকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. মনিরুজ্জামান ফকির মরদেহ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

নরসিংদীতে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী ও পুলিশের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে দুই জন নিহত হয়েছে। এ সময় পুলিশের ছোড়া গুলিতে আহত হয়েছেন অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। এদিন বিকেলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নরসিংদীর জেলখানা মোড়ে এই ঘটনা ঘটে।

নিহতরা হলেন- নরসিংদীর সদর উপজেলার চিনিশপুরের পল্লি চিকিৎসক রফিকুল ইসলামের ছেলে ও নরসিংদীর এনকেএম হাইস্কুল অ্যান্ড হোমসের নবম শ্রেণির তাহমিদ ভুইয়া (১৫)। পলাশ উপজেলার দড়িচর এলাকার আব্দুল কাইয়ূমের ছেলে ইমন হোসেন (২১)। আহতদের ২৫ জন জেলা হাসপাতাল ও বাকিরা নরসিংদী সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রাইভেট ক্লিনিকে চিকিৎসা নিয়েছেন।

চট্টগ্রামে ২ জনের মৃত্যু: দেশব্যাপী কমপ্লিট শাটডাউন বা সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি চলার সময় চট্টগ্রাম নগরীর বহাদ্দারহাটে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারী ও পুলিশের সংঘর্ষে দুজন নিহতের তথ্য পাওয়া গেছে।

সংঘর্ষে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বিকেলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

নিহতদের একজন মোহাম্মদ ইমাদ (১৮)। তিনি পটিয়া সরকারি কলেজের উচ্চমাধ্যমিকের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র বলে জানা গেছে। আরেকজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। তার আনুমানিক বয়স ২২ বছর।

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (জনসংযোগ) তারেজ আজিজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরাও শুনেছি, সংঘর্ষের ঘটনায় দুজন মারা গেছে। এর বেশি কিছু এখনও জানি না।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আলাউদ্দিন তালুকদার সারাবাংলাকে জানান, নগরীর বহদ্দারহাটে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত অবস্থায় দুজনকে হাসপাতালে আনা হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তাদের মৃত ঘোষণা করেছেন। তারা ‍গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন।

এর আগে, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে নগরীর বাকলিয়ায় শাহ আমানত সেতুর প্রবেশমুখ অবরোধ করে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক অচলের চেষ্টা করেন আন্দোলনকারীরা। পুলিশ তাদের সরিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পুলিশ টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুঁড়ে আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে মহাসড়ক সচল করে।

শাহ আমানত সেতু এলাকায় বাধা পেয়ে আন্দোলনকারীরা নগরীর বহদ্দারহাট মোড়ে গিয়ে অবস্থান নেন। সেখানে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। মুর্হুমুহু ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলির শব্দে পুরো এলাকায় আতঙ্কজনক পরিস্থিতি তৈরি হয়। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা বহদ্দারহাট পুলিশ বক্সে আগুন ধরিয়ে দেয়।

ফায়ার সার্ভিসের আগ্রাবাদ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে বহদ্দারহাট পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। কালুরঘাট ফায়ার সার্ভিস থেকে দুইটি ইউনিট আগুন নেভাতে যেতে চাইলেও আন্দোলনকারীদের বাধায় গাড়ি দুইটি আটকে ছিল। পরে পুলিশের নিরাপত্তায় একটি গাড়ি ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ করছে।

এদিকে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সহ-সমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ রাফি ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে কর্মসূচি সমাপ্ত ঘোষণা করেন।

চলমান কোটা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনে আজকে সকাল থেকে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করছে শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে তারা সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে।

এর আগে, মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে ৬ জনের মৃত্যু হয়। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় দুইজন, চট্টগ্রামে তিনজন ও রংপুরে একজনের মৃত্যু হয়।

সারাবাংলা/ইউজে/একে

কোটা আন্দোলন কোটা সংস্কার আন্দোলন পুলিশের গুলি সংঘর্ষ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর