Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যেভাবে পরিপত্র থেকে আপিল বিভাগে কোটা সংস্কার ইস্যু

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৩ জুলাই ২০২৪ ২১:২৫

২০১৮ সালে জারি করা সরকারের পরিপত্র বাতিল করে হাইকোর্ট রায় দিলে ফের সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। সারাবাংলা ফাইল ছবি

ঢাকা: সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা সংরক্ষণের বিরুদ্ধে ছয় বছর আগে আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। সে আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিয়েছিলেন, কোটাই রাখবেন না তিনি। পরে সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে সব ধরনের কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে।

হাইকোর্ট বিভাগ ঘুরে আরেক রক্তক্ষয়ী ও প্রাণঘাতী আন্দোলনকে সাক্ষী করে শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ আদালত আপিল বিভাগে নিষ্পত্তি হয়েছে এ মামলার। রোববার (২১ জুলাই) হাইকোর্টের রায় বাতিল ঘোষণা করে দেওয়া রায়ের পাশাপাশি পর্যবেক্ষণে সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন, সরকারি চাকরিতে কোটা থাকতে পারে সব মিলিয়ে ৭ শতাংশ, বাকি ৯৩ শতাংশ পদে মেধাতালিকা থেকে নিয়োগ দিতে হবে।

বিজ্ঞাপন

কোটা ইস্যুতে সরকার ওই পরিপত্র জারি করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, নবম গ্রেড (আগের প্রথম শ্রেণি) ও দশম থেকে ত্রয়োদশ গ্রেডের (আগের দ্বিতীয়) সব সরকারি চাকরিতে শূন্য পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হবে। এর ফলে এর আগে এসব চাকরিতে যে ৫৬ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত ছিল, তা সম্পূর্ণভাবে বাতিল হয়ে যায়। শতভাগ নিয়োগ মেধার ভিত্তিতে হয়।

এই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন মুক্তিযুদ্ধের সন্তানরা। ২০২১ সালের ৭ ডিসেম্বর ওই পরিপত্রের বৈধতার প্রশ্নে সরকারের উদ্দেশে রুল দেন হাইকোর্ট। রুলের জবাবের পর গত ৫ জুন রুল যথাযথ ঘোষণা করে আদালত রায় দেন। রায়ে হাইকোর্ট ২০১৮ সালের পরিপত্রকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেন।

বিজ্ঞাপন

হাইকোর্টের এই রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালতে আবেদন করেন। ৯ জুন আদালত বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠান। আপিল বিভাগ ৪ জুলাই ‘নট টুডে’ আদেশ দেন। অর্থাৎ সেদিন শুনানি না নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিলের (আপিলের অনুমতি) নির্দেশনা দেন।

এদিকে ৯ জুলাই হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী আল সাদী ভূঁইয়া ও আহনাফ সাঈদ খান চেম্বার আদালতে আবেদন করেন। চেম্বার আদালত তাদের আবেদন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ১০ জুলাই দিন নির্ধারণ করেন।

ওই দিন (১০ জুলাই) রাষ্ট্রপক্ষ ও দুই শিক্ষার্থীর আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ কোটার বিষয়ে (সাবজেক্ট ম্যাটার) সব পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ৭ আগস্ট পর্যন্ত হাইকোর্টের রায় অকার্যকর থাকবে বলেও আদেশ দেন।

এদিকে কোটার মামলায় ৫ জুন হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছিলেন, ১১ জুলাই সেই রায়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ (অপারেটিভ পার্ট) প্রকাশ করেন বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ। একই বেঞ্চ ১৪ জুলাই রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করেন।

এরপর গত ১৬ জুলাই হাইকোর্টের রায় বাতিল চেয়ে লিভ টু আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। এর মধ্যে রাজপথে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘর্ষ-সংঘাত সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বহু প্রাণহানিও ঘটে। পরে গত বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) আইনমন্ত্রী জানান, আপিল বিভাগে কোটা নিয়ে শুনানি এগিয়ে আনতে সরকার অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছে।

আইনমন্ত্রী জানান, শুক্র-শনি আদালত বন্ধ থাকায় রোববার (২১ জুলাই) যেন আপিল বিভাগে শুনানি হয়, সেটি অ্যাটর্নি জেনারেল নিশ্চিত করছেন। অন্যদিকে বৃহস্পতিবারই দুই ঢাবি শিক্ষার্থী হাইকোর্টের রায় বাতিল চেয়ে লিভ টু আপিল করেন। ওই দিন বিশেষ চেম্বার জজ আদালতের বিচারক বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম এ বিষয়টি শুনানির জন্য রোববার দিন নির্ধারণ করে দেন।

শেষ পর্যন্ত রোববারই দীর্ঘ শুনানি নিয়ে রাষ্ট্রপক্ষ ও দুই শিক্ষার্থীর লিভ টু আপিলের নিষ্পত্তি করেছেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বিভাগ বেঞ্চ। সেখানেই রায়ে আপিল বিভাগ বলেছেন, হাইকোর্টের রায়টি সম্পূর্ণভাবে বাতিল হয়ে যাবে।

পাশাপাশি আপিল বিভাগ মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ কোটা রেখে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বাকি ৯৩ শতাংশ পদ মেধাতালিকা থেকে পূরণের জন্য গেজেট জারি করতে সরকারকে নির্দেশনা দিয়েছেন। প্রয়োজনে সরকার কোটার এই হার পরিবর্তন, সংশোধন বা সংস্কার করতে পারবে বলেও জানিয়েছেন আপিল বিভাগ।

সারাবাংলা/টিআর

আপিল বিভাগ কোটা আন্দোলন কোটা সংস্কার কোটা সংস্কার আন্দোলন পরিপত্র হাইকোর্টের রায়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর