স্বাভাবিক ঢাকা, চলছে গাড়ি
২৪ জুলাই ২০২৪ ১৫:৩৯
ঢাকা: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সংঘাত-সহিংসতার মধ্যে তিনদিন সাধারণ ছুটির পর সীমিত পরিসরে সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত খুলে দেওয়া হয়েছে। ফলে বুধবার সকাল ১০টা থেকে অফিস যাওয়ার তাড়া শুরু হয়ে যায়। সকালের দিকে রাজধানী ঢাকার পথে ঘাটে বেশ যানজটও দেখা গেছে। এদিকে কিছু কিছু শপিং মল, দোকান-পাটও খুলেছে। টার্মিনালগুলোতে থেকে বাস ছেড়ে যেতেও দেখা গেছে। তবে তুলনামূলক যাত্রী সংখ্যা একেবারেই কম ছিল।
বুধবার (২৪ জুলাই) রাজধানীর সায়েদাবাদ মতিঝিল, কাকরাইল, শান্তিনগর, শাহবাগ, ফার্মগেট, মিরপুর, কল্যাণপুর, বনানী, তেজগাঁও, মহাখালীসহ বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে অন্যান্য দিনের তুলনায় গাড়ির চাপ বেশি। কোথাও কোথাও প্রচণ্ড যানজট লেগে ছিল। যানজটে ঢাকার রাস্তায় এ করকম স্থবির অবস্থা দেখা দিয়েছে। আবার পর্যাপ্ত গণপরিবহন না পাওয়ায় এবং যানজটের কারণে অফিসগামীরা পড়েছেন ভোগান্তিতে।
কারফিউ শিথিলের সময়ে বুধবার সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বিভিন্ন অফিস খোলা থাকছে। কিন্তু যানবাহন পেতে দেরি হওয়ায় এবং যানজটে পড়ে অনেকে সময়মতো কর্মস্থলে পৌঁছাতে পারেননি। অনেক বাসস্ট্যান্ডে শত শত মানুষকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে কিন্তু বাসের সংখ্যা কম ছিল। সিএনজিচালিত অটোরিকশা যা আসছে, ফাঁকা নেই।
এদিকে রাজধানীর বেইলি রোডে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানকার দোকানপাট খুলেছে। তবে লোক সমাগম নেই বললেই চলে। বিশেষ করে ব্রান্ডের পোশাকের দোকানগুলো খুলতে দেখা গেছে। এসব শো-রুমের কর্মীরা জানান, কারফিউ শিথিল করায় কয়েক ঘণ্টা খোলা রাখার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
অ্যাস্ট্রোরিয়নের ম্যানেজার মিথিলা দত্ত বলেন, গত কয়েকদিন ধরে তো শোরুম খোলার পরিস্খিতি ছিলোনা। আজ বেশি সময় ধরে কারফিউ শিথিল থাকায় অনেকটা রিস্ক নিয়ে খুলেছি। ইয়ালোর কর্মী সোহাগ বলেন, কারফিউ শিথিল হওয়ায় শো রুম খুলতে হয়েছে।
এছাড়া খোলা দেখা গেল আর্টিসান, ইনফিনিটি, টাঙ্গাইল শাড়ি কুটির, অঞ্জনস, রঙ, কে-ক্রাফটের মতো ব্রান্ডগুলোর শো রুম। আবার ক্যাপিটার সিরাজুল শপিং মল, নাভানা টাওয়ারও বুধবার খোলা হয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, ৫টার পর আবার বন্ধের নির্দেশনা রয়েছে। তারা বলেন, একদিকে কম সময়ের জন্য দোকান খোলার অনুমতি দিয়েছে কিন্তু কোনো ক্রেতা নেই। সাধারণত ক্রেতারা বিকালেই কেনাকাটা করতে এসে থাকেন। এ পরিস্থিতিতে বিকেল বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
এদিন দুপুরে রাস্তাঘাটেও লোকজন কম দেখা গেছে। মতিঝিলে সিগন্যালে কিছুটা গাড়ির চাপ দেখা গেলেও সড়কে কোনো জ্যাম ছিল না। কাকরাইল, শান্তিনগর সড়কে সকালে জ্যাম থাকলেও দুপুরে জ্যাম ছিল না।
এদিকে সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট অঞ্চলে বাস ছেড়ে যাচ্ছে। বুধবার (২৪ জুলাই) সকাল থেকে এসব বাস দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে যাচ্ছে। তবে যাত্রীর সংখ্যা তুলনামূলক কম দেখা গেছে।
সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে কথা হয় যাত্রী মুক্তাদিরের সঙ্গে তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম থেকে একটা কাজে ঢাকায় এসে আটকা পড়েছে। আজ বাস চালু হওয়ায় এখন যাচ্ছেন। তিনি জানালেন, এই কয়দিন বাস চলাচল বন্ধ থাকায় বাড়ি যেতে পারেননি।
হানিফ বাস কাউন্টারের আবদুল্লাহ বলেন, সকাল ৯টা থেকে বাস ছেড়ে দিয়েছি। আমাদের তিনটি বাস ছেড়ে গেছে। তার মধ্যে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে গেছে দুটি আর ঢাকা থেকে বরিশালে গেছে একটি বাস। বিকেল ৫টা পর্যন্ত বাস চলবে।
কুমিল্লার লাকসামগামী তিশা পরিবহনের সুপারভাইজার মো. শান্ত বলেন, সকাল ৬টা থেকে বাস চলছে। চলবে ৫টা পর্যন্ত। তবে যাত্রী সংখ্যা একেবারেই কম।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন সহিংস রূপ নেয় গত মঙ্গলবার থেকে। ওইদিন কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে বিক্ষোভ ও সংঘর্ম ছড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। এসব ঘটনায় শতাধিক প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি বিজিবি নামানো হয়। একপর্যায়ে সরকার গত শুক্রবার রাত ১২টা থেকে সারা দেশে কারফিউ জারি করে। একইদিনে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়। এখনো বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করে যাচ্ছে সেনাবাহিনী। প্রথম দিন দুই ঘণ্টা বিরতি দিয়ে কারফিউ চলে। পরদিন তিন ঘণ্টা বিরতি দেওয়া হয়।
মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) ঢাকা, গাজীপুর, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জে চার ঘণ্টা বিরতি দেওয়া হয়। আর ঢাকায় ১০টা থেকে ৫টা পর্যন্ত শিথিল করা হয় কারফিউ। এই সুযোগে মানুষ প্রয়োজনীয় কাজ সেরে নিচ্ছেন। যদিও স্কুল কলেজ এখনো বন্ধ রয়েছে।
সারাবাংলা/জেআর/ইআ