Thursday 28 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফেসবুকে না কিশোর-কিশোরীদের, ঝুঁকছে অন্য সামাজিক মাধ্যমে


২ জুন ২০১৮ ১৮:২১

। সারাবাংলা ডেস্ক ।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের তুমুল জনপ্রিয় সাইট ফেসবুকের জনপ্রিয়তা কমছে কিশোর কিশোরীদের কাছে। এমনটাই জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি গবেষণা সাইট।

সম্প্রতি পিউ রিসার্চ সেন্টার আমেরিকান কিশোর-কিশোরীদের কাছে জনপ্রিয় সোশাল মিডিয়া সংক্রান্ত এক জরিপ পরিচালনা করে। ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী আমেরিকান টিনেজারদের নিয়ে এই জরিপ করা হয়। জরিপে প্রকাশিত, ২০১৫ সাল থেকে ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম আর স্ন্যাপচ্যাটের জনপ্রিয়তা বাড়ার ফলে বড় সংখ্যক টিন বা কিশোর-কিশোরির কাছে জনপ্রিয়তা হারিয়েছে ফেসবুক।

২০১৫ সালে পিউ রিসার্চ সেন্টার পরিচালিত একই ধরণের জরিপে দেখা গিয়েছিল ৭১% আমেরিকান কিশোর ফেসবুক ব্যবহার করত। সাম্প্রতিক জরিপে সংখ্যাটা মাত্র ৫১%। তিন বছর আগে ফেসবুকই ছিল সবচাইতে জনপ্রিয় সামাজিক মাধ্যম।

সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে আমেরিকান টিনেজারদের মাঝে ৮৫%  ইউটিউব ব্যবহার করে, ৭২% ইনস্টাগ্রাম আর ৬৯% স্ন্যাপচ্যাট। যেখানে ২০১৫ সালের জরিপে দেখা গিয়েছিল ইনস্টাগ্রাম ব্যবহারকারী টিনেজারদের সংখ্যা ৫২%, আর স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪১%। ২০১৪-১ এর ওই জরিপে ইউটিউব অন্তর্ভুক্ত ছিলনা।

আগের জরিপে ফেসবুক ব্যবহারকারী টিনেজারদের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থানও বিবেচনায় ছিল। তুলনামূলক কম আয়ের পরিবারের টিনেজারদের মাঝে ফেসবুক ব্যবহারের প্রবণতা বেশি ছিল। বছরে ৩০ হাজার ইউএস ডলারের চাইতে কম আয়, এমন পরিবারের ফেসবুক ব্যবহারকারি টিনেজার ছিল ৭০%। অন্যদিকে ৭৫ হাজার ইউএস ডলারের চাইতে বেশি বাৎসরিক আয় এমন পরিবারের টিনেজারদের মাঝে ফেসবুক ব্যবহারকারী ছিল ৩৬%।

বিজ্ঞাপন

বর্তমান গবেষণায় কোন অনলাইন প্লাটফর্ম সবচাইতে বেশি ব্যবহার করে জানতে চাওয়ায় মাত্র ১০% বলে যে তারা ফেসবুক ব্যবহার করে। অন্যদিকে ৩৫% স্ন্যাপচ্যাট, ৩২% ইউটিউব আর ১৫% ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার করে বলে জানায়। ইনস্টাগ্রামের মালিকানা অবশ্য ফেসবুকের। কিন্তু তবুও স্ন্যাপচ্যাট আর ইউটিউবের চাইতে ব্যবহারকারী কম।

‘টিনস, সোশাল মিডিয়া এন্ড টেকনোলজি ২০১৮’ শিরোনামের এই জরিপে দেখা যাচ্ছে, এবছরও তুলনামূলক কম আয়ের পরিবারের টিনেজারদের মাঝে ফেসবুক ব্যবহারের প্রতি আকর্ষণ বেশি। কম আয়ের পরিবারের টিনেজারদের সংখ্যা যেখানে ২২% সেখানে তুলনামূলক বেশি আয়ের পরিবারে ফেসবুক ব্যবহারকারী টিনেজারদের সংখ্যা ৪%।

শুধু অর্থনৈতিক অবস্থানই না, এই জরিপে ফেসবুক ব্যাবহারকারী আমেরিকান টিনেজারদের লৈঙ্গিক আর জাতিগত বিভেদের বিষয়টাও উঠে এসেছে। যেখানে কিশোরীদের মাঝে স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহারের ঝোঁক বেশি সেখানে কিশোররা বেশি আকৃষ্ট ইউটিউবে। কিশোর স্ন্যাপচ্যাট ব্যবহারকারী ২৯% আর কিশোরী সেখানে ৪২%। ইউটিউবে কিশোর ব্যবহারকারী ৩৯% আর কিশোরী ব্যবহারকারী ২৫%।

নিগ্রো টিনেজাররা শ্বেতাঙ্গ টিনেজারদের তুলনায় বেশি ফেসবুক ব্যবহার করে (২৬% বনাম ৭%) । আবার অন্যদিকে শ্বেতাঙ্গ টিনেজাররা (৪১%) হিস্পানিক(২৯%) ও নিগ্রোদের (২৩%) তুলনায় বেশি স্ন্যাপচ্যাটে সময় কাটায়।

এর আগে এবছরের ফেব্রুয়ারিতে আমেরিকান টিনেজারদের গণহারে ফেসবুক ব্যবহার বন্ধ করা নিয়ে একটা ইন্টারনেট ভিত্তিক জরিপ সংস্থা জরিপ করেছিল। সেই জরিপে উঠে এসেছিল ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী আমেরিকান ফেসবুক ব্যবহারকারি টিনেজারদের সংখ্যা ২০১৭ সাল নাগাদ ৯.৯% কমে এসেছে। এই সংস্থা এর আগে ১.২ মিলিয়নের বেশি ২৫ বছরের কম বয়সী আমেরিকানের ফেসবুক ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে ভবিষ্যতবাণী করেছিল।

বিজ্ঞাপন

ই-মার্কেটিয়ার অ্যানালিস্ট পল ভারনা দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, ‘দীর্ঘসময় ধরে এরকম অকল্পনীয় ঘটনা পর্যবেক্ষণ করছিলাম আমরা।’ নিজের ১৪ ও ১৭ বছর বয়সী মেয়েদের তিনি উপযুক্ত কেস স্টাডি হিসেবে উল্লেখ করেন।

পলের বড়মেয়ের বয়স যখন ১৩ তখন সে একটা ফেসবুক একাউন্ট খোলে। কিন্তু অল্পদিনেই সে বুঝে ফেলে এখানে আসলে তার কিছু করার নাই। আর ছোটজন যখন ১৩ তে পা দেয়, ফেসবুক একাউন্ট খোলার কোন ইচ্ছাই তার জাগেনি। সে তখন থেকে ইনস্টাগ্রামেই আছে, বলে জানান পল। পল ভারনা আরও বলেন, যদিও ইনস্টাগ্রামের মালিকানা এখন ফেসবুকের তবুও নিজেদের ফ্ল্যাগশিপ ব্র্যান্ডের এই সমস্যা নিয়ে তাদের আরও খতিয়ে দেখা দরকার।

পল ভারনার মতে, ক্যামব্রিজ অ্যানালিটিকা স্ক্যান্ডালের পর ফেসবুকের ব্যবহারকারী কমে যাওয়া আসলে ফেসবুকের জন্য একটা টিকে থাকার সমস্যা।

পিউ রিসার্চের এবছরের সমীক্ষায় আরও দেখা যাচ্ছে ৯৫% টিনেজার স্মার্টফোন ব্যবহার করে ২০১৫ সালে যেটা ছিল ৭৩%। ৪৫% টিনেজার জানায় তারা প্রায় সারাক্ষণই ইন্টারনেট ব্যবহার করে। যেখানে ২০১৫ সালে এর সংখ্যা ছিল ২৪%।

বিপুল সংখ্যক টিনেজাররা মুখ ফিরিয়ে নিলেও ২.২ বিলিয়ন ব্যবহারকারী নিয়ে ফেসবুকই এখন পর্যন্ত সবচাইতে বড় সোশাল প্লাটফর্ম। অনুরোধ করা স্বত্বেও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ কোন মন্তব্য করতে রাজী হয়নি।

দ্য গার্ডিয়ান অবলম্বনে রাজনীন ফারজানা

সারাবাংলা/ এসবি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর