Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রংপুরে নাশকতায় ১১ কোটি টাকার ক্ষতি, ১১ মামলায় গ্রেফতার ১৮২

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৫ জুলাই ২০২৪ ১৯:১৩

রংপুর: রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নারকীয় তাণ্ডবের ঘটনা ঘটেছে। দুই পুলিশ ফাঁড়ি, মহানগর তাজহাট থানা, তিন পুলিশ কর্মকর্তার কার্যালয়, পুলিশ লাইন্স, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ কার্যালয়সহ ১০টি সরকারি অফিসে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।

পুলিশের দাবি, এসব তাণ্ডবের বিভিন্ন ভিডিও ও সিসিটিভির ফুটেজ পুলিশের কাছে সংরক্ষিত আছে। বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া ভিডিও-অডিও পরীক্ষা করে তাণ্ডবের হোতা, মদদদাতা, অর্থ সরবরাহকারীসহ সরাসরি তাণ্ডবে অংশ নেওয়া ৫০০ জনকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এ সব ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১১ মামলায় বুধবার (২৪ জুলাই) পর্যন্ত ১৮২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে সরাসরি অংশ নেওয়া অনেকেই বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। বুধবার সন্ধ্যায় রংপুর মহানগর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

রংপুরে জ্বালাও-পোড়াওয়ের ঘটনায় যে ১১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে এর মধ্যে রংপুর মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি থানায় মহানগর আওয়ামী লীগ ও জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে তাণ্ডবের ঘটনায় ২৪ জুলাই ভোরে পৃথক দুটি মামলা করা হয়েছে। মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষে মামলার বাদী হয়েছেন মহানগরের যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাশেম। তিনি বিএনপি ও জামায়াতের ৭০ জন নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৫০০ জনের নামে মামলা করেন।

এ বিষয়ে মহানগর যুগ্ম-আহ্বায়ক আবুল কাশেম জানান, মহানগর আওয়ামী লীগ অফিসে কিছুই নেই। অফিসের সমস্ত মালামাল ভাঙচুর, লুটপাট করে আগুন ধরিয়ে কার্যালয়টি ভস্মীভূত করা হয়েছে। এই নারকীয় তাণ্ডব কোটা আন্দোলনকারীরা করেনি। পরিকল্পিতভাবে বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীরা এই তাণ্ডব চালিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

আর জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষে মামলার বাদী হয়েছেন আহ্বায়ক কমিটির সদস্য জিনাত হোসেন লাভলু। তিনি মামলায় ৬০ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাত আরও ৫০০ জনের কথা উল্লেখ করেন। জিনাত হোসেন লাভলু অভিযোগ করেন, তাদের অফিসের সব মালামাল লুট করা হয়েছে। আসবাবপত্র ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।

এ ছাড়াও পরিবার পরিকল্পনা অফিস, মৎস্য অধিদফতর অফিস ও সমবায় মার্কেটে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগে পৃথক পৃথক তিনটি মামলা করা হয়েছে।

জানা গেছে, এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত যে ১১ মামলায় বুধবার পর্যন্ত ১৮২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে সরাসরি অংশ নেওয়া অনেকেই বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মী বলে নিশ্চিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- সাবেক যুবদল নেতা ও ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর লিটন পারভেজ, ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও জাপা নেতা রফিকুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি কাওসার জামান বাবলা, জামায়াত নেতা মিজানুর রহমান, হারাগাছ থানা জামায়াত নেতা মাকিউল জামান, জেলা জাতীয় ছাত্র সমাজের সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম।

যা বলছে বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ ও র‍্যাব

রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন বলেন, ‘অবশ্যই চূড়ান্তভাবে আমরা আইনি ব্যবস্থা নেব। আমাদের কাছে ফুটেজ রয়েছে। এগুলো সব পর্যালোচনা করা হবে।’

রংপুর পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘কোটা সংস্কারে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির আন্দোলনকে পুঁজি করে রংপুরে নাশকতাকারীরা পরিকল্পিতভাবে তাণ্ডব চালায় নগরজুড়ে। ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে সরাসরি অংশ নেয় বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা।’ তবে কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।

র‌্যাব-১৩-এর অধিনায়ক কমান্ডার কামরুল হাসান বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট সবাইকে গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। তথ্য সংগ্রহ চলছে। আশা করছি, দ্রুতই তাদের গ্রেফতার করা হবে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি

নাশকতাকারী যেই হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রংপুরের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত নাশকতাকারীরা চিহ্নিত হবে না, ততক্ষণ আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রংপুরে যারা দেশের সম্পদ নষ্ট করেছে, থানা লুট করেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পদ নষ্ট করেছে, ভিসিকে হত্যার চেষ্টা করেছে, সবাইকে চিহ্নিত করা হবে। যারা অর্থায়ন করেছে, তাদের চিহ্নিত করা হবে। বিচারের ব্যবস্থা করা হবে। আমরা কাউকে ছাড় দেব না।’

সারাবাংলা/পিটিএম

আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল রংপুর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর