বিধ্বস্ত টোল প্লাজায় অ্যানালগ পদ্ধতিতে টোল আদায়
২৫ জুলাই ২০২৪ ২৩:০৭
ঢাকা: কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে রাজধানীর প্রবেশমুখে হানিফ ফ্লাইওভারের কুতুবখালী ও ডেমরা অংশের টোলপ্লাজায় আগুন দেওয়া হয় বুধবার (১৭ জুলাই)। আগুনে পুড়ে যায় বিধ্বস্ত টোলপ্লাজার অটোমেটিক ডিজিটাল মেশিনসহ সব বুথই। এ কারণে কার্যত ডিজিটাল পদ্ধতিতে টোল আদায় ব্যবস্থাপনাও ভেঙে পড়ে।
শুক্রবার (১৯ জুলাই) রাত ১২টায় কারফিউ জারি করার পরে পরিস্থিতি শান্ত হওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে ফ্লাইওভারে গাড়ি চলাচলও শুরু হয়। আর তাই পরিস্থিতি মোকাবিলায় ডিজিটাল পদ্ধতির বদলে শুরু হয় অ্যানালগ পদ্ধতিতে টোল আদায়।
রোববার (২০ জুলাই) সরেজমিনে হানিফ ফ্লাইওভারের কুতুবখালী ও ডেমরা পয়েন্টের টোল প্লাজায় দেখা যায়, আগুনে পুড়ে যাওয়া বুথের বাইরে চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসে টোল আদায় করা হচ্ছে। বিভিন্ন পরিবহনের জন্য নির্ধারিত টোলের অঙ্ক বসানো কাগজের স্লিপ দিয়ে আদায় করা হচ্ছে টোল। তবে তুলনামূলকভাবে গাড়ির সংখ্যা কম থাকায় সোমবার (২২ জুলাই) পর্যন্ত তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। তবে মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) থেকে বাড়তে থাকে গাড়ির সংখ্যা।
বুধবার (২৪ জুলাই) থেকে মহাসড়কে কারফিউ শিথিলের সময়ে বাস চলাচলও শুরু হয়ে গেলে টোল প্লাজা অংশে বাড়তে থাকে গাড়ির লাইন। ফলে দীর্ঘ যানের লাইনের কারণে টোল প্লাজায় জটের সৃষ্টি হয়। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, আগুনে পুড়ে যাওয়া বিধ্বস্ত টোল প্লাজার বুথগুলো পুড়ে যাওয়ার কারণে অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। দীর্ঘ সময় ধরে ডিজিটাল মেশিনে নিরবিচ্ছিন্নভাবে দ্রুত টোল আদায় করা সম্ভব হলেও পালটে যাওয়া প্রেক্ষাপটে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রয়োজন অনুসারে জনবল বাড়িয়ে সেবা দিয়ে যাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে।
রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভারের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচারের টোল ট্রাফিক ম্যানেজম্যান্টের কর্মকর্তা এরফানুল আজিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের কুতুবখালী ও ডেমরায় টোল প্লাজার যে সিস্টেম সেটি কিন্তু পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। বর্তমানে আমাদের ম্যানুয়াল বা অ্যানালগ পদ্ধতিতেই এই টোল সংগ্রহ করতে হচ্ছে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি দ্রুততার সঙ্গে সেবা দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে অ্যানালগ পদ্ধতিতে টোল নেওয়া হলেও আমাদের মোবাইল টিকেটিং সিস্টেমও কিন্তু আছে। তবে ডাটা সমস্যার কারণে আমরা এখনই মোবাইল টিকেটিং সিস্টেম চালু করতে পারছি না। ডাটা সমস্যার সমাধান হয়ে গেলে আমরা মোবাইল টিকেটিং পদ্ধতি চালু করতে পারবো। তখন আরও দ্রুত সেবা দেওয়া সম্ভব হবে।’
একইদিনে অবশ্য হানিফ ফ্লাইওভারের অন্যান্য প্রান্তের টোল প্লাজাগুলোতে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্রও। ডিজিটাল অটোমেটিক মেশিনে এসব বুথগুলোতে নেওয়া হচ্ছে টোল।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষ ও ভাংচুরের ঘটনায় দেশজুড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে যোগাযোগ অবকাঠামো। যাত্রাবাড়ীতে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজার পাশাপাশি পুড়ে গেছে মহাখালী ও বনানীতে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা। ঢাকার মেট্রোরেলের দুটি স্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুর হয়েছে। বনানীর সেতু ভবন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রধান কার্যালয় ও মিরপুরের আঞ্চলিক কার্যালয়, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের একটি কার্যালয়ে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সড়ক বিভাজকের রেলিং, সড়কবাতিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আন্দোলনে ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় সড়ক অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে এখনও রাস্তার ওপর পড়ে রয়েছে সড়ক বিভাজকের রেলিং, সড়কবাতিসহ বিভিন্ন অবকাঠামো।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদাউস বলেন, ‘সব মিলিয়ে এই অগ্নিকাণ্ডে সেতু বিভাগের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪০০ কোটি টাকার হতে পারে।’
সারাবাংলা/এসবি/একে
কোটা আন্দোলন কোটা সংস্কার টপ নিউজ টোল আদায় টোল প্লাজা হানিফ ফ্লাইওভার