‘আগের অবস্থায় ফিরতে সময় লাগবে’ হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজার
২৭ জুলাই ২০২৪ ০৮:৩৩
ঢাকা: কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভারের কুতুবখালী ও ডেমরা অংশের টোলপ্লাজায় আগুন দেওয়া হয় বুধবার (১৭ জুলাই)। আগুনে পুড়ে বিধ্বস্ত টোলপ্লাজার অটোমেটিক ডিজিটাল মেশিনসহ সব বুথই। এই মেশিনগুলো ফ্রান্সের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে আনা হয়েছিল। সেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা যখন পাঠাতে পারবে তখনই মূলত চালু হবে টোলপ্লাজার স্বাভাবিক কার্যক্রম।
রাজধানীর হানিফ ফ্লাইওভারের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ওরিয়ন ইনফ্রাসট্রাকচারের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিষ্ঠানটির টোল ট্রাফিক ম্যানেজম্যান্টের কর্মকর্তা এরফানুল আজিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘হানিফ ফ্লাইওভারের কুতুবখালী ও ডেমরায় টোল প্লাজার যে সিস্টেম পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। সেখানে থাকা আমাদের বেশিরভাগ যন্ত্রপাতিই ফ্রান্সের একটি কোম্পানি থেকে আনা হয়েছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ফ্রান্সের প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। যেসব ইকুইপমেন্ট লাগবে তার লিস্টও পাঠিয়েছি। সেগুলো কবে দিতে পারবে সে বিষয়ে তারা হয়তোবা আমাদের আজকালের ভেতরেই কনফার্ম করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা তাদের কাছে সেগুলো খুব দ্রুত পাঠাতে বলেছি। তারাও যত দ্রুত সম্ভব সেগুলো সরবরাহের চেষ্টা করছে। যখনই তারা উত্তর দিবে আমরা চেষ্টা করব সেগুলো বিমানযোগে নিয়ে আসার জন্য। সেগুলো চলে আসলে আর তেমন সমস্যা হবে না।’
বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এখন আপাতত আমাদের ম্যানুয়াল বা অ্যানালগ পদ্ধতিতেই এই টোল সংগ্রহ করতে হবে। এর পাশাপাশি আমাদের মোবাইল টিকেটিং সিস্টেম আছে। তবে ডাটা সমস্যার কারণে আমরা এখনই মোবাইল টিকেটিং সিস্টেম চালু করতে পারছি না।’
তিনি বলেন, ‘ডাটা সমস্যার সমাধান হয়ে গেলে আমরা মোবাইল টিকেটিং পদ্ধতি চালু করতে পারব। তখন হয়তবা যানজট কিছুটা কমে আসবে। সব মিলিয়ে আসলে বলা যায়, আগের অবস্থায় ফিরে আসতে আমাদের একটু সময় তো লাগবেই।’
এর আগে, রোববার (২০ জুলাই) সরেজমিনে হানিফ ফ্লাইওভারের কুতুবখালী ও ডেমরা পয়েন্টের টোল প্লাজায় দেখা যায় আগুনে পুড়ে যাওয়া বুথের বাইরে চেয়ার-টেবিল নিয়ে বসে টোল আদায় করা হচ্ছে। বিভিন্ন পরিবহনের জন্য নির্ধারিত টোলের অঙ্ক বসানো কাগজের স্লিপ দিয়ে আদায় করা হচ্ছে টোল। তবে তুলনামুলকভাবে গাড়ির সংখ্যা কম থাকায় সোমবার (২২ জুলাই) পর্যন্ত তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।
তবে মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) থেকে বাড়তে থাকে গাড়ির সংখ্যা।
বুধবার (২৪ জুলাই) থেকে মহাসড়কে কারফিউ শিথিলের সময়ে বাস চলাচলও শুরু হয়ে গেলে টোল প্লাজা অংশে বাড়তে থাকে গাড়ির লাইন। ফলে দীর্ঘ যানের লাইনের কারণে টোল প্লাজায় জটের সৃষ্টি হয়।
একই দিনে অবশ্য হানিফ ফ্লাইওভারের অন্যান্য প্রান্তের টোল প্লাজাগুলোতে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্রও। ডিজিটাল অটোমেটিক মেশিনে এসব বুথগুলোতে নেওয়া হচ্ছে টোল।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনায় দেশজুড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে যোগাযোগ অবকাঠামো। যাত্রাবাড়ীতে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজার পাশাপাশি পুড়ে গেছে মহাখালী ও বনানীতে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোলপ্লাজা। ঢাকার মেট্রোরেলের দুটি স্টেশনে ব্যাপক ভাঙচুর হয়েছে। বনানীর সেতু ভবন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রধান কার্যালয় ও মিরপুরের আঞ্চলিক কার্যালয়, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের একটি কার্যালয়ে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে সড়ক বিভাজকের রেলিং, সড়কবাতিসহ আনুষঙ্গিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আন্দোলনে ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোয় সড়ক অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে এখনো রাস্তার ওপর পড়ে রয়েছে সড়ক বিভাজকের রেলিং, সড়কবাতিসহ বিভিন্ন অবকাঠামো।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী মো. ফেরদাউস বলেন, ‘সব মিলিয়ে এই অগ্নিকাণ্ডে সেতু বিভাগের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৪০০ কোটি টাকার হতে পারে।’
সারাবাংলা/এসবি/একে