ইউপিডিএফের কর্মসূচি ঘিরে জেএসএসের অবস্থান
২৮ জুলাই ২০২৪ ১৩:৫৭
রাঙ্গামাটি: বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবসে ইউপিডিএফ সমর্থিত তিন সংগঠনের ‘জনসচেতনতামূলক সমাবেশ’কে কেন্দ্র করে রাঙ্গামাটিতে জেএসএস-ইউপিডিএফ নেতাকর্মীদের পালটাপালটি অবস্থান লক্ষ করা গেছে। রোববার (২৮ জুলাই) সকাল ১১টায় রাঙ্গামাটি জেলাপ্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ইউপিডিএফ সমর্থিত তিন সংগঠনের কর্মসূচির কথা থাকলেও পুলিশি বাধায় শহরের প্রবেশমুখ মানিকছড়িতেই কর্মসূচি পালন করেছে তারা।
অন্যদিকে, জেলাপ্রশাসকের কার্যালয়ের আশপাশে সকাল থেকেই অবস্থান নিয়েছিল জেএসএস সমর্থিত নেতাকর্মীরা। তবে দিবসটি ঘিরে জেলাপ্রশাসক কার্যালয়ের সামনে পূর্বনির্ধারিত কোনো কর্মসূচি ছিল না বলে জানিয়েছেন দলটির নেতাকর্মীরা। এ সময় সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএসের ছাত্র সংগঠন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপন ত্রিপুরাসহ পিসিপির সাবেক-বর্তমান নেতাকর্মীদের নিউমার্কেট এলাকায় দেখা যায়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পিসিপির কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপন ত্রিপুরা বলেন, ‘আমাদের আজকে কোনো কর্মসূচি ছিল না।’
এদিকে, সকাল ১১টার দিকে ইউপিডিএফ সমর্থিত তিন সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র সংগঠন, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের নেতাকর্মীরা কুতুকছড়ি এলাকা থেকে শহরে আসতে চাইলে শহরের প্রবেশমুখ মানিকছড়িতে তাদের বাধা দেয় আইনশৃঙ্খলাবাহিনী। পরে সেখানে বাধার মুখেই ‘জনসচেতনতামূলক সমাবেশ’ শেষ করে তিন সংগঠনটি।
মানববন্ধনে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি নীতি চাকমার সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সদস্য এন্টি চাকমা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের রাঙ্গামাটি জেলার তথ্য ও প্রচার সম্পাদক পিংকি চাকমা। এ সময় নীতি চাকমা অভিযোগ করেছেন, আমাদের জেলাপ্রশাসক কার্যালয়ের সামনে পূর্ব-নির্ধারিত প্রোগ্রাম কথার কথা ছিল। এ ব্যাপারে পুলিশ-প্রশাসনকেও অবগত করা হয়েছে। কিন্তু বাধার মুখে আমাদের এখানে (মানিকছড়ি) সমাবেশ করতে হচ্ছে।
এদিকে, ইউপিডিএফের কর্মসূচিতে মানিকছড়িতে রাঙ্গামাটি জেলা পুলিশের তিনজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহনেওয়াজ রাজু, শাহ এমরান ও সাইফুল ইসলাম, কোতোয়ালি থানার ওসি মুহাম্মদ আলীসহ পুলিশ, বিজিবি, আমর্ড পুলিশ সদস্যরা অবস্থান নেয়।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন রাঙ্গামাটি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রিফাত আসমাও। ইউএনও রিফাত আসমা বলেন, ‘মানিকছড়িতে তাদের নেতাকর্মীরা এসে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া জানিয়ে মানববন্ধন করে চলে গেছেন। কোনো বিশৃঙ্খলা করেনি।’
রাঙ্গামাটির পুলিশ সুপার মীর আবু তৌহিদ বলেন, ‘রাঙ্গামাটিতে কারভিউ প্রত্যাহার করা হয়নি, শিথিল করা হয়েছে। ইউপিডিএফের নেতাকর্মীরা শহরের মানিকছড়িতে একটি সংক্ষিপ্ত মানববন্ধন করেছে। পরে তারা স্থান ত্যাগ করেছে। সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।’
এক প্রশ্নে পুলিশ সুপার বলেন, ‘সাধারণত আঞ্চলিক দলগুলো যে যার মতো অবস্থান কর্মসূচি নিয়ে থাকে। আমাদের কাজ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা।’
প্রসঙ্গত, আড়াই দশকের বেশি সময় আগে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ভেঙে গড়া সংগঠন ইউপিডিএফের সঙ্গে জেএসএসের ‘বন্ধু তুমি, শত্রু বন্ধু’ মেরুকরণ চলছে দীর্ঘসময় ধরে। পাহাড়ের রাজনীতির নানা ঘটনাবলির মধ্য দিয়ে কয়েকবার দুই সংগঠনের সঙ্গে ‘মিত্রতা’ দেখা গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বৈরী অবস্থানকে কেন্দ্র করে ফের মুখোমুখি অবস্থানে সংগঠন দুটি।
প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই রাঙ্গামাটি সদর উপজেলার কুতুকছড়ি ও খাগড়াছড়ি-রাঙ্গামাটি সড়ক কেন্দ্রিক অবস্থান ধরে রেখেছে ইউপিডিএফ। রাঙ্গামাটি শহর এলাকাটি জেএসএস অধ্যুষিত এলাকা হিসেবেই পরিচিত। চলতি মাসেই জেলা শহরের রেডিও স্টেশন এলাকায় কর্মসূচি পালন করে ইউপিডিএফের তিন সংগঠন। এর আগে, ২০২২ সালে রাঙ্গামাটি শহরে অবস্থিত আঞ্চলিক পরিষদ কার্যালয়ের সামনে ঝটিকা মানববন্ধন করে আঞ্চলিক পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেএসএস সভাপতি সন্তু লারমার পদত্যাগ দাবি জানায় ইউপিডিএফ নেতাকর্মীরা।
সারাবাংলা/একে