সোমবার সারা দেশে বিক্ষোভ— ঘোষণা সমন্বয়কদের একাংশের
২৯ জুলাই ২০২৪ ০১:২৩
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয় থেকে ভিডিওবার্তার মাধ্যমে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক। তবে এই আন্দোলনের সমন্বয়কদের একাংশ সেই ঘোষণাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাদের অভিযোগ, ওই ছয় সমন্বয়ককে দিয়ে জোর করে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ানো হয়েছে।
সমন্বয়কদের এই একাংশ এ অভিযোগ তুলে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বলেছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এরই অংশ হিসেবে সোমবার (২৯ জুলাই) সারা দেশে ‘ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সমাবেশ’ করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
রোববার (২৮ জুলাই) রাতে সাংবাদিকদের সঙ্গে যুক্ত একটি হোয়াটস্যাপ গ্রুপে সমন্বয়কদের একজন আব্দুল হান্নান মাসুদের অ্যাকাউন্ট থেকে পাঠানো এক বার্তায় এই তথ্য জানানো হয়। আব্দুল হান্নানের অ্যাকাউন্ট থেকে আসা ওই বার্তায় প্রেরক হিসেবে আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আব্দুল কাদেরের নাম উল্লেখ রয়েছে।
আরও পড়ুন- কোটা সংস্কার আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা
এর আগে রোববার রাত ৮টার দিকে রাজধানীর মিন্টু রোডে অবস্থিত ডিবি কার্যালয় থেকে কোটা সংস্কারের পক্ষে চলমান আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন ছয় সমন্বয়ক। ভিডিওবার্তায় ছয়জনের উপস্থিতিতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমন্বয়কদের একজন নাহিদ ইসলাম। তাতে নাহিদ ইসলাম ছাড়াও সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, আবু বাকের মজুমদার, আসিফ মাহমুদ ও নুসরাত তাবাসসুমের সই রয়েছে।
ছয় সমন্বয়কের এ ঘোষণার ভিডিওবার্তা ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই সমন্বয়কদের অন্য একটি অংশ দাবি করেন, ‘অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে’ ছয় সমন্বয়কের কাছ থেকে এই বিবৃতি আদায় করা হয়েছে।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আব্দুল হান্নান মাসুদ নামে সমন্বয়কদের একজন নিজের ব্যক্তিগত ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে বলেন, ‘অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বিবৃতি আদায় ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না।’
এ ছাড়া আবদুল কাদের, মোহাম্মদ মাহিন, উমামা ফাতেমাসহ সমন্বয়ক কমিটির আরও অনেকেই নিজ নিজ ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একই ধরনের কথা বলেন। তারা জানান, শিগগিরই নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে তারা কর্মসূচি ঘোষণা দেবেন।
পরে রাত ১২টার দিকে সাংবাদিকের সঙ্গে যুক্ত একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচির ঘোষণা আসে সমন্বয়কদের একজন আব্দুল কাদেরের পক্ষ থেকে। তাতে বলা হয়, সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ও ছাত্রলীগের আক্রমণে নিহত শত শত শহিদের আত্মত্যাগ তিরস্কার করে ডিবি কার্যালয়ে বন্দুকের নলের মুখে জিম্মি করে সমন্বয়কদের মাধ্যমে জোরপূর্বক স্ক্রিপ্টেড বিবৃতি আদায়ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আমাদের দাবি আদায়ে আমরা অবিচল ছিলাম, রয়েছি এবং থাকব। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ছাত্রসমাজ শহিদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করতে পারে না।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, গত কয়েক দিন ধরে গণহত্যা, গণগ্রেফতারের পর সরকার এখন এক নতুন নাটকের সৃষ্টি করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের তুলে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে জিম্মি করে অস্ত্রের মুখে স্ক্রিপ্টেড বিবৃতি দিয়ে ছাত্রসমাজের দাবির প্রতি সরকার চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছে। শুধু তাই নয়, সারা দেশে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত শহিদদের পরিবারকে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে, সশস্ত্র বাহিনীকে (আর্মড ফোর্স) ব্যবহার করে ঢাকায় এনে সরকার তাদের থেকে মিথ্যা জবানবন্দি নেওয়া ও সমস্ত দায় আন্দোলনকারীদের ওপর চাপিয়ে শহিদের রক্তের সঙ্গে তামাশা করেছে।
কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সোমবার সারা দেশে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ কর্মসূচি এবং প্রতিবাদ সমাবেশ হবে। আন্দোলনকারীদের দাবি আদায়ের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করতে বাংলাদেশের সব নাগরিককে অনুরোধ জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
সারাবাংলা/আরআইআর/টিআর