Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে ইসরাইল-লেবানন, আশঙ্কা বাড়ছেই

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২৯ জুলাই ২০২৪ ১০:৩৪

দখল করা গোলান মালভূমিতে একটি রকেট হামলাকে কেন্দ্র করে লেবাননের সঙ্গে ইসরাইল সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়তে পারে, এই সম্ভাবনা ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। গত শনিবার গোলান মালভূমির মাজদাল শামস এলাকার একটি ফুটবল মাঠে একটি রকেট আঘাত হানলে অন্তত ১২ জন নিহত হয়, যাদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল শিশু।

এই হামলার জন্য ইসরাইল হিজবুল্লাহকেই দায়ী করছে। কিন্তু লেবাননের ওই সশস্ত্র গোষ্ঠীটি হামলায় তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ জোরালোভাবে অস্বীকার করেছে।

তবে এই হামলার অভিযোগে ইসরাইল এরইমধ্যে লেবাননে হামলা চালিয়েছে। দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) সূত্রে জানানো হয়, তারা হিজবুল্লাহর নির্দিষ্ট সাতটি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে। যার সবগুলোই ‘লেবানিজ ভূখণ্ডের অনেক ভেতরে অবস্থিত’।


গত অক্টোবরে যখন ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হয়, তখন থেকেই ইসরাইল ও হিজবুল্লাহর মধ্যেও নিয়মিত গোলাগুলি চলছে।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ইতিমধ্যেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন হিজবুল্লাহকে এই হামলার জন্য ‘চড়া মূল্য দিতে হবে’। যদিও মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, তারা চান না এই সংঘাত আরও বৃদ্ধি পাক।

গোলান মালভূমির মাজদাল শামস এলাকার যে ফুটবল মাঠে শনিবারের রকেট হামলায় নিহত ১২ জনের সবাই ছিল দ্রুজ সম্প্রদায়ের সদস্য। এছাড়া নাথেম ফখির সায়িব নামে নিকটবর্তী এইন কিনিয়া গ্রামের একজন বাসিন্দাও ওই হামলায় নিহত হন বলে জানা গেছে।

‘দ্য টাইমস অব ইসরাইল’ পত্রিকা জানায়, শেষকৃত্যে অংশ নিতে ইসরায়েলের যে মন্ত্রীরা গোলান মালভূমিতে গিয়েছিলেন তারা উপস্থিত জনতার তীব্র ক্ষোভ ও রোষের মুখে পড়েন।


এই মুহূর্তে জাপান সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন টোকিও থেকে জানিয়েছেন, তারা পরিস্থিতি নিয়ে ইসরাইল সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা বলছেন। তিনি বলেন, ‘ইসরাইলের অবশ্যই তাদের নাগরিকদের রক্ষা করার অধিকার আছে এবং সেটা যাতে তারা করতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য আমেরিকাও অঙ্গীকারাবদ্ধ। কিন্তু আমরা কখনও চাই না এই সংঘর্ষ আরও ছড়িয়ে পড়ুক। একেবারে প্রথম দিন থেকে, অর্থাৎ সেই ৭ অক্টোবর থেকেই এটা কিন্তু আমাদের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।’

তবে গোলান মালভূমিতে শনিবারের রকেট হামলা যে হিজবুল্লাহরই কাজ, তার ‘সব প্রমাণ’ই আছে বলে দাবি করেন অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। যদিও এই অভিযোগ হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকে দৃঢ়ভাবে অস্বীকার করা হয়েছে।

কতটা শক্তিশালী হিজবুল্লাহ?
কোনো দেশের রাষ্ট্রীয় বাহিনী না হয়েও বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক অস্ত্রসম্ভারে সজ্জিত সামরিক শক্তিগুলোর অন্যতম হিজবুল্লাহ। বস্তুত এরকম বাহিনীগুলোর মধ্যে তারাই সবচেয়ে শক্তিশালী এবং তাদের টাকাপয়সা ও অস্ত্রশস্ত্র বিষয়ে ইরান সহায়তা করে বলে অভিযোগ রয়েছে পশ্চিমাদের।

হিজবুল্লাহর প্রধান শেখ হাসান নাসরুল্লাহর দাবি অনুযায়ী, তাদের প্রায় এক লক্ষ যোদ্ধা আছেন। যদিও বিভিন্ন নিরপেক্ষ সূত্রে এই সংখ্যা ২০ থেকে ৫০ হাজারের মধ্যে বলেও বলা হয়।

হিজবুল্লাহর এই সদস্যরা সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এবং তাদের যুদ্ধের অভিজ্ঞতাও আছে। এদের অনেকেই সিরিয়া, ইরাকে গৃহযুদ্ধেও লড়াই করেছেন।

স্ট্র্যাটেজিক থিঙ্কট্যাঙ্ক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের হিসেব অনুযায়ী, হিজবুল্লাহর কাছে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার রকেট ও মিসাইল আছে। তাদের এই অস্ত্র ভান্ডারের বেশিটাই হলো ছোট আকারের, আনগাইডেড ভূমি-থেকে-ভূমি আর্টিলারি রকেট।


তবে হিজবুল্লাহর সম্ভারে বিমান ও রণতরী-বিধ্বংসী মিসাইল আছে বলেও ধারণা করা হয়। তা ছাড়া বেশ কিছু ‘গাইডেড’ মিসাইলও আছে, যেগুলো ইসরাইলের অনেক ভেতরে গিয়েও আঘাত হানতে সক্ষম।

গাজা ভূখণ্ডে হামাসের হাতে যে ধরনের অস্ত্রশস্ত্র আছে, তার তুলনায় হিজবুল্লাহর এই অস্ত্রভাণ্ডার অনেক বেশি আধুনিক ও বিধ্বংসী।

শিয়া মুসলিম এই সংগঠনটি লেবাননে রাজনৈতিকভাবেও অত্যন্ত প্রভাবশালী এবং তারা সে দেশের সেনাবাহিনীর চেয়েও অনেকগুণ বেশি শক্তিশালী।

মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী শিয়া শক্তি ইরানের মদতে ইসরাইলের বিরোধিতার লক্ষ্য নিয়েই ১৯৮০র দশকের গোড়ার দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল হিজবুল্লাহ। বিগত ৪ দশকেরও বেশি সময় ধরে হিজবুল্লাহ দক্ষিণ লেবাননে খুব শক্তিশালী সামরিক উপস্থিতি বজায় রেখেছে এবং বিতর্কিত সীমান্ত এলাকাগুলোতে ইসরাইলের উপস্থিতির বিরোধিতা করে আসছে।

এদিকে, হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত চব্বিশ ঘণ্টায় গাজাতে ইসরাইলি অভিযানে অন্তত ৬৬ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও আরও ২৪১ জন আহত হয়েছে। যাদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে।

সারাবাংলা/এমও

ইসরাইল-লেবানন রকেট হামলা হিজবুল্লাহ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর