সহসা চালু হচ্ছে না মেট্রোরেল, কাজ শুরু করেছে তদন্ত কমিটি
৩০ জুলাই ২০২৪ ১১:৫৩
ঢাকা: যানজটে ঠাঁসা রাজধানীবাসীর যাতায়াতে স্বস্তি দিতে আওয়ামী লীগ সরকার গণপরিবহনে যুক্ত করে মেট্রোরেল। যা দেশবাসীর কাছে ছিলো স্বপ্নের মতো। মেট্রোরেল শুধু যাতায়াতই সহজ করেনি, বাঁচিয়েছে সময়ও। তবে সেই মেট্রোরেলের ওপরে আঘাত এসেছে গত ১৮ জুলাই। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতায় চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয় মেট্রোস্টেশন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা চলছে। এদিকে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীরা পড়েছেন চরম বিপাকে।
সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘ সময় লাগবে। যে কয়টি স্টেশন সুরক্ষিত রয়েছে, সেগুলোর মাধ্যমে কবে নাগাদ মেট্রোরেল পুনরায় চালু করা যাবে তা এখনি বলা যাচ্ছে না।
ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানির (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিক জানিয়েছেন, মেট্রোস্টেশনে এতোটাই হামলা চালানো হয়েছে যে, পুরো স্টেশনের ডিজিটাল সিস্টেম অকেজো হয়ে গেছে। যা পুনরায় ঠিক করতে কমপক্ষে ১ বছর লাগতে পারে
ডিএমটিসিএল সূত্রে জানা যায়, কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গত ১৮ জুলাই মেট্রোরেলের নিচে মিরপুর ১০ গোলচত্বরে ফুটওভার ব্রিজে পুলিশ বক্সে প্রথমে আগুন দেওয়া হয়। সেই আগুনের মধ্য দিয়েই একটি ট্রেন ছুটে যায়। এরপরে চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরদিন ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় মিরপুর ১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে হামলা চালানো হয়। এতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এই দুই স্টেশনের। তবে এখনো আনুষ্ঠানিক ক্ষতির হিসাব শুরু করেনি কর্তৃপক্ষ।
এ ঘটনায় মেট্রোরেলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ এবং কবে এটি আবার চালু করা যায়, তা নির্ধারণে গত ২২ জুলাই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয় ডিএমটিসিএল। মেট্রোরেল লাইন-৬-এর অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মো. জাকারিয়ার নেতৃত্বে এ কমিটিকে পরবর্তী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
কমিটির সদস্যরা জানিয়েছেন, কমিটি এরইমধ্যে একটি সভা করে ক্ষয়ক্ষতি নির্ণয় করার জন্য কমিটির অন্যান্যদের মধ্যে দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে তারা প্রকল্পের পরামর্শক, ঠিকাদার ও ডিএমটিসিএলের কর্মীদের নিয়ে কাজ করবেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান মো. জাকারিয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘কমিটির সদস্যদের মধ্যে দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। এখন কাজ শুরু করা হবে। এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না কত দিনে মেট্রোরেল চালু করা সম্ভব।’
ডিটিএমসিএলের কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা গেছে, দু’টি মেট্রো স্টেশনেরই কনকোর্স লেভেলে থাকা টিকিট কাটার মেশিন, টিকিট কাটার অফিস, প্রবেশ ও বের হওয়ার পথ, কম্পিউটারসহ সব যন্ত্রপাতি ও স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়েছে। স্টেশনে বসানো অনেকগুলো সিসি ক্যামেরাও নষ্ট করে ফেলা হয়েছে।
কয়েকদিন আগে মেট্রোরেলের তত্ত্বাবধানকারী কর্তৃপক্ষ ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন ছিদ্দিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।
প্রতিষ্ঠানটির এমডি জানান, যে পরিমান ভাঙচুর স্টেশনগুলোর ওপরে চালানো হয়, তা মেরামত করতে বছর সময় লাগবে। মেট্রোরেল চালুর শুরু থেকেই যাত্রীদের কাছে খুব জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলো। কিন্তু দুর্বৃত্তরা দু’টি স্টেশন একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছে। ডিজিটাল সিস্টেম নষ্ট হয়ে গেছে। এটি সহজেই ঠিক করা সম্ভব নয়। নিরাপত্তা বিবেচনায় মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। আপাতত মেট্রোরেল চালু হওয়ার বিষয়ে আমাদের কোনো লক্ষ্য নেই।
এদিকে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ থাকায় বিপদে পড়েছেন লাখো যাত্রী। যারা দূর থেকে মেট্রোতে করে সহজেই গন্তব্যে পৌঁছাতে পারতেন। প্রতিদিনই স্টেশনগুলোতে যাত্রীরা ভিড় জমান, খোঁজ নেন কবে চালু হবে মেট্রো।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সকালে মতিঝিল স্টেশনের কাছে কথা হয় জহিরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি জানান, মিরপুর থেকে প্রতিদিন মেট্রো করে মতিঝিলে অফিস করতেন। ২০/২৫ মিনিটের মধ্যেই গন্তব্যে পৌঁছাতেন। মেট্রো বন্ধ থাকায় একরকম বিপদে আছেন। সেই লক্বর ঝক্কর বাসে করে আগের মতো করে অফিসে আসতে হচ্ছে।
ব্যাংকার ওয়াহিদা আক্তার বলেন, ‘মেট্রোর ভরসায় আমি দিয়াবাড়ি প্লটে বাসা নিয়েছিলাম। মনোরম পরিবেশ। বাসা থেকে কাছেই উত্তরা দক্ষিণ স্টেশন। কখনো কখনো হেটেই স্টেশনে পৌঁছে যেতাম। এখন ওই জায়গা থেকে কোনো ধরনের পরিবহন সকালে পাই না। অনেক কষ্টে কয়েকদিন অফিস করছি।’
উল্লেখ্য, ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত পৌনে ১২ কিলোমিটার পথের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর উদ্বোধন করা হয় আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশ। উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হওয়ার পর প্রতিদিন দুই লাখ ৭০ হাজার যাত্রী যাতায়াত করতো।
সারাবাংলা/জেআর/এমও