Thursday 05 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নির্বাহী আদেশে বুধবার নিষিদ্ধ হচ্ছে জামায়াত-শিবির

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩০ জুলাই ২০২৪ ১৪:৫৩

আনিসুল হক, ফাইল ছবি

ঢাকা: নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে আগামীকাল বুধবারের (৩১ জুলাই) মধ্যে নিষিদ্ধ হচ্ছে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি।

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সচিবালয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে এ তথ্য জানান আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

কোন প্রক্রিয়ায় এটি করা হবে, তা ঠিক করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় বসবেন বলেও জানান আইনমন্ত্রী।

জামায়াতকে নিষিদ্ধের আলোচনা গত ১০ বছর ধরেই চলছে। এখন কোন প্রক্রিয়ায় কোন কারণে দলটিকে নিষিদ্ধ করা হচ্ছে তা আইনমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন সাংবাদিকরা।

উত্তরে আইনমন্ত্রী বলেন, ‘গত ১৬ থেকে ২০ জুলাই কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে যে নৃশংসতা চালানো হয়েছে, সেখানে আন্দোলনকারীরা বলেছেন যে তারা সহিংসতার মধ্যে নেই। আমাদের কাছে তথ্য উপাত্ত আছে যে, এই জামায়াত, শিবির, বিএনপি, ছাত্রদলের যারা জঙ্গি, তারাই এটি করেছে। এই দলটাকে যদি নিষিদ্ধ করা হয় তাহলে আইনশঙ্খলা ও দেশের পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘কোনো দলকে যখন নিষিদ্ধ করা হয় তখন সেটি নির্বাহী আদেশেই হয়। বিচার বিভাগীয় আদেশে হয় না।’

কোন প্রক্রিয়ায় জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হবে, জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের মধ্যে এ প্রশ্নের জবাব রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, এটা ঠিক যে আগামীকালকের মধ্যে একটা ব্যবস্থা নেওয়ার।

কোন আইনে জামায়াত নিষিদ্ধ করা হবে, তা নির্ধারণ করতে কিছুক্ষণের মধ্যেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে তার বৈঠক হবে বলেও জানান তিনি।

মন্ত্রী বলেন, ‘আমি কিছুক্ষণ পরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বসব। সেখানে আমরা সিদ্ধান্ত নেব কোন আইনি প্রক্রিয়ায় হবে। সেটি যখন আমরা সিদ্ধান্ত নেব, তখন বলব।’

কালকের (বুধবার) মধ্যেই কি এ সিদ্ধান্ত হবে, এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ।’

কোটা আন্দোলন চলমান রয়েছে, এর মধ্যে জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করে পরবর্তী সময় সরকার আবার ঝামেলায় পড়বে কি না, এ বিষয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘দেখেন এই যে নৃশংসতা, যেটি গত ১৬ জুলাই থেকে চালানো হয়েছে। কোটাবিরোধী আন্দোলনের নামে যে সহিংসতা চালানো হয়েছে, যারা কোটাবিরোধী আন্দোলন করছেন তারা কিন্তু জানিয়েছেন এ সহিংসতার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। সেক্ষেত্রে আমাদের কাছে তথ্য উপাত্ত আছে, জামায়াত-বিএনপি ও ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্রদলের যারা জঙ্গি তারাই এটা করেছে।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এই দলটাকে যদি নিষিদ্ধ করা হয় তাহলে আইনশৃঙ্খলা এবং দেশের রাজনীতিরও অনেক উন্নতি হবে।‌ কোনো দলকে যদি নিষিদ্ধ করা হয়, তখন সেটি নির্বাহী আদেশেই হয়। সেটি কোনো বিচার বিভাগীয় আদেশে হয় না।’

তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচার করা এক কথা, আর জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা আরেক কথা। যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াত নিষিদ্ধে আইন (আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন) পরিবর্তন বা সংশোধনের যে কথা আমরা লিখেছি। ‌ সংশোধন হলেও সেটা হবে, সেটা হলে যেটা হবে, যুদ্ধাপরাধী হিসেবে জামায়াতের বিচার করা হবে।

দেশবিরোধী নৈরাজ্য, অস্থিরতা সৃষ্টির অভিযোগে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সুযোগ নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে সোমবার (২৯ জুলাই) সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নেয় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক জোট ১৪ দল। ১৪ দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গণভবনের গেটে সাংবাদিকদের সঙ্গে ব্রিফিংয়ে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।

এর আগে, ওইদিন বিকেল ৫টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জোটনেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ১৪ দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

ব্রিফিংয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বিএনপি-জামায়াত নৈরাজ্যের মাধ্যমে দেশকে অকার্যকর করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। জাতীয় স্বার্থে দেশবিরোধী অপশক্তি নির্মূল করার জন্য ১৪ দলের বৈঠকে সর্বসম্মতভাবে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

১৪ দলের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত সরকার দ্রুত বাস্তবায়ন করবে।’

এর আগে, বৈঠক শুরুর পর সূচনা বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘এখানে ওই শিবির, ছাত্রদল, বিএনপি-জামায়াত; এরাই কিন্তু এবং জঙ্গি… এই জঙ্গিরাই কিন্তু আজকে আমাদের ওপর থাবা দিয়েছে। ’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যে ঘটনাগুলো ঘটছে, আসলে এটি কোনো রাজনৈতিক কিছু না। এটি সম্পূর্ণ জঙ্গিবাদী কাজ। একেবারে জঙ্গিবাদী কাজ।’

উচ্চ আদালতের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে নির্বাচন কমিশন। দলটির ছাত্রসংগঠনের নাম ইসলামী ছাত্রশিবির। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের শীর্ষ কয়েকজন নেতার ফাঁসির রায়ও কার্যকর করা হয়েছে।

জামায়াতের পক্ষ থেকে নিবন্ধন বাতিল করে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছিল। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের পক্ষের আপিল খারিজ করে দিয়েছেন। ফলে দলটির নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে।

সারাবাংলা/জেআর/একে

আওয়ামী লীগ জামায়াত-শিবির নির্বাহী আদেশ রাজনীতি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর