বুধবার থেকে শনিবার ১৩ ঘণ্টা করে কারফিউ শিথিল
৩০ জুলাই ২০২৪ ১৯:০০
ঢাকা: আগামীকাল বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত এই চারদিন ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদীতে ১৩ ঘণ্টা করে কারফিউ শিথিল থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এ সময় সকাল ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। তবে বাকি সময়গুলোতে কারফিউ বলবৎ থাকবে।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সচিবালয়ে কোটা আন্দলনকে কেন্দ্র করে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সাত মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক শেষে সংবাদ ব্রিফিং এ তথ্য জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কবে থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে তা শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে, মোবাইল নেটওয়ার্কের বিষয় যোগাযোগ ও তথ্য মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেবে।’
তিনি বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে কোটা আন্দলনকে কেন্দ্র করে উদ্ভূদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে বৈঠক করেছি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার বিষয়টি ছিলো ছাত্রদের একটি অহিংস আন্দোলন। আমরা দেখলাম একটা সময় এই আন্দোলন আর ছাত্রদের হাতে ছিল না। এই আন্দোলনে কারা প্রবেশ করেছে, এর পেছনে কাদের ইন্ধন ছিল সে বিষয়ে বৈঠকে আমরা আলোচনা করেছি।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘২০১৮ সালে যখন প্রথম কোটা বিরোধী আন্দোলন শুরু হয়, তখন আমরা কোটা তুলে দিলাম। এরপর কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংক্ষুদ্ধ হয়ে হাইকোর্টে আপিল করেন। এবার যেটা হয়েছে, মহামান্য আদালত একটি সুন্দর রায় দিয়েছেন। সকলে তা মেনে নিয়েছেন। কিন্তু আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার জন্য একটা গ্রুপ নানা অজুহাতে আন্দোলনকারীদের জোর করে ভিন্নখাতে নিয়ে গেল।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা দেখলাম দাবির পরে দাবি তুলছেন তারা। কিন্তু অযৌক্তিক কিছু দাবি তুলেছেন। আমরা দেখলাম ছাত্ররা আন্দোলন থেকে পিছে চলে আসছিল কিন্তু তাদেরকে জোর করে সে আন্দোলন টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছিল। এরপরের ঘটনা আপনারা সকলে জানেন।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাভাই যেভাবে মানুষ হত্যা করে লটকিয়ে রেখেছিলো, তেমনি এবার মানুষ মেরে এক পুলিশ ও এক রাজনৈতিক কর্মীকে ঝুলিয়ে রেখেছে।’
এ আন্দোলনে এ পর্যন্ত ১৫০ জন নিহত হয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, ‘আমরা সবার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। এখানে পুলিশ সাংবাদিক, রাজনীতিব, পথচারী, শিক্ষার্থীও রয়েছে। আমরা শোক পালন করেছি। যাদের প্রাণহানি হয়েছে তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। যারা আন্দোলনে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যাবেন বলে প্রত্যাশা করছি।’
চলমান কারফিউ প্রসঙ্গে বলেন, ‘সারাদেশে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, গাজীপুর এই চার জেলা এক নিয়মে চলবে। সেখানে ১৩ ঘণ্টা করে চারদিন কারফিউ শিথিল থাকবে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে বলছেন আমরা গণগ্রেফতার করছি, আমরা তা করছি না। এমন কোনো জেলা নেই যেখানে ভাঙচুর হয়নি। আমাদের জাতীয় সম্পদ নষ্ট করা হয়েছে. রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করা হয়েছে। আমাদের তিন পুলিশ ও এক আনসার সদস্য মারা গেছেন।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমাদের ১০ জন পুলিশ-র্যাব সদস্য মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। একজন নারী সাংবাদিককে হেনস্থা করা হয়েছে। পৃথিবীর কোথাও এই চিত্র দেখা যায় না।’
‘ছাত্রলীগের কর্মীকে ধরিয়ে দিলে ৫০০০ টাকা, পুলিশ ধরিয়ে দিলে পুরস্কার এসব তো কোনো ছাত্রদের কর্মকাণ্ড হতে পারে না’ বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে এর আগে মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বিকেলে বৈঠকে বসেন সাত মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী।
সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে এ বৈঠক শুরু হয়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক উপস্থিত ছিলেন।
এদের বাইরেও বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব/সিনিয়র, পুলিশ মহাপরিদর্শক, র্যাবের মহাপরিচালকসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংস পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে গত ১৯ জুলাই রাতে সারাদেশে কারফিউ জারি করা হয়, সঙ্গে করা হয় সেনা মোতায়েন। পরে ২১ থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়। সহিংসতা দমনে সরকার অভিযান চালালে গত ২২ জুলাই থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসে। ক্রমে বাড়ে কারফিউ শিথিলের সময়। ধীরে ধীরে খুলে দেওয়া হয় অফিস।
সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (২৯ জুলাই) আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের সভায় জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত হয়। জোটটি মনে করে আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা ও নাশকতায় বিএনপি, জামায়াত ও শিবির জড়িত।
এদিকে মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুরে আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে বুধবারের মধ্যে জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ করা হবে।
সারাবাংলা/জেআর/একে