কোটা আন্দোলনে নিহতদের তালিকা প্রকাশ ও দায়ীদের বিচার দাবি সুজনের
১ আগস্ট ২০২৪ ২০:১৯
ঢাকা: কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতায় নিহতদের নাম-পরিচয়সহ বিস্তারিত বিবরণ সম্বলিত তালিকা প্রকাশ। নিরপেক্ষ ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সহিংসতার সব ঘটনায় স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করা এবং দায়ীদের বিচারের ব্যবস্থা করা। একইসঙ্গে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত এবং গণগ্রেফতার বন্ধ করে গণতান্ত্রিক অধিকারসহ নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, সহ-সম্পাদক জাকির হোসেন, নির্বাহী সদস্য অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিগত তিনটি নির্বাচনে মানুষের ভোটাধিকার হরণ করে জনগণের সম্মতিবিহীন একটি সরকার গঠন করেছে, যার কোনো লেজিটিমেসি নেই। এই সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য জনগণের অন্যান্য রাজনৈতিক ও নাগরিক অধিকার হরণ করেছে। আমরা খুন-সহ সব অন্যায়ের ন্যায়বিচার চাই। আমাদের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠাসহ সব সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে দলীয় পেটোয়া বাহিনীতে পরিণত করার অবসান চাই। তা না হলে বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার থাকবে না।’
জাকির হোসেন বলেন, ‘ক্ষমতাসীন দল অভিনব পদ্ধতিতে বিগত তিনটি নির্বাচন আয়োজন করেছেন তারা। এর মাধ্যমে দেশের সংবিধান ও নিজ দলের সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে, এটি একটি ঐতিহ্যবাহী দল। তাই এই দলের অস্তিত্ব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই দলের মধ্যে যে অসততা তৈরি হয়েছে তা আমাদের জন্য ক্ষতিকর। একটি রাজনৈতিক সমাধানে আসা ছাড়া আমাদের মুক্তি নেই।’
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘বিরাজমান সংকট নিরসনে সরকারের দিক থেকে কোনো আন্তরিক ও কার্যকর প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে না। এত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে যে তা ক্ষমা করার কোনো সুযোগ নেই। এবার যদি বিচার না পাই, তাহলে হয়তো বাংলাদেশ থেকে বিচার শব্দটা একবারেই ওঠে যাবে। স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার জাতিসংঘের মাধ্যমে বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমাদের চুপ হয়ে যাওয়ার বা শান্তনা পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘২০২৪ সালের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন একটি সর্বজনীন আন্দোলন। আমি মনে করি, এই আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের নৈতিক ও রাজনৈতিক পরাজয় নিশ্চিত হয়েছে। এতে গণঅভ্যুত্থানের সবগুলো উপাদানই বিদ্যমান রয়েছে। তরুণরা তাদের আন্দোলনের মাধ্যমে আমাদেরকে দেখিয়েছে কীভাবে নতুন সংবিধান লিখতে হয়, কীভাবে নতুন রাজনৈতিক দল গঠতে হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে সুজন-এর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার।
তিনি বলেন, যে বিষয়গুলোর ওপর সরকারের গুরুত্বারোপ জরুরি সেগুলো হলো- ১. নিহতদের নাম পরিচয়সহ বিস্তারিত বিবরণ সম্বলিত তালিকা প্রকাশ করা।
২. জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নিরপেক্ষ ব্যক্তি ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে সহিংসতার সব ঘটনার স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করা এবং দায়ীদের বিচারের ব্যবস্থা করা।
৩. ডিবি হেফাজতে আটকে রাখা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের অবিলম্বে পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া; আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের রিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহার, নতুন করে মামলা না দেওয়া এবং গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি দেওয়া এবং গায়েবি মামলা ও ব্লক রেইড দিয়ে ঢালাওভাবে গ্রেফতার বন্ধ করা। আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের নিরাপত্তা দেওয়া এবং ভবিষ্যতে হয়রানি না করার অঙ্গীকার করা।
৪. সহিংসতায় নিহতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা এবং প্রয়োজনের নিরিখে পরিবারের কোনো সদস্যের চাকরির ব্যবস্থা করা; আহতদের সরকারি খরচে চিকিৎসাসেবা প্রদানসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা।
৫. শিক্ষার ক্ষতির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অবিলম্বে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাঙ্গন-সহ জনজীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে কাউফিউ তুলে নিয়ে এবং ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার করে বাক্স্বাধীনতা-সহ জনগণের সকল মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা।
৬. পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের সিট বাণিজ্য বন্ধ করে যথাযথ নিয়মে প্রশাসনিকভাবে সিট বরাদ্দ করা, অছাত্রদের হলে অবস্থান নিষিদ্ধ করা এবং কমনরুম কালচার, র্যাগিং কালচার ইত্যাদি বন্ধ করা এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে নিয়মিত ছাত্র সংসদ নির্বাচন করা।
৭. গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের বিধান অনুযায়ী লেজুরবৃত্তির ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা এবং স্বাধীন ছাত্ররাজনীতির পরিবেশ সৃষ্টি করা।
৮. আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার বন্ধ করা এবং পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করানো থেকে বিরত থাকা।
৯. গণতান্ত্রিক অধিকারসহ নাগরিকদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা।
১০. রাজনীতিতে ধর্মের ব্যবহার ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা।
সারাবাংলা/জিএস/এনইউ