আবু সাঈদ নিহতের ঘটনায় সাক্ষ্য নেবে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন
১ আগস্ট ২০২৪ ২০:৪৩
ঢাকা: কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের মৃত্যুর কারণ উদঘাটন ও তাদের মৃত্যুর জন্য দায়ীদের শনাক্ত করতে তিন সদস্যের বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে। কমিটি দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা-সংস্কার আন্দোলনের সময় সংঘটিত ঘটনায় মৃত্যু, সহিংসতা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা তদন্ত করে ৪৫ দিনের প্রতিবেদন মধ্যে সরকারের কাছে দাখিল করবে।
হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান, বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার ও বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত তদন্ত কমিশন গত ১৬ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত কোটা বিরোধী আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতায় নিহত ও আহতের ঘটনায় দায়ীদের চিহ্নিত করবে ও কারণ উদঘাটন করবে।
এর অংশ হিসেবে আগামী ৪ আগস্ট রংপুর যাচ্ছেন তদন্ত কমিশন।
কমিশন রংপুর সার্কিট হাউজে ৫ আগস্ট সকাল ৯টায় সহিংসতায় নিহত মো. আবু সাঈদের বিষয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ করবেন।
পর্যায়ক্রমে ওই কমিটি দেশের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত হওয়ার ঘটনায় সাক্ষ্য নেবেন।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনের মেডিয়েশন সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানায় তিন বিচারপতির তদন্ত কমিশন।
এ সময় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের সদস্য বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজল ও বিচারপতি মো. শওকত আলী চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
কমিশনের সভাপতি বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান জানান, আগামী ৪ আগস্ট রংপুর যাচ্ছেন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন। রংপুর সহিংসতায় নিহত মো. আবু সাঈদের বিষয়ে রংপুর সার্কিট হাউজে ৫ আগস্ট সকাল ৯টায় সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে। একই স্থানে ৬ আগস্ট নিহত সাজ্জাদ হোসেন, মোসলেম উদ্দিন মিলন ও মো. মানিক মিয়ার বিষয়ে সাক্ষ্যগ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া ৭ আগস্ট নিহত মেরাজুল ইসলাম ও আবদুল্লাহ আল তাহেরের বিষয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ করবে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন।
বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান বলেন, `রংপুরে যে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের আসছে সে বিষয়টি সব শ্রেণির পেশার মানুষকে জানানোর জন্য আগামীকাল থেকে রংপুরে মাইকিং করা হবে।’ তদন্ত কমিশনের কাছে যারা সাক্ষী দিতে আসবেন তাদের কোনো প্রকার ভয়ভীতি দেখানো হলে কমিশন ছাড় দেবে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
এদিকে বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) নতুন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। একই সঙ্গে এ বিষয়ে গত ১৮ জুলাই জারিকৃত প্রজ্ঞাপন রহিত করা হয়।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এস.আর.ও. নম্বর ২৬০-জাইন/২০১৪। সরকার, Comunissions of Inquiry Act, 1956 (Act No. VI of 1956) all section 3 এ প্রদত্ত ক্ষমতাবলে, গত ১৬ জুলাই হতে ২১ জুলাই পর্যন্ত সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে কোটা-সংস্কার আন্দোলনের নামে সংঘটিত ঘটনায় মৃত্যু, সহিংসতা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা তদন্তের জন্য ৩ সদস্য-বিশিষ্ট তদন্ত কমিশন গঠন করা হলো।
তারা হলেন-হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামান, বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার, বিচারপতি মোহাম্মদ শওকত আলী চৌধুরী।
কমিশনের কার্যপরিধি হবে নিম্নরূপ যথা: (ক) গত ১৬ জুলাই হতে ২১ জুলাই পর্যন্ত সময়ে নিহত ব্যক্তিগণের মৃত্যুর কারণ উদঘাটন ও তাদের মৃত্যুর জন্য দায়ী ব্যক্তিবর্গকে চিহ্নিতকরণ। (খ) গত ১৬ জুলাই হতে ২১ জুলাই পর্যন্ত সময়ে সংঘটিত সহিংসতা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিবর্গকে চিহ্নিতকরণ, এবং (গ) গত ১৬ জুলাই হতে ২১ জুলাই পর্যন্ত সময়ে সংঘটিত সহিংসতা, নাশকতা, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের ঘটনায় বিভিন্ন সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত দপ্তর/সংস্থা/প্রতিষ্ঠান, সরকারি কোম্পানি, সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ ও কর্পোরেশন এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সম্পতির ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করবে।
কমিশন, Commissions of Inquiry Act, 1956 অনুসারে তদন্তকার্য সম্পন্ন করিয়া আগামী ৪৫ (পঁয়তাল্লিশ) কার্যদিবসের মধ্যে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কমিশনকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করিবে ও কমিশনের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করিবে এবং কমিশনকে সহায়তায় উদ্দেশ্যে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত যে কোনো ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিতে পারবে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, গত ১৮ জুলাই জারিকৃত প্রজ্ঞাপন এস, আর, ও, নম্বর ২৭৪-আইন/২০২৪ এতদ্দ্বারা রহিত করা হলো, এবং উক্তরূপ প্রমিতকরণ সত্ত্বেও, উক্ত প্রজ্ঞাপনের অধীন গৃহীত কার্যক্রম এই প্রজ্ঞাপনের অধীন গৃহীত হয়েছে বলে পণ্য হইবে।
সারাবাংলা/কেআইএফ/একে