নিবন্ধন বাতিলের ৬ বছর পর নিষিদ্ধ জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি
১ আগস্ট ২০২৪ ২৩:১৯
ঢাকা: রাজনৈতিক দল হিসেবে ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এর পাঁচ বছর আট মাস পর এবার দলটির রাজনীতি নিযিদ্ধ ঘোষণা করেছে সরকার।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীকে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ১৮-এর ১ ধারা অনুযায়ী নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরসহ জামায়াতের অন্যান্য অঙ্গসংগঠনকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
এর আগে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন করে নির্বাচন কমিশন প্রজ্ঞাপন জারি করে ২০১৮ সালের ২৮ অক্টোবর। ওই সময়কার ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমেদের সই করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এর অধীনে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন চেয়ে আবেদন করেছিল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর দলটিকে নিবন্ধন দেয় ইসি। জামায়াতে ইসলামির নিবন্ধন নম্বর ছিল ১৪।
আরও পড়ুন- জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, ২০০৯ সালে হাইকোর্টের দায়ের করা ৬৩০ নম্বর রিট পিটিশনের রায়ে আদালত জামায়াত ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেন। এ কারণে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের ৯০/এইচ ধারা অনুযায়ী জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করা হলো।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, যেকোনো দল নিজ দলের প্রতীক নিয়ে ভোটে অংশ নিতে চাইলে দলটির ইসির নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। ২০১৮ সালে ইসির জারি করা ওই প্রজ্ঞাপনের ফলে জামায়াতে ইসলামী তাই দল হিসেবে দেশের জাতীয় বা দলীয় প্রতীকে অংশগ্রহণ করার মতো কোনো ধরনের স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ারও যোগ্যতা হারায়।
পরে স্থানীয় সরকার নির্বাচন বিধিমালা সংশোধন করে ২০১৫ সালেই কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন জামায়াতের দাঁড়িপাল্লা প্রতীক স্থানীয় নির্বাচনের তালিকা থেকে বাদ দেয়। এরপর ২০১৭ সালে সংসদ নির্বাচনের প্রতীকের তালিকা থেকেও দাঁড়িপাল্লা বাদ দেওয়া হয়।
এদিকে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় দল হিসেবে নির্বাচন করার যোগ্যতা হারালেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় জামায়াতের জন্য বাধা ছিল না। আজ বৃহস্পতিবার সরকারের নির্বাহী আদেশের ফলে জামায়াতে ইসলামী এখন কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডও পরিচালনা করতে পারবে না।
এর আগে আদালতের রায়ে নির্বাচন কমিশন ২০১৩ সালে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে। জামায়াতের পক্ষ থেকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হয়েছিল। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ২০২৩ সালের ১৯ নভেম্বর জামায়াতের পক্ষের আপিল খারিজ করে দেন। ফলে দলটির নিবন্ধন বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সৈয়দ আবুল আলা মওদুদীর হাতে গড়া একটি বিতর্কিত রাজনৈতিক সংগঠন। প্রতিষ্ঠাকালে এর নাম ছিল জামায়াতে ইসলামী হিন্দ। ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে এবারের আগেও স্বাধীনতার আগে-পরে মিলিয়ে চারবার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল দলটিকে।
সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় উসকানির অভিযোগে ১৯৫৯ সালে প্রথমবারের মতো পাকিস্তানে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৬২ সালে আইয়ুব খান প্রণীত মুসলিম পরিবার আইনের বিরোধিতার কারণে ১৯৬৪ সালের ৪ জানুয়ারি জামায়াতে ইসলামীর কর্মকাণ্ড আবারও নিষিদ্ধ হয়।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের তীব্র বিরোধিতা করে জামায়াতে ইসলামী। জামায়াত পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সাহায্য করতে রাজাকার, আলবদর, আলশামস প্রভৃতি বাহিনী গড়ে তোলে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সঙ্গে মিলে দলটির সদস্যরা হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, সংখ্যালঘু নির্যাতন, হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে জোরপূর্বক ইসলাম ধর্ম গ্রহণে বাধ্য করা, ১৪ ডিসেম্বর ডিসেম্বর বুধিজীবী হত্যকাণ্ডে জড়িত থাকাসহ বিভিন্ন মানবতাবিরোধী অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যাপকভাবে অংশ নেয়।
দেশ স্বাধীন হলে অধ্যাদেশের মাধ্যমে দেশে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়। এর ফলে প্রথমবারের মতো স্বাধীন বাংলাদেশে নিষিদ্ধ হয় জামায়াতের রাজনীতি। পরে ২০১৩ সালে উচ্চ আদালতের রায়ে ফের নিষিদ্ধ হয় দলটি। এবার পঞ্চমারের মতো জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতি নিষিদ্ধ হলো।
সারাবাংলা/জিএস/টিআর