প্রেসক্লাব থেকে শহিদ মিনারে পদযাত্রা, সরকারের পদত্যাগ দাবি
২ আগস্ট ২০২৪ ১৮:৪৬
ঢাকা: কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ১৫০ জন নিহতের ঘটনায় রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে শুরু হয়ে শিক্ষার্থী-জনতার পদযাত্রা শেষ হয়েছে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে। সেখানে পথনাটকের পর অনুষ্ঠিত সমাবেশ থেকে সরকারকে পদত্যাগের দাবি জানানো হয়েছে।
শুক্রবার (২ আগস্ট) বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তার আগে থেকেই প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হতে থাকেন সবাই। সাড়ে ৩টায় সেখান থেকে শুরু হয় পদযাত্রা। হাইকোর্ট মোড়, দোয়েল চত্বর, টিএসসি হয়ে শহিদ মিনারে গিয়ে শেষ হয় পদযাত্রার মিছিল। এ সময় মিছিল স্লোগানে স্লোগানে ‘স্বৈরাচারি সরকারে’র পদত্যাগের দাবি জানানো হয়।
শিক্ষার্থী-জনতার পদযাত্রায় সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, শ্রমিক, সংস্কৃতি কর্মী, চিকিৎসকসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ সমাবেশে অংশ নেন।
পদযাত্রা শেষে সমাবেশ থেকে আগামী রোববারের (৪ আগস্ট) মধ্যে গণগ্রেফতার বন্ধ, জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার, আটক শিক্ষার্থী-জনতার মুক্তি, কারফিউ প্রত্যাহার, সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া ও অসংখ্য শিক্ষার্থী জনতা হত্যার দায়ে ‘স্বৈরাচার সরকারে’র পদত্যাগের দাবি জানানো হয়। দাবি মানা না হলে রোববার বিকেল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে গণমিছিল করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে কর্মসূচি ঘোষণা করেন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি রাগীব নাঈম। তিনি বলেন, আগামী রোববারের মধ্যে কারফিউ প্রত্যাহার করতে হবে। গ্রেফতার সবাইকে মুক্তি দিতে হবে। সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে। বর্তমান সরকারকে শিক্ষার্থী-জনতা হত্যার দায়ে পদত্যাগ করতে হবে। এই দাবিগুলো যদি রোববারের মধ্যে পূরণ না করা হয়, সেদিন বিকেল ৩টায় জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে গণমিছিল শুরু হবে।
এদিকে দুপুরে প্রেসক্লাবের সামনে থেকে সরকারে পদত্যাগ দাবি করেন অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ। শোকযাত্রা শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘সরকারের কাছে আমাদের চাওয়া-পাওয়ার কিছু নাই। কিন্তু তাদের বিচার করতে হবে। ছাত্রদের মুক্তি দিতে হবে। কারফিউ উঠিয়ে নিতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, এই সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।’
সবাইকে ধৈর্যের পরিচয় দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। যারা সহিংসতা চালাতে চায় তাদের ব্যাপারে সাবধান থাকতে হবে। সরকার ও দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গোষ্ঠী চক্রান্তের চেষ্টা করছে। তার থেকে সাবধান থাকতে হবে। দেশের তিন বছরের বাচ্চা থেকে শ্রমজীবী-পেশাজীবী সবার ওপর আক্রমণ আসছে। জমিন থেকে আক্রমণ আসছে, আকাশ থেকে আক্রমণ আসছে। গুলিতে তিন শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে। যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের মা-বাবারা হাহাকার করছেন। হাজার হাজার আহত হয়েছেন, তাদের মা-মা-বাবারা অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এই অধ্যাপক আরও বলেন, আমরা বায়ান্নর পর থেকে অনেক স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। কিন্তু এই জুলাইয়ে যে রকম হত্যাযজ্ঞ হয়েছে, তা আগে কেউ করেনি, এত রক্তপাত কেউ করেনি। সরকার ভেবেছিল, এ রকম নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালালে আন্দোলন দমে যাবে। কিন্তু প্রতিবাদ আরও বেড়েছে। শিক্ষক-অভিভাবক ও নাগরিক সমাজ শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ এখন মুক্ত বাংলাদেশের জন্য লড়াই করছে। এই মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
শোকযাত্রা ও মিছিলে ‘স্বৈরাচারের হিংস্র হাত ভেঙে কর কুপোকাত’, ‘রক্তের দাগ দিচ্ছে ডাক, স্বৈরাচার নিপাত যাক’, ‘জনতার দাবি এক খুনি হাসিনার পদত্যাগ’, ‘আমরা হাড়ের ভেতর লিখে রাখব সব নৃশংসতা’, ‘কত বুলেট আছে? গুলি কর’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত বৃথা যেতে দেবো না’, ‘স্টপ জেনোসাইড’— এমন নানা ধরনের স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড ছিল হাতে হাতে। প্রেসক্লাব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মেট্রোরেলের বিভিন্ন পিলারেও সরকারবিরোধী নানা স্লোগানে দেয়াল লিখন করেছেন আন্দোলনকারীরা। প্রেসক্লাবের সামনের রাস্তাতেও অন্দোলনের পক্ষে নানা ধরনের বক্তব্য লেখা হয়েছে।
সারাবাংলা/ইএইচটি/টিআর
কোটা সংস্কার আন্দোলন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শিক্ষার্থী-জনতার পদযাত্রা